শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের খবরাখবর, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভাবান-সৃষ্টিশীল তরুণদের জীবন ও কর্ম নিয়ে সাজানো আমাদের এ অনুষ্ঠান। খ্যাতিমানদের কৃতি মানুষ হয়ে ওঠার অনুপ্রেররণা, সৃষ্টিশীল তরুণদের স্বপ্ন, তাদের জীবনের আনন্দ-বেদনার গল্প নিয়েই ‘আপন আলোয়’।
আপন আলোয় এ পর্বে আমাদের অতিথি বরেণ্য ভাষাসংগ্রামী ও রবীন্দ্রগবেষক আহমদ রফিক। তার কাছে শুনবো ভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় স্মৃতিচারণ এবং তার সাহিত্যকৃতির গল্প।
তবে তার আগে বাংলাদেশ ও চীনের বসন্ত উৎসবের খবর। তানজিদ বসুনিয়ার প্রতিবেদন ।
বাংলাদেশে বসন্ত উত্সব উদযাপন
বাংলাদেশে বসন্ত উদযাপন
পয়লা ফাল্গুন বাংলাদেশে নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে বসন্ত উত্সব। ঋতুরাজ বসন্ত আবাহনে দিনব্যাপি রাজধানীসহ সারাদেশে সীমিত পরিসরে চলে বসন্ত বরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ঐতিহ্যবাহী বসন্তবরণ উৎসব এবার হয়নি। তার বদলে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান করে বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ।
এবার বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস একই সঙ্গে উদযাপিত হয়েছে। লাল-সাদা-বাসন্তী বসন আর ফুল্লসাজে তরুণ-তরুণীরা একই সঙ্গে আবাহন করে বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে। তবে সাজসজ্জায় ছিল বাসন্তী বসনের প্রাধান্য। অনুষ্ঠানের আয়োজন বেশি না থাকলেও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে কমতি ছিল না এতটুকু।
বাংলাদেশে চীনের বসন্ত উত্সব উদযাপন
সিএমজি-বাংলা ঢাকা ব্যুরোর চীনা বসন্ত উৎসব উদযাপন
বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে চীনের বসন্ত উৎসব। রাজধানী ঢাকায় চীনা বসন্ত উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চায়না মিডিয়া গ্রুপ – সিএমজি, বাংলাদেশ ব্যুরো। রাজধানী ঢাকার বনানীতে এক রেস্তোরাঁয় এ আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানান চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের পরিচালক ও সিএমজির বাংলাদেশ ব্যুরোর চীফ করেসপন্ডেন্ট ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় সচিব চা মিং ওয়েই, ডিপ্লোমেটিক কোরেসপন্ডেন্টস অ্যাসোশিয়েশন-বাংলাদেশ-ডিক্যাবের সভাপতি পান্থ রহমান, সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দিন, বাংলাদেশ বেতারের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদার, বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম রানা, বাংলাদেশের কূটনৈতিক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাবের সাংবাদিক এবং সিএমজি- বাংলাদেশ ব্যুরোর কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে দেশে চীনের বসন্ত উত্সব
চীনের ঐতিহ্যবাহী সিংহ নৃত্য
বিশ্বব্যাপী জমজমাট আয়োজনে পালিত হয়েছে চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সব। চীনা চান্দ্রবর্ষকে বরণ করে নিতে চীনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়। সিংহ নাচ, ড্রাগন নাচ, আতসবাজি ইত্যাদি প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিশ্বের প্রত্যেকটি প্রান্তে পালিত হয়েছে চীনের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী এই উত্সব।
বসন্ত উত্সব প্রবাসী চীনাদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় জনগণও। নিউজিল্যান্ডে ওয়েলিংটনের ফোয়ারার সামনে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বসন্ত উত্সবের শোভাযাত্রা বের করেন।
বেলগ্রেডেও পালিত হয়েছে চায়নিজ নববর্ষ। জাপানের টোকিওতে চায়না টাউনের অধিবাসীরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নানা রকম প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
ফিজিতে নববর্ষের অনুষ্ঠানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভোরেক বাইনিমারামা যোগ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে চীনা নববর্ষ পালিত হয়েছে। নিউইয়র্কে এবার চায়নিজ নিউ ইয়ার পালিত হয়েছে রঙ বেরঙের গরু-পুতুল, গরুর প্রতীক ও বিভিন্ন মজাদার প্রতীকের শোভাযাত্রার মাধ্যমে। এ ছাড়াও মালয়েশিয়া, কানাডা, বেলজিয়ামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়েছে চীনা নববর্ষ।
চিরায়ত চীনা সাহিত্য: থাও ইউয়ান মিং
থাও ইউয়ান মিং: পল্লী কবিতার জনক
থাও ইউয়ান মিং চীনা সাহিত্যে পল্লী কবিতার জনক হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর জন্ম চিন রাজবংশের শাসনামলে এবং মৃত্যু লিউ সং রাজবংশের সময়। ফলে তিনি শাসন ক্ষমতার পালাবদল এবং জনজীবনে তার প্রভাব খুব ভালোভাবে দেখেছিলেন। তার কবিতায় রাজ্য শাসনের মধ্যে আমলাতন্ত্রের দুর্নীতি, ক্ষমতাশালীর প্রতি চাটুকারিতাকে ঘৃণা এবং সাধারণ গ্রামীণ মানুষের জীবনের কথা প্রতিফলিত হয়েছে।
থাও ইউয়ান মিংয়ের জন্ম ৩৬৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব চিন রাজ্যে এক ক্ষয়িষ্ণু অভিজাত পরিবারে। তার জন্মস্থান হলো বর্তমানের চিয়াংশি প্রদেশের চিউচিয়াং। তার বাবা রাজদরবারের একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু নয় বছর বয়সে বাবার মৃত্যু হলে তার দুঃখের জীবন শুরু হয়। তিন সন্তান নিয়ে তার মা খুব কষ্ট করে সংসার চালাতে থাকেন। শৈশবে থাও ইউয়ান মিং মনচিয়া নামে স্থানীয় এক পণ্ডিতের সংস্পর্শে আসেন। তার বাড়িতে প্রচুর বই ছিল। সেখান থেকে বালক মিং বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং কনফুসিয়াসের দর্শনে প্রভাবিত হন। তরুণ বয়সে তিনি উচ্চাকাংক্ষী ছিলেন এবং স্থানীয় রাজকর্মকর্তার চাকরিও পান। কিন্তু গরীব বলে অন্য আমলারা তাকে অবজ্ঞা করতেন। মায়ের মৃত্যুর পর তিনি চাকরি ছেড়ে জন্মস্থানে ফিরে যান। ৪০২ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিন্তু সেখানেও সাধারণ সৈনিকের উপর একজন ক্ষমতাশালী সেনাপতির জুলুম নির্যাতন ও বিনাবিচারে সৈনিককে হত্যা করা হচ্ছে দেখে তিনি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন। এরপর চাচার সুপারিশে রাজদরবারে বড় চাকরি পেয়েও তিনি সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। তখনি তিনি তার বিখ্যাত উক্তিটি করেন, ‘আমি কোনদিন এক বস্তা চালের জন্য মাথা নিচু করবো না’।
তিনি এরপর থেকে নিজের গ্রামেই বসবাস করতে থাকেন। তিনি মনে করতেন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার পদলেহন করে ধনী হওয়ার চেয়ে, সততার সঙ্গে সাধারণ জীবন যাপন করা অনেক ভালো। তার কবিতায় কৃষকের প্রাণবন্ত জীবন, আমলাদের দুর্নীতির প্রতিবাদ ছিল। তিনি শ্রেণী বৈষম্যহীন, শোষণহীন, শান্তিময় ও সুখী এক জীবনের কল্পনা করতেন। তিনি এমন এক সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে অন্যায় নির্যাতন, গরীবের উপর ধনীর শোষণ থাকবে না। তার লেখা পল্লীকবিতাগুলো সবচেয়ে বিখ্যাত।
৪২৭ সালে ৬৩ বছর বয়সে থাও ইউয়ান মিং মৃত্যুবরণ করেন। থাও ইউয়ান সিবিনজি নামের বইতে তার কবিতা সংকলিত হয়েছে। জীবদ্দশায় তিনি কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পেলেও জনসাধারণ তার কবিতা ভালোবাসতো। পরবর্তিকালে লিপাই, তুফুর মতো বিখ্যাত কবিরা তার কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। চীনের বিখ্যাত সাহিত্যিক লু স্যুন তাকে উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন।
থাও ইউয়ান মিং চীনের গ্রাম জীবনের সরলতা ও সৌন্দর্য তুলে ধরার জন্য অমর হয়ে আছেন।
চীনের চলচ্চিত্র:মনস্টার হান্ট
মনস্টার হান্ট
চীনা রূপকথা অনুযায়ী, এক সময় মনস্টার বা দানব আকৃতির প্রাণীরা মানুষের সঙ্গেই বসবাস করতো। মানুষরা পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য মনস্টারদের সঙ্গে বিশাল যুদ্ধ করে। সেই যুদ্ধে মনস্টাররা পরাজিত হয়। মানুষরা মনস্টারদেরকে পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দেয় আর সেখানেই গড়ে ওঠে তাদের সাম্রাজ্য।
একসময় মনস্টার রাজ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হলো। তাদের রাজাসহ তার মন্ত্রীদের হত্যা করে ক্ষমতায় এলো আরেক মনস্টার। মনস্টার কুইন তার অনাগত সন্তানের জীবন বাঁচাতে চলে আসেন পৃথিবীতে।
তাকে হত্যা করার জন্য সন্ত্রাসী মনস্টাররাও চলে আসে পৃথিবীতে। এদিকে মনস্টার ধরার জন্য ওৎ পেতে আছে কিছু মানুষ। কারণ বিশাল পুরস্কারের হাতছানি।
এদিকে মনস্টারদের রাজপুত্র জন্ম নেয় পৃথিবীতে। নায়ক তিয়ান ইয়ানের কাছে বড় হতে থাকে মনস্টারপ্রিন্স। মনস্টার রাজপুত্রর বেড়ে ওঠা, মানুষের সাথে তার স্নেহ, মায়া আর ভালবাসার গল্প নিয়ে এগিয়ে যায় সিনেমা।
চীনের প্রাচীন সাহিত্য "ক্লাসিক অব মাউন্টেন এন্ড সি’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছে চীনের জনপ্রিয় সিনেমা মনস্টার হান্ট ।
অ্যানিমেশন আর অ্যাকশন-কোরিওগ্রাফির মিশেল একটি ভিন্ন স্বাদের যোগান দেবে আপনাকে। এটি চীনের অন্যতম সেরা অ্যানিমেশন সিনেমা। বিশেষ করে এই সিনেমার অ্যানিমেশন ডিজাইন খুব নিখুত, মসৃণ ও সুন্দর করে সাজানো ।
তরুণ নির্মাতা রামান হুই তার স্বপ্নকে পুরোপুরি ঢেলে দিয়েছেন পর্দায়। তবে চীনা দর্শকদের একটি ভিন্ন স্বাদ দিতে চেয়েছেন হুই। দর্শকরাও তার এই স্বাদ পুরোপুরি গ্রহণ করেছেন বলে জানাচ্ছে চীনা বক্সঅফিস। তবে সুপারহিট হওয়া এই সিনেমা, মেন ইন ব্ল্যাক, জুরাসিক পার্ক, অথবা ক্রাউচিং টাইগার, সিনেমা থেকে যে অনুপ্রাণিত হয়েছে তা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন পরিচালক।
চীনের জনপ্রিয় অভিনেত্রি পাই পাই হ’র অসধারণ অভিনয় আপনাকে মুগ্ধ করবে।
তবে আমরা মনস্টারদের যেভাবে ভয়ঙ্কর রূপে জানি, কিংবা প্রচলিত সিনেমায় তাদের যেভাবে ভীতিকর রূপে প্রদর্শন করা হয় সেই রূপ বদলে দিয়ে মনস্টারদের প্রতি মমতা তৈরি করেছেন পরিচালক। বিশেষ করে প্রিন্স মনস্টারকে আপন করে নেবেন আপনিও।
হলিউডের রিপোর্টার এলিজাবেথ কের এই সিনেমা নিয়ে বলেন, ‘এই সিনেমা ইতিহাসের একটি সাহসি বিশ্লেষণ, যা আমাদের ইতিহাসের কল্পনার জগতকে একটি ভিন্ন রূপ দিয়েছে’।
বক্স অফিসে রাজত্ব করা, কমেডি ঘরানার এই সিনেমায় পারিবারিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলোকে অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
আপনি চাইলে বাংলা সাবটাইটেলসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে উপভোগ করতে পারেন সিনেমাটি ।
প্রতিবেদন: হোসনে মোবারক সৌরভ।
অন্তরঙ্গ আলাপনে আহমদ রফিক
ভাষা সংগ্রামী ও রবীন্দ্রগুণী আহমদ রফিকের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপন
গুলিতে উড়ে গেল শহীদ রফিকের মাথার খুলি...সবুজ ঘাঁসে মগজ আর রক্তে মাখামাখি- পিছনে ছাত্রদের শ্লোগান ...রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই.... এ এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য- এভাবে ভাষা আন্দোলনের বেদনাবিধুর সেই ঐতিহাসিকক্ষণের বর্ণনা করলেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। জানিয়েছে ভাষা আন্দোলন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিজের লেখালেখির প্রধান বিষয় করার কারণ সম্পর্কে।
প্রিয় বন্ধুরা, আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ আমাদের সমৃদ্ধ করবে। চীন আন্তর্জাতিক বেতার-সিআরই বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla আপনার মন্তব্য করতে পারেন। সিএমজি বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla এবং ইউটিউব লিঙ্ক youtube.com/cmgbangla তে গিয়েও আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্ক জানাতে পারেন আপনার মূল্যায়ন।
পরবর্তী অনুষ্ঠানে আমরা বাংলাদেশ-চীনের সংস্কৃতিক অঙ্গনের আরো কিছু খবর এবং গুণিজনের অন্তরঙ্গ আলাপন নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন। শুভ বিদায় …চায় চিয়েন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম