চীনা বসন্ত উত্সবের জনপ্রিয় খাবার ‘চাও চি’র আদ্যপান্ত
2021-02-17 15:40:44

চীনা বসন্ত উত্সবের জনপ্রিয় খাবার ‘চাও চি’র আদ্যপান্ত_fororder_src=http___5b0988e595225.cdn.sohucs.com_images_20180117_5be9b90f221b461c94c6a1f103796ef6&refer=http___5b0988e595225.cdn.sohucs

চীনে বসন্ত উত্সবের সময় ‘চাও চি’ খাওয়া খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে, বসন্ত উত্সবের পঞ্চম দিন সবাই মজা করে ‘চাও চি’ খেয়ে থাকে। এছাড়া, শীতকালের প্রথম দিনও সবাই ‘চাও চি’ খায়। এক কথায়, ‘চাও চি’ প্রায় সব চীনা উত্সবের উদযাপনী খাবারে পরিণত হয়েছে। তবে, কেবল উত্তর চীনের মানুষ উত্সবের সময় ‘চাও চি’ খায়। এটি তাদের একটি ঐতিহ্য। দক্ষিণ চীনের মানুষ উত্সবের সময় বেশি করে আঠালো ভাত, ও মুর্গিসহ নানা খাবার খায়। তাহলে আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ‘চাও চি’র ইতিহাস নিয়ে একটু কথা বলব।

 

‘চাও চি’ নামটি কোথায় থেকে এসেছে? এ সম্পর্কে নানা কাহিনী রয়েছে।  ইতিহাস অনুযায়ী, থাং রাজবংশ আমলে (১,৩০০ বছর আগে) ‘ফেন চাও’ নামে এক ধরনের খাবারের প্রচলন ছিল।  সুং রাজবংশ আমলে ‘ফেন চাও’ নতুন নাম ধারন করে হয়ে যায় ‘চাও চি’। তবে, চীনা ভাষায় ‘চাও চি’ শব্দটির উচ্চারণ একই থাকলেও, তখন একে লেখা হতো ভিন্ন অক্ষরে। তারপর মিং রাজবংশ আমলে ‘চাও চি’ তৈরির পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসে। যেমন: নানা ধরনের তেলে ভাজা এবং ছেঁকা দেওয়া ‘চাও চি’। আজকাল যে ‘চাও চি’ আমরা খাই, তার ভেতরে সাধারণত সবজি ও মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে, সুং রাজবংশ আমলে মিষ্টি দিয়ে তৈরি হতো ‘চাও চি’। আখরোট, পাইন বাদাম, চিনি এবং লাল শিমের পেস্ট দিয়ে তৈরি হতো তার ভেতরের অংশ। লেখক সু খ্য তাঁর একটি বইয়ে প্রথম বারের মতো ‘চাও চি’ তৈরির পদ্ধতি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, পানিতে সিদ্ধ করা এবং পানির সঙ্গে খাওয়া।

অবশ্যই ‘চাও চি’ নিয়ে অনেক পৌরাণিক কিংবদন্তিও রয়েছে। আমরা চীনারা বিশ্বাস করি যে, নু ওয়া নামে একজন দেবী মানুষ তৈরি করেন। তিনি কাদা দিয়ে মানুষ তৈরি করেন। যখন তিনি মানুষের কান তৈরি করেন, তখন শীতকাল এবং খুব ঠান্ডা ছিল। তাই কোন ভাবেই মুখের সঙ্গে কানকে যুক্ত করতে পারেন নি। তাই তিনি সুতা দিয়ে কানকে মুখের সঙ্গে যুক্ত করেন। পরে মানুষ নু ওয়ার স্মরণে কান আকৃতির একটি খাবার তৈরি করে, তা হল ‘চাও চি’ এবং বলা হয় শীতকালে চাও চি খেলে কান হিমশীতল হবে না।

 

তাহলে কখন থেকে ‘চাও চি’ বসন্ত উত্সবের খাবারে পরিণত হয়?

চীনা সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণালয়ের গবেষক ওয়াং রেন সিয়াং মনে করেন, মিং রাজবংশ আমল থেকে ‘চাও চি’ বসন্ত উত্সবের বিশেষ খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়। এবং তখন থেকে ‘চাও চি’ নিয়ে একটি বিশেষ খেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখনো কোন কোন চীনা পরিবারে এমন খেলা দেখতে পাওয়া যায়। মিং রাজবংশ আমলে রাজপরিবার ‘চাও চি’কে ‘বিয়ান সি’বলে ডাকতেন। এবং প্রাচীন পত্রে এমন বনর্ণা পাওয়া যায় যে, যখন ‘বিয়ান সি’ তৈরি করা হতো, তখন তার ভেতরে দু একটা মুদ্রা রাখা হতো। পরে যে মানুষ মুদ্রা খেতো, সে নতুন বছরে সর্বোচ্চ ভাগ্যবান মানুষ হতে পারতো। এখনও আমাদের এমন ঐতিহ্য রয়েছে। বসন্ত উত্সবের সময় যখন ‘চাও চি’ তৈরি করা হয়, তখন কয়েকটি ‘চাও চি’র ভেতরে মুদ্রা রাখা হয়।

 

ছিং রাজবংশ, অর্থাত চীনের শেষ সামন্ত রাজবংশের সময়ে শুধু রাজপরিবার নয়, দেশের সবাই বসন্ত উত্সবের সময়ে ‘চাও চি’ খেতে পারতো। এমনকি বসন্ত উত্সবের প্রথম ৫ দিনের প্রতিদিনই ‘চাও চি’ খেতো সবাই। তখন থেকে ‘চাও চি’ জনপ্রিয় একটি খাবারে পরিণত হয়।

 

‘চাও চি’র একজন বড় ভাইও আছে? তার নাম ‘হুন থুন’। দুটি খাবারের রান্না পদ্ধতির মধ্যে অনেক মিল আছে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, প্রাচীনকালে এ দুটি খাবার একই ছিল। চীনা একটি প্রবাদ আছে যে, শীতকালের শুরুতে হুন থুন খাও এবং গ্রীষ্মকালের শুরুতে নুডলস খাও। এখন উত্তর চীনের মানুষ শীতকালের প্রথম দিন আর হুন থুন খায় না। তার বদলে শীতকালের প্রথম দিন ‘চাও চি’ খায় তারা। যাই হোক, উত্সবের সময় ‘চাও চি’ বা ‘হুন থুন’ খাওয়া উত্তর চীনের একটি ঐতিহ্য।

 

দক্ষিণ চীনে কি এমন নিয়ম ছিল না?

‘চাও চি’ ময়দা দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার এবং ময়দা গম থেকে তৈরি হয়। শতাধিক বছর আগে দক্ষিণ চীনে আবহাওয়ার কারণে গম ছিল না। সেখানে মানুষ বেশি করে ধান চাষ করে এবং ভাত খায়। তাই উত্সবের সময় তারা মূলত ভাত এবং চালের গুড়া দিয়ে খাবার রান্ন করে।

 

এখন ‘চাও চি’ সাধারণ এক ধরনে খাবার এবং উত্সবের সময় ছাড়াও যে কোন সময়ে আমরা খেতে চাইলে খেতে পারি। তবে, আগে দরিদ্র সময়ে ‘চাও চি’ ছিল মূল্যবান এক খাবার।পাশাপাশি, ‘চাও চি’র আকার দেখতে প্রাচীন টাকার মতো, তাই ‘চাও চি’কে সমৃদ্ধির প্রতীক মনে করে থাকে চীনা মানুষ। উত্সবের সময় পরিবারের সবাই মিলে ‘চাও চি’ তৈরি করা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘চাও চি’ শুধু খাবার নয়, তা পরিবারের ভালবাসা ও উত্সবের আনন্দমুখর পরিবেশের প্রতিফলন।(শিশির/এনাম/রুবি)