রোববারের আলাপন:শুভ চীনা নববর্ষ!
2021-02-14 20:01:10

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, আশা করি আপনারা ভাল আছেন। সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি এনাম এবং আকাশ।
আকাশ: শুভ চীনা নববর্ষ! 
এনাম: শুভ চীনা নববর্ষ! 
আকাশ: ভাই, আমি ভাবছি, বসন্তের ছুটিতে আপনি চমত্কার সময় কাটিয়েছেন, তাইনা?
এনাম: হা হা! অবশ্যই!আপনি অনুষ্ঠানে যা যা বলেছেন ওই সব খাবার আমি খেয়েছি। বিশেষ করে আমি চিয়াও জি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি, উপভোগ করি! অনেক জোস, হাহা!...
এনাম: ভাই, আপনি তাহলে অব্যাহতভাবে আমাদের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতির পরিচয় দেন, কেমন? আপনি গত অনুষ্ঠানে বলেছেন ‘সান সি’র রাতে মানে নববর্ষের আগের দিন রাতে সবাই আতশবাজি ফোটান, তাইনা? তারপর আপনারা কী কী করেন?
আকাশ: অবশ্যই ঘুমাই। কিন্তু সাড়া রাত আতশবাজির শব্দ থাকে এবং মন আনন্দে অনেক উত্তেজিত থাকে। এজন্য রাতে বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারি না। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠি। 
এনাম: এত আগে?
আকাশ: হ্যাঁ। খুশির কারণে আর ঘুমাতে পারিনা, তাছাড়া কিছু দায়িত্বও থাকে। 
এনাম: দায়িত্ব মানে?
আকাশ: হ্যাঁ, কিছু দায়িত্ব আছে। যেমন- চীনা নববর্ষের প্রথম দিনের নাম হচ্ছে ‘ছু ই’। এদিন সবাই খুব আগে ঘুম থেকে উঠে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের বাসায় গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়। এজন্য খুব আগে উঠতে হয় এবং দাদার বাড়িতে গিয়ে প্রথমে দাদাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে হয়।নববর্ষের দিন সবাইকে খুব সকালে উঠতে হয়, কারণ প্রতিবেশীরা যদি বাসায় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে এসে দরজা বন্ধ দেখেন, তাহলে এটা ভালো নয়। তাইনা?এজন্য অবশ্যই আগে উঠতে হয়।
এনাম: আচ্ছা। নববর্ষের প্রথম দিনের প্রথম খাবার, মানে নাস্তার কি কোনো রীতিনীতি আছে?
আকাশ: অবশ্যই আছে। ‘ছু ই’ মানে নববর্ষের প্রথম দিন সকালে এবং দুপুরে আবারও আগের দিনের তৈরি চিয়াও জি খেতে হয়। 
এনাশ: আবার চিয়াও জি খেতে হবে?
আকাশ: হ্যাঁ। খেতেই হবে। 
এনাশ: এখন আমি বুঝতে পারছি চিয়াও জি চীনাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আকাশ: হা হা হা, এটা ‘মাছে ভাতে বাঙালি’র মতো।
এনাম: হা হা, আপনি ঠিক বলেছেন। ভাই নাস্তায় চিয়াও জি খাওয়ার পর আপনি কী কী করেছেন?
আকাশ: আমি বাবার সাথে প্রতিবেশী ও বন্ধুদের বাসায় গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। আমরা প্রথমে পরস্পরকে দেখার সময় বলি: ‘কুও নিয়ান হাও’!
এনাম: কুও নিয়ান হাও।
আকাশ:। হ্যাঁ। মানে শুভ চীনা নববর্ষ।  
এনাম: কুও নিয়ান হাও।
আকাশ: ভাই, বাংলাদেশে নববর্ষের প্রথম দিনে, আপনাদের রীতিনীতি কী রকম? কী কী করতে হয়? এবং চাউ জি’র মত কোন খাবার কি খেতে হয়? এ রকম রীতিরীতি আছে?
এনাম:....
এনাম: আচ্ছা, ভাই, নববর্ষের প্রথম দিনের পর চীনারা আর কী করেন?
আকাশ: তারপর নববর্ষের দ্বিতীয় দিন অর্থাত ‘ছু আর’, আমরা নানার বাড়িতে গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।
এনাম: প্রথম দিন দাদার বাড়ি, দ্বিতীয় দিন নানার বাড়ি, তাইনা?
আকাশ: হ্যাঁ। সবাইকে যেতে হবে। পরিবারের অনেকে হয়তো সারা বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকেন, এ দিন এক টেবিলে সবাই গোল হয়ে বসে চিয়াও জি ও অন্য খাবার খেতে খেতে গল্প করি। অনেক সুন্দর স্মৃতি।  
আকাশ: বন্ধুরা, আসলে চীনের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি বা উদযাপনের উপায় চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের। আমার জন্মস্থান হান তান হচ্ছে চীনের উত্তরাঞ্চল। আপনারা যা শুনেছেন তা হচ্ছে চীনের উত্তরাঞ্চলের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি। কিন্তু চীনের অন্যান্য অঞ্চলে বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি একটু ভিন্ন। তাহলে আমরা এখন শুনবো, 
চীনের দক্ষিণাঞ্চলের রীতিনীতি, কেমন? মাদাম কান হচ্ছেন চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের স্থানীয় অধিবাসী , আমরা এখন তাঁর কাছ থেকে শুনবো, ওখানের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি, কেমন? 
মাদাম কান: আমি ভাবছি আপনাদের উত্তরাঞ্চলের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতির সঙ্গে আমাদের অনেক মিল আছে। এছাড়া অনেক পার্থক্যও আছে। যেমন বসন্ত উত্সবে আপনারা বেশি বেশি চিয়াও জি খান। আমরা ইয়ুন নানে তুলনামূলকভাবে চিয়াও জি কম খাই। আমরা ‘আর খুয়াই’ খেতে পছন্দ করি। ‘আর খুয়াই’ হচ্ছে ভাত থেকে তৈরি এক ধরনের প্রধান খাবার, এই খাবার খুব নরম এবং সুস্বাদু। সান সি মানে নববর্ষের আগের দিন আমরা বিশেষভাবে স্নান করে থাকি। তাহলে নতুন বছরে সব জায়গায় খাবার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বাসার দরজার পিছনে আমাদেরকে দুটি সুগার ক্যান রাখতে হয়। এর মানে নতুন বছরে জীবন দিন দিন উন্নত হবে এবং মিষ্টির মতো সুন্দর ও সমৃদ্ধ হবে। বসন্ত উত্সবে আমরা কোন দিন দাদা বা নানার বাসায় যাই এটার কোনো রীতিনীতি নেই, আমরা ইচ্ছা মত যাই। 
আকাশ: ভাই, তোমার কেমন লেগেছে?
এনাম: 
আকাশ: ভাই, এবার আমার একটা প্রশ্ন আছে, আমরা সবাই জানি যে, চীনের ইয়ুন নান প্রদেশ বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি দূরে নয়। বিমানে ঢাকা থেকে ইয়ুন নানে আসতে মাত্র ২ ঘন্টা সময় লাগে। তাহলে ইয়ুন নান প্রদেশের নববর্ষের রীতিনীতি ও বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলের রীতিনীতি বা খাবারের কি কোনো মিল আছে?
এনাম:...
আকাশ: আচ্ছা। অনেক মজার। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার রীতিনীতি হয়তো ভিন্ন, কিন্তু পরিবার, বন্ধুদের ভালোবাসা এবং মনের আনন্দ এক, তাইনা? আশা করি নতুন বছর সবার একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বছর হবে। 
এনাম:...
আকাশ: এ ছাড়া, আজকে একটি বিশেষ দিন।
এনাম: কি দিন , ভাই?
আকাশ: আজকে হচ্ছে ভালবাষা দিবস। কামনা করি, আমাদের ভাইবোনেরা সবাই আপনাদের মনের মানুষদের সঙ্গে মিশতে পারবেন, এবং একসাথে সুখি জীবন কাটাতে পারবেন। 
এনাম:…
আকাশ: বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে, আমরা চীনের একটি জনপ্রিয় প্রেমের গান আপনাদের শুনাবো, কেমন? গানটি গেয়েছেন চীনা শিল্পী থেরেসা তেং। গানটির নাম হচ্ছে “চাঁদ আমার মনের প্রতীক”।
গানের কথা এ রকম:

তুমি আমায় চিকিত্সা করো, 
কতোটা তোমায় ভালবাসি 
আমার ভালবাসা সত্য, 
চাঁদ আমার মনের প্রতীক। 

তুমি আমায় চিকিত্সা করো, 
কতোটা তোমায় ভালবাসি
আমার ভালবাসা কখনোই পরিবর্তন হবে না।
চাঁদ আমার মনের প্রতীক।

আলতু করে একটি চুম্বন,
আমার হৃদয় কেড়েছে 
গভীর একটি ভালবাসা 
সব সময় আমার মনে পড়ে। 

তুমি আমায় চিকিত্সা করো, 
কতোটা তোমায় ভালবাসি
তুমি ভাবতে পারো, তুমি দেখতে পারো
চাঁদ আমার মনের প্রতীক।