স্মরণীয় বরণীয় যাঁরা ২০২১/০২/১২
2021-02-10 16:52:23

স্মরণীয় বরণীয় যাঁরা ২০২১/০২/১২_fororder_chun

 

জনাব ছেন চীনের সি আন শহরে থাকেন। চীনাদের সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ উৎসব বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে তিনি ছেলের জন্য কিছু মাংস পাঠাতে চান। তিনি ভোর বেলায় বাজার থেকে পাঁচ কেজি মাংস কিনেন এবং ডেলিভারি কর্মীকে বার বার বলে দেন যে, মাংসের বাক্সে বেশি করে বরফ দাও, যাতে তা ফ্রেশ থাকে!

জনাব ছেনের ছেলে বেইজিংয়ে চাকরি করেন। চলতি বছর কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তিনি জন্মস্থানে ফিরে যেতে পারছেন না। তিনি এবার বেইজিংয়েই থাকবেন।

 

এটি ছেলেকে দেওয়া জনাব ছেনের প্রথম পার্সেল নয়। এর আগেও ছেন তাঁর ছেলেকে আপেলসহ বিভিন্ন জিনিস পাঠিয়েছেন, আর তাঁর ছেলেও বেইজিং থেকে বাবা মা’র জন্য কেক ও শীতের কাপড় পাঠিয়েছেন। মহামারির কারণে এবার তাঁদের ছেলে বাসায় ফিরতে পারছে না। জনাব ছেন তাঁর ছেলেকে খুব মিস করছেন। তাঁর ছেলে কি ভালোভাবে উৎসব উদযাপন করতে পারবে? উৎসবের দিন সে কী খাবে? ভালো খাবার খেতে পারবে কি? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন তাদের মাথায় ভিড় করে। তাই বাসায় উৎসবের জন্য যা যা প্রস্তুত করেছেন, তা তিনি ছেলেকেও পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, বসন্ত উৎসবের সময় আমি চাই- ছেলে বাইরে থাকলেও জন্মস্থানের স্বাদ উপভোগ করুক।

 

চলতি বছর হল চীনের ঐতিহ্যবাহী ‘ষাঁড় বর্ষ’। তবে কোভিড-১৯ মহামারি অনেকের বসন্ত উৎসব উদযাপনের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে। সরকার এ বছর ‘যে যেখানে আছেন, সেখানেই উৎসব পালনের’ আহ্বান জানিয়েছে, যাতে লোকজনের যাতায়াত কম হয় এবং ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়। অনেকেই এই ব্যাপারটি উপলব্ধি করেন এবং এতে সমর্থন জানান। তাই অনেক মানুষ বসন্ত উৎসব উদযাপনের জন্য জন্মস্থানে ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চলতি বছর ‘আত্মীয়দের পার্সেল’ হল বাইরে থাকা ছেলেমেয়ে এবং জন্মস্থানের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।

 

সি আন শহরের থিয়ান থানে জেডি লজিস্টিক্সের একটি স্টেশনে দশ-বারো জন কর্মীকে পার্সেল প্যাক করা এবং পার্সেলগুলো পাঠানোর কাজে দারুণ ব্যস্ত দেখা যায়। স্টেশনের কাছেই একটি বড় আকারের সুপারমার্কেট রয়েছে। বসন্ত উৎসবের সময় এই স্টেশনের পার্সেলের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। স্টেশনের প্রধান ছি শুয়াই লুং জানান, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় চলতি বছর আমাদের পার্সেল গ্রহণের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। ফল ও ফ্রেশ খাবারের পরিমাণ বেশি। কারণ, চলতি বছরের বসন্ত উৎসবে অনেকেই জন্মস্থানে ফিরে যাচ্ছেন না। তবে বাবা-মা সন্তানদের জন্য পছন্দের জিনিস কিনে তাদেরকে পাঠাচ্ছেন। বসন্ত উৎসবের সময় ‘আত্মীয়দের পার্সেলের’ পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।

 

দেশের বিভিন্ন জায়গায়, বসন্ত উৎসবের জন্য ‘আত্মীয়দের ভালোবাসার পার্সেল’ পরিবারের সবার মধ্যে গভীর ভালোবাসার তথ্য বহন করছে। বিগ ডেটাও এই অভূতপূর্ব পরিবর্তন তুলে ধরেছে। জেডি কোম্পানির বিগ ডেটার তথ্য অনুযায়ী, ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত, দেশের বিভিন্ন প্রদেশে পার্সেল পরিবহনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ৪৯.৭ শতাংশ।

‘ভালোবাসার পার্সেলে’ অনেকেই পরিবারের সদস্যদের স্থানীয় বৈশিষ্ট্যময় জিনিস পাঠাতে পছন্দ করছেন। বিগ ডেটা থেকে জানা যায়, আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যময় পণ্য বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে, আরো দূর-দূরান্তে জিনিস পাঠানো হচ্ছে এবং অনেক আগে থেকেই লোকজন তা কিনতে শুরু করেছে।

 

৪৫ বছর বয়সী লি হুয়াং ফু চীনের চ্য চিয়াং প্রদেশের লোক। গত বসন্ত উৎসবের সময় তিনি অনেক আগে থেকেই নিজের গাড়ি চালিয়ে জন্মস্থানে ফিরে যান। তবে চলতি বছর করোনাভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সি আনেই থেকে যান এবং উৎসব উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জন্মস্থানে যেতে না পারলেও, অনেক আগে থেকেই নানা উপহার কিনেছেন এবং চ্য চিয়াং প্রদেশের বাবা মা ও আত্মীয়স্বজনকে পাঠিয়েছেন।

 

তিনি বলেন, আমি পরিবারের জন্য আখরোট, কুল ও সি আনের স্থানীয় বিখ্যাত ব্রান্ডের মদ কিনেছি। এ সবই সি আন শহরের বৈশিষ্ট্যময় খাবার। আমি পরিবারের সবাইকে এখানকার স্বাদ পৌঁছে দিতে চাই। লি হুয়াং ফু বলেন, আমি সি আনে ভালো আছি, আশা করি পরিবারের সবাই নিজ স্থানে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আবহাওয়া উষ্ণ হলে এবং মহামারির পরিস্থিতি ভালো হলে আমি অবশ্যই বাবা-মাকে দেখতে যাবো।

 

স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে বসন্ত উৎসব উদযাপন পর্যন্ত, মাতৃভূমি সবসময় আমাদের যত্ন নেয়

 

বসন্ত উৎসবের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী চীনা ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নানা দেশের চীনা দূতাবাস এবং কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে ‘বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা’ পেয়েছে। যা চীনের ঐতিহ্যবাহী ‘ষাঁড় বর্ষের’ এক উষ্ণ বার্তা। এর আগে কোভিড-১৯ মহামারি যখন খুব গুরুতর পর্যায়ে ছিল, তখন চীনা দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো প্রবাসী চীনা ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্বাস্থ্যকর বার্তা’ দিয়েছিল। যাতে তাদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়। মাতৃভূমি থেকে আসা এই ভালোবাসা ও যত্ন আবারও প্রবাসী চীনাদের মুগ্ধ করেছে। মাতৃভূমি এভাবে বিদেশে থাকা চীনাদের জানাচ্ছে— ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক, নিশ্চিন্তে থাকুন, মাতৃভূমি সবসময় আপনাদের পাশে রয়েছে।

 

বসন্ত উৎসব হল চীনাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উৎসব। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রবাসী চীনারাও ‘অপ্রয়োজনীয় ও জরুরি না-হলে ভ্রমণ না-করার’ আহ্বানে সমর্থন জানিয়েছেন। তারা এবার বিদেশেই বসন্ত উৎসব উদযাপন করছেন। বিদেশে চীনা দূতাবাস এবং কনসুলেটগুলো নিজ নিজ দেশের বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী প্রবাসী চীনাদের ‘বসন্ত উৎসবের ব্যাগ’ বিতরণ করেছে। যাতে তারা দেশের মানুষের মতই বসন্ত উৎসবের আমেজ উপভোগ করতে পারে। এই ব্যাগে মাস্ক, প্রতিরোধক সামগ্রী ও ওষুধ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বসন্ত উৎসবের পোস্ট কার্ড, চীনা চা এবং শুভেচ্ছাবার্তা ইত্যাদি।

যদিও মাতৃভূমির সঙ্গে প্রবাসীদের হাজার মাইল দূরত্ব রয়েছে, তারপরও মাতৃভূমিকে সবাই ভালোবাসে। গত বছর যখন দেশের মহামারি পরিস্থিতি খুব কঠোর ছিল, তখন প্রবাসী চীনারা বিভিন্ন কঠিনতার মধ্যেও মাতৃভূমির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আসলে মাতৃভূমি ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে না থাকায় প্রবাসী চীনারা ভীষণ কষ্টে রয়েছেন। আর মহামারির কারণে অনেকের অবস্থা আরো কঠিন হয়েছে। চীন সরকার সবসময় প্রবাসী চীনাদের গুরুত্ব দেয় ও যত্ন নেয়।
 

সারা বিশ্বে এখনও ভাইরাসের সংক্রমণ চলছে। বিদেশে চীনা দূতাবাস ও কনসুলেট প্রত্যেক প্রবাসী চীনাদেরকে মাতৃভূমির ভালোবাসা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দূতাবাস চীনা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রবাসী চীনাদের জন্য লাইভ ভিডিও অনুষ্ঠান করেছে, প্রতিরোধমূলক তথ্য দিয়েছে, পেশাদার কনসুলেট সেবা দিয়েছে, জরুরি প্রতিরোধমূলক সামগ্রী সরবরাহ করেছে, বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রবাসী চীনাদের তা বিতরণ করেছে, তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করেছে, প্রবাসী চীনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। অনেক প্রবাসী চীনা ও বিদেশে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থী জানায়, তারা মাতৃভূমির যত্ন উপভোগ করছেন। এর মাধ্যমে ভাইরাস প্রতিরোধ করা এবং উন্নত জীবনযাপনের আস্থা তৈরি হয়েছে।

 

এরই মধ্যে, পাশ্চাত্যের কিছু রাজনীতিক এ ভাইরাসের সঙ্গে ‘চীনা’ লেবেল যুক্ত করেছেন। এর ফলে প্রবাসী চীনারা মনে অনেক কষ্ট পান। চীন সরকার এর দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এমন বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে। প্রবাসী চীনারা বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে মাতৃভূমি তাদের শক্তিশালী সমর্থন দেয়।