key of life
2021-02-18 14:02:40

key of life_fororder_dao1

key of life_fororder_dao

চীনা পঞ্জিকার গত বছর মাত্র শেষ হয়েছে। এখন চলছে বসন্ত উৎসবের ছুটি। এসময় চীনে ‘Endgame’ নামে একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এ চলচ্চিত্রটি ‘key of life’ নামে একটি জাপানি চলচ্চিত্রের রিমেক। ‘key of life’ চলচ্চিত্র জাপানের অস্কার পুরস্কার হিসেবে পরিচিত ‘অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের’ সেরা চিত্রনাট্য পুরষ্কার অর্জন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘key of life’ চলচ্চিত্রটি অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার কমেডি চলচ্চিত্রের বক্স-অফিসের আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড তৈরি করে। তাই বলা যায়—জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া বা চীন, যাই হোক না কেন, যে কোনো দেশের চলচ্চিত্রে চমৎকার একটি গল্প তুলে ধরা হলে তা সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

‘key of life’ চলচ্চিত্রটিতে জীবন বিনিময়ের গল্প বলা হয়।

 

এই চলচ্চিত্রে ইংচিং একজন সাধারণ অভিনেতা; তার তেমন কোনো পরিচয় নেই। তার কাজকর্মের কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না, মেয়েবন্ধুটিও তাকে ছেড়ে চলে যায়। তার জীবন একদম ব্যর্থ হয়ে পড়ে! ৩৫ বছর বয়সে সে খুব সস্তা একটি ভাড়া বাড়িতে বাস করতে থাকেন। জীবন খুব এলোমেলো হয়ে ওঠে। একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন।

 

একদিন আবারও তার মনে আত্মহত্যার ইচ্ছা জেগে ওঠে। পকেটে তিনি একটি বাথহাউসের টিকিট খুঁজে পান। আত্মহত্যার আগে তিনি শেষবার গোসল করার সিদ্ধান্ত নেন।

 

এদিকে, চলচ্চিত্রের দ্বিতীয় চরিত্র চিনথেং মূলত খুনি হিসেবে কাজ করতেন। আন্ডারওয়ার্ল্ডের একজন খুনি হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ইংচিং যেদিন স্নানাগারে গোসল করতে যায়, তিনিও সেদিন গোসল করতে যান। তখন দুর্ঘটনাক্রমে সাবানের উপর পা দিয়ে পিছলে পড়ে যান ও অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি।

 

নানা বিশৃঙ্খলার মধ্যে ইংচিং ও চিনথেংয়ের গোসলখানার লকারের কার্ড অদলবদল হয়ে যায়। আমরা জানি, স্নানাগারে নিজের কাপড় ও জিনিসগুলো রাখার জন্য আলাদা আলাদা আলমারি থাকে। আর ওই লকারের কার্ডটি হলো আলমারি খোলার চাবি।

 

এভাবে ভাগ্যের গিয়ার কাজ শুরু করে। ইংচিং চিনথেংয়ের ভান করে বিলাসী জীবন কাটাতে শুরু করে। সে একটি ম্যানশনে বাস করেন এবং দামী গাড়ি চালায়। খুব সহজেই তিনি সব ঋণ পরিশোধ করে দেন।

 

এদিকে জ্ঞান ফেরার পর মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ার কারণে চিনথেং সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন। তিনি ইংচিংয়ের পরিচয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন।

 

যখন চিনথেং ইংচিংয়ের নোংরা ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসেন, তখন তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে, আগে কেন তিনি এত ব্যর্থ জীবন কাটাতেন!

 

স্মৃতি হারালেও তার ভালো অভ্যাস পরিবর্তন হয় নি।

চিনথেং বাড়ি পরিষ্কার করেন এবং নিজেরও যত্ন নিতে শুরু করেন।

তিনি বুঝতে পারেন, স্মৃতি হারানোর আগে তিনি অভিনয় শিল্পী হিসেবে কাজ করতেন। তাই মনোযোগ দিয়ে অভিনয় শেখা শুরু করেন। থিয়েটারে যাওয়া,অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শুরু করেন তিনি। লাইব্রেরি থেকে অভিনয়বিষয়ক অনেক বইও নিয়ে আসেন তিনি।

 

আরও কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি পার্ট-টাইম চাকরি খুঁজে নেন।

খুব অল্প সময়ে তার জীবন ভালো দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে।

শুরু তাই নয়, চিনথেং আকস্মিকভাবে ভালোবাসাও পেয়ে যান। তিনি সিয়াংমিও নামে এক নারীর সঙ্গে পরিচিত হন। সিয়াংমিও একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক। তিনি কখনও প্রেমে পড়েন নি। স্বামী বাছাইয়ের মানদণ্ড আর তার কর্মী নিয়োগের মানদণ্ড একই। অর্থাত্ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও পরিশ্রমী মানুষ। চিনথেংয়ের সঙ্গে সব কিছু মিলে যাবার পর তিনি তাকে ভালোবেসে ফেলেন। বেশি টাকা না থাকলেও চিনথেং ভালো জীবন গঠনের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালান। সবার মনে এবার একটি সন্দেহ জেগে ওঠে। তা হলো এত ভালো একজন মানুষের জীবন আগে কেন এত ব্যর্থ ছিলো?

 

চলচ্চিত্রের এ পর্যায়ে এসে দর্শকেরা অবশ্যই এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

অন্যদিকে বিপুল টাকা হাতে পেলেও কীভাবে এসব টাকা খরচ করা যাবে—ইংচিং তার কিছুই বুঝতে পারেন না।

তিনি আগের মতো প্রতিদিন বাড়িতে থাকেন এবং বাড়িঘর এলোমেলো করে ফেলেন। তার জীবন আবারও খারাপ হয়ে ওঠে।

 

আকস্মিক এক সুযোগে খুনি হিসেবে ইংচিংয়ের পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যায়। যেহেতু কেউ চিনথেংয়ের আসল চেহারা দেখে নি, সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই ইংচিংকে খুনি হিসাবে ধরে নেওয়া হয়।

 

বন্ধুরা, এ গল্পের পরিণতি কি হবে? জানতে আগ্রহী হলে নিজেই চলচ্চিত্রটি দেখুন।

 

আমরা এখন ‘key of life’ চলচ্চিত্রের নামকরণের ওপর দৃষ্টি দেবো। স্নানাগারে ইংচিং চিনথেংয়ের আলমারির চাবি চুরি করার সঙ্গে সঙ্গে চিনথেংয়ের পরিচয়ও ছিনিয়ে নেন। তবে তিনি অনেক অর্থ পেলেও জীবনের স্বপ্নের কাছাকাছি যেতে পারেন নি।

 

আসলে জীবনের গতি পরিবর্তনের চাবি হলো জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা। অর্থ-বিত্ত-বৈভব মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে সাহায্য করে মাত্র।

জীবন ও জগৎ সম্পর্কে ভালো ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো মানুষের সবচে শক্তিশালী অস্ত্র।

 

এই জগতে নানা পার্থক্য থাকলেও বিভিন্ন মানুষ একই পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে থাকে। বিভিন্ন মানুষের নানা ধরনের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি মূলত এই আলাদা আচরণের গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত করে থাকে।

ব্যর্থতায় পড়লে আমরা কী করব? আমরা কি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করব? সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজব? নাকি শুধু অন্যের বিরুদ্ধে সবসময় অভিযোগ করতে থাকব? এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে আপনার জীবনের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর।

 

ইতিবাচক ও পরিশ্রমী মানুষ হিসেবে ভূমিকা রাখলে  অবশেষে অবশ্যই সৌভাগ্য আপনার কাছে চলে আসবে। এটাই হলো ‘key of life’ চলচ্চিত্রটির দর্শক সমাদর পাওয়ার প্রধান কারণ। এতে চমৎকার একটি গল্পের পাশাপাশি রয়েছে সক্রিয় একটি মূল্যবোধ।

 

সাধারণত দেখা যায়, সব মানুষ টাকার জন্য কাজ করে থাকে। চিনথেং নিজেও আসলে আগে সাধারণ কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকত। স্ত্রী তাকে ছেড়ে ধনী মানুষকে বিয়ে করেছিল। এজন্য সে ঝুঁকি নিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে খুনি হিসেবে কাজ করা শুরু করে। তার উদ্দেশ্য ছিল আরো বেশি টাকা উপার্জন করা। ইংচিং গরীব হয়ে পড়ে ও অনেক ঋণ নেয়।

 

তবে, শেষ পর্যায়ে আমরা আবিষ্কার করি যে,তাদের সবচে উদ্বেগের বিষয় মূলত টাকা নয়।

চিনথেং খুন করে টাকা উপার্জন করছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল, আর কেউ যেন টাকার অভাবে তাকে ছেড়ে চলে না যায়।

সিয়াংমিওকে ভালোবাসার পর সে বুঝতে পারে যে, সিয়াংমিও তাকে ভালোবাসে। এর সঙ্গে টাকার কোনো সম্পর্ক নেই।

 

চলচ্চিত্রের শেষে স্মৃতি ফিরে আসা চিনথেং ইংচিংকে বলে, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। তবে প্রতিদান হিসেবে তোমার জীবন আমাকে দাও।

ইংচিং ভাবে অন্যের কাছে তার অর্থহীন ও অতি সাধারণ জীবনের কোনো মূল্য নেই। ইংচিং দারুণ হতাশ হয়ে পড়ে।

তার আত্মহত্যা চেষ্টার কারণ টাকা বা চাকরি না-থাকা নয়। মূল কারণ ছিল প্রেমিকা ও প্রিয় বন্ধুদের হারানো।

 

বন্ধুরা, মানুষ মাঝেমধ্যেই এমন ভুলের মধ্যে পড়ে। আমরা কখনও ভাবি যে, টাকা থাকলে সবকিছু পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা বারবার প্রমাণ করেছে যে, টাকা বা অর্থ-সম্পদ দিয়ে সবকিছু পাওয়া যায় না। অর্থ-প্রাচুর্য দিয়ে জীবনে সুখ কেনা যায় না।

 

টাকা দিয়ে বস্তুগত জিনিস কেনা যায়; কিন্তু অবস্তুগত ভালোবাসা বা সুখ-শান্তি কেনা যায় না।

 

চলচ্চিত্রে সিয়াংমিওয়ের বাবার শেষ কথাগুলো ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘সারা জীবনে আমি অনেক সম্পদ অর্জন করেছি। উন্নতমানের বাড়ি ও গাড়ি কিনেছি। তবে এসব জিনিস একেবারেই মূল্যহীন। আমার এই জীবনে সবচে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো আমার স্ত্রীকে পাওয়া এবং দুটি ফুটফুটে মেয়ের বাবা হওয়া।’

লিলি/তৌহিদ/শুয়ে