যুক্তরাষ্ট্র নয়, চীন এখন ইইউ’র এক নম্বর বাণিজ্যিক অংশীদার
2021-02-19 14:22:07

 

ফেব্রুয়ারি ১৯: ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-র পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালে চীনে ইইউ’র পণ্যের রপ্তানি ও আমদানি—দুটোই ‘দ্বিগুণ’ বেড়েছে। ফলে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে ইইউ’র এক নম্বর বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে চীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন ও ইউরোপের সংশ্লিষ্ট চুক্তি এবং চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তির সফল সমাপ্তিসহ বিভিন্ন কারণে দু’পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা গভীরতর হবে এবং এতে দু’পক্ষই লাভবান হবে।

এবারের চীনা নববর্ষের ছুটিতে, একটি জার্মান বিয়ার ব্র্যান্ড চীনা গ্রাহকদের আকর্ষণের জন্য ষাঁড়বর্ষের চিহ্নসম্বলিত প্যাকেজিং চালু করে। এই ব্র্যান্ডের আন্তর্জাতিক বাজার বিভাগের প্রধান, ফ্লোরিয়ান নাই সাংবাদিকদের বলেন

 

‘চীন আমাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বাজার। গত বছর আমাদের পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধির একটি বড় অংশ হয়েছে চীনে।”

২০২০ সালে, বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়া, সংরক্ষণবাদী প্রবণতা বৃদ্ধি, আন্তঃদেশীয় সরবরাহ চেইন বন্ধ থাকা, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অব্যাহত অবনতি প্রেক্ষাপটে চীন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করে। লুক্সেমবার্গের সদর দফতরে ইইউ’র প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে চীন ও ইইউর মধ্যে পণ্যবাণিজ্যের পরিমাণ ৫৮৬ বিলিয়ন ইউরো ছিল। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র পণ্যবাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫৫৫ বিলিয়ন ইউরো। বার্ষিক মানদণ্ড হিসাবে চীন প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে ইইউর সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়।

পাশাপাশি, চীনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অফ কমার্সের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, ৬০ শতাংশের বেশি ইইউ’র সংস্থা চীনে বিনিয়োগ বাড়াতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং ১৮ ফেব্রুয়ারি বলেছেন,  এর মধ্য দিয়ে চীন-ইইউ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার দৃঢ় শক্তি ও  উজ্জ্বল সম্ভাবনা ফুটে উঠেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বহু বছর ধরেই চীন ও ইইউ’র মধ্যে ক্রমাগত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে, পণ্য ও লোকের আদান-প্রদান বেড়েছে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অবিচ্ছিন্নভাবে প্রসারিত হয়েছে, এবং পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তি মজবুত হয়েছে। পাশাপাশি, বহুপক্ষবাদ রক্ষা, অর্থনীতির বিশ্বায়ন, বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ ও অবাধ বাণিজ্য সমর্থন  এবং সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করায় চীন ও ইউরোপের অভিন্ন অবস্থান রয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে ‘চীন-ইইউ ভৌগোলিক সূচক চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়, যা উভয় পক্ষের শতাধিক কৃষিপণ্যের উচ্চস্তরের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। তিন মাস পর, ৭ বছরের চীন-ইইউ বিনিয়োগচুক্তি আলোচনা সময়মতো সম্পন্ন হয়। চীনের ইউরোপীয় চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট উডক বলেছেন,

 

‘আমি আশা করি, আমাদের সংসদসদস্যরা এই চুক্তি  অনুমোদনের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রাসঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। এতে আমরা ইউরোপে আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবো এবং চীন ও ইউরোপে আরও বেশি ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

২০২০ সালে চীনে ইইউ’র রফতানির মোট পরিমাণ ছিল ২০২.৫ বিলিয়ন ইউরো, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ২.২ শতাংশ বেশি; আর চীন থেকে ইইউ’র আমদানির মোট পরিমাণ ছিল ৩৮৩.৫ বিলিয়ন ইউরো, যা আগের বছরের চেয়ে ৫.৬ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রে ইইউ’র রপ্তানি ও আমদানির মোট পরিমাণ স্পষ্টভাবে  নেমেছে, যা আগের বছরের চেয়ে যথাক্রমে ৮.২ ও ১৩.২ শতাংশ কম। এ ছাড়াও, কোভিড-১৯ মহামারী এবং ব্রিটেনের ‘ব্রেক্সিট’সহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কারণে ২০১৯ সালে ব্রিটেনের রপ্তানি কমেছে ১৩.২ শতাংশ। পাশাপাশি, ব্রিটেন থেকে ইইউ’র আমদানির পরিমাণ ১৩.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পণ্যবাণিজ্যে ইইউ’র শীর্ষ দশ বাণিজ্যিক অংশীদারের মধ্যে কেবল চীনের সঙ্গেই ইইউ গত বছর দ্বিমুখী বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)