চীন ও মধ্য-পূর্ব ইউরোপের শীর্ষ সম্মেলন মানব জাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার অনুশীলন
2021-02-10 15:28:40

ফেব্রুয়ারি ১০: চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলন গতকাল (মঙ্গলবার) অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এতে সভাপতিত্ব করেন এবং এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সম্মেলন-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন কাং বলেন, এবারের শীর্ষ সম্মেলন মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে চীনের হাতে হাত রেখে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠা এবং অভিন্ন উন্নয়ন অনুসন্ধানের জন্য মূল্যবান সুযোগ তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সহযোগিতা বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য এক নতুন মাইল ফলক। এটি চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মানব জাতির অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গঠনের প্রাণবন্ত অনুশীলন। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় এ নিয়ে শুনবেন একটি প্রতিবেদন।

উল্লেখ্য, এবারের শীর্ষ সম্মেলন হলো চীন ও মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সহযোগিতা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ৯ বছরে উচ্চ পর্যায়ের প্রথম শীর্ষ বৈঠক। এতে ভবিষ্যতে দু’পক্ষের সহযোগিতার দিক নিয়ে প্রেসিডেন্ট সি ‘চীনের পরিকল্পনা’ তোলে ধরেন। মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, আন্তঃসংযোগের উপর গুরুত্বারোপ, ব্যবহারিক দিকনির্দেশনা মেনে চলা এবং সবুজ উদ্ভাবনের উপর মনোনিবেশ করার কথা প্রস্তাবে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

ছিন কাং বলেন, এসব প্রস্তাব বর্তমান অবস্থার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টিপাত এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা ও আস্থা আরও দৃঢ় করার সুযোগ এনে দিয়েছে।

ছিন কাং আরও বলেন,

 ‘শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষ এ মর্মে একমত হয়েছে যে, চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপের সহযোগিতা করার ৯ বছরে নিজ নিজ দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন বেগবান হয়েছে এবং ইউরোপ ও এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতাও জোরদার হয়। প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহামারী প্রতিরোধ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় অবদান রাখবে।’

ছিন কাং বলেন, শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষ মনে করেন, চীন ও মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সহযোগিতা হলো আঞ্চলিক সহযোগিতার সৃজনশীলতা, বহুপক্ষবাদের সফল অনুশীলন এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ব্যবস্থাসম্পন্ন দেশগুলোর উন্মুক্ত সহযোগিতা চালানোর কার্যকর প্রচেষ্টা। ফলে চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এবং বিভিন্ন পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নীতিও গড়ে তোলা হয়। তা হলো যৌথ আলোচনা ও নির্মাণ, বাস্তবভিত্তিক ভারসাম্য, উন্মুক্ত সহনশীলতা, সৃজনশীল উন্নয়ন। এসব নীতি টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের চাবিকাঠি বলে ছিন কাং মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা উন্মুক্ত সহনশীল চিন্তাধারা পোষণ করে, আন্তর্জাতিক প্রচলতি নীতি অনুসরণ করে, ইইউ’র মানদণ্ডকে সম্মান করে, অন্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে স্বাগত জানাই। বিভিন্ন পক্ষের আলাপ-আলোচনা এবং স্বেচ্ছাসেবী নীতির উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। সংলাপের মাধ্যমে মতভেদ সমাধান করা যায় বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

শীর্ষ সম্মেলনে প্রকাশিত ফলাফলের তালিকায় ২০১৯ সালে ক্রোয়েশিয়ার ডুব্রোভনিকে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর বিভিন্ন পক্ষের স্বাক্ষরিত মোট ৮৮টি আন্তঃসরকার চুক্তি এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতার দলিলও অন্তর্ভূক্ত হয়। মোট ১৩বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এ তালিকা ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। একযোগে মহামারী প্রতিরোধ, আন্তঃসংযোগ, শুল্ক ছাড়ের সুবিধা, কৃষি, সবুজ সৃজনশীলতা, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে পরবর্তীতে সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নির্ধারণের বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষ একমত হয়।

ছিন কাং বলেন,

 ‘চীন মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার পারস্পরিক কল্যাণের মাধ্যমে নিজ নিজ উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী। সহযোগিতার বৈচিত্র্যের মাধ্যমে চীন ও ইউরোপের সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কের বিষয় সম্প্রসারণ করতে চায় চীন। সহযোগিতার স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা মোকাবেলা করতে এবং সহযোগিতার ফলপ্রসূ ফলাফলর মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে চালিকা শক্তি যোগাতে ইচ্ছুক চীন। চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সামনে আরও সুন্দর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখবো আমরা।’

লিলি/এনাম/শুয়ে