‘টিকা নিয়ে বাণিজ্যের মনোভাব খারাপ উদাহরণ’
বিশ্বব্যবস্থা সচল রাখতে অর্থনীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করে সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে অর্থনীতি। অর্থনীতি হয়ে উঠছে রাজনীতির হাতিয়ার, কূটনীতির মূলমন্ত্র আর স্বকিয়তার রক্ষাকবচ। এই অর্থনীতির নানা সমাচার নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাপ্তাহিক আয়োজন ব্যবসাপাতি।
‘ব্যবসাপাতি’র আজকের আয়োজনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, ‘সাজিদ রাজু’। দেশ-বিদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে আপনাদের জন্য থাকছে বিশেষ প্রতিবেদন। প্রতি পর্বেই থাকছে অর্থ-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত অতিথির সাক্ষাতকার।
আজ আমরা কথা বলবো করোনা টিকার আদ্যপান্ত নিয়ে। করোনার টিকা কতোটা সহজলভ্য হবে বাংলাদেশে? সরকারি মজুদ শেষ হলে ব্যক্তিগতভাবে কিনতে পারবে তো সাধারণ মানুষ? দামই বা পড়বে কেমন? দেশে দেশে করোনা টিকার দাম কতো পড়ছে? এমনই নানা জিজ্ঞাসার খোঁজখবর নিয়ে থাকবে বিশেষ প্রতিবেদন। জানাবো বিশ্বের নানা প্রান্তের বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর, তুলে ধরবো অর্থনীতির নানা সমীকরণ।
এই অনুষ্ঠান আপনারা শুনতে পাবেন ঢাকায় এফএম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফএম ৯০ মেগাহার্টজ-এ
শুরুতেই জানিয়ে দিচ্ছি বাণিজ্য-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু খবর।
### চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ বিলিয়ন
গেল বছরের শেষ নাগাদ চীনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৮৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২০ সালের মার্চ থেকে ৮৫.৪ মিলিয়ন বেশি। সম্প্রতি বুধবার চীনের ইন্টারনেট উন্নয়ন প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
চীন ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তথ্য কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ইন্টারনেট প্রাপ্যতার হার মার্চ থেকে ৫.৯ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭০.৪ শতাংশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, অনলাইন জনসংখ্যার ৯৯.৭ শতাংশ, ইন্টারনেট চালানোর জন্য মোট ৯৮৬মিলিয়ন চীনা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছে। অনলাইন জনসংখ্যার ৩১.৩ শতাংশ বা প্রায় ৩০৯ মিলিয়ন গ্রাম এলাকায় বসবাস করে, যা মার্চ থেকে ৫৪.৭১ মিলিয়ন বেড়েছে।
### বাংলাদেশে রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড
চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ১৯৬ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এর পরিমাণ ১৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। সোমবার রাতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিলো ১৬৪ কোটি ডলার বা ১৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি বছর একই মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে ২ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ১ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার পাঠান প্রবাসীরা। এই অর্থের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮৬ কোটি ডলার বেশি।
২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে প্রবাসী দেশে পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ১০৪ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসের প্রবাসী আয়ের পরিসংখ্যান বলছে, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশ।
এদিকে প্রবাসীদের ওপর ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বর্তমানে ৪ হাজার ২৯১ কোটি ডলার হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশেষ প্রতিবেদন:
দেশে দেশে করোনা টিকার দামে ভিন্নতা
বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে শুরু হয়ে গেছে করোনা টিকাদান কার্যক্রম। কোন দেশ কার আগে টিকা পাবে এ নিয়েও রয়েছে প্রতিযোগিতা। আবার একই প্রতিষ্ঠানের টিকার দামে গ্রহীতা দেশ ভেদে রয়েছে ভিন্নতা। দেশে দেশে করোনা টিকার সাত-সতেরো তুলে ধরছেন হাবিবুর রহমান অভি।
বিশ্বজুড়ে এখনো চলছে করোনাভাইরাসের রাজত্ব। বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই উর্ধ্বমুখী। মহামারি এই ভাইরাসের গতি রুখতে এরইমধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি টিকা। দেশে দেশে শুরু হয়েছে এসব টিকার অনুমোদন ও ব্যবহারও।
ইউনিসেফের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত ৯টির মতো টিকা বিভিন্ন দেশে অনুমোদন পেয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ ২ হাজার কোটি ডোজ টিকা তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও এখনই পাচ্ছে না বহু দেশের মানুষ। তাই বিশ্বের পৌনে আটশ কোটি বেশি মানুষের বেশিরভাগই আছে টিকা না পাওয়ার আশঙ্কায়।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের টিকা উদ্ভাবনের পর নানা দেশে শুরু হয়েছে টিকা সংগ্রহের জোর প্রচেষ্টা। তবে দাম নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। কেননা নানা দেশভেদে একই প্রতিষ্ঠানের টিকার দাম পড়ছে ভিন্ন ভিন্ন।
যুক্তরাজ্য থেকে ইউরোপীয় কমিশন সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতি ডোজ টিকা কিনছে ২.২১ ডলার বা ১৮৬ টাকায়। একই টিকা ফিলিপিন্স কিনছে আড়াই ডলার বা ২১২ টাকায়। আর যুক্তরাষ্ট্রকে এর জন্য গুণতে হচ্ছে ৪ ডলার বা ৩৪০ টাকা।
এদিকে ভারতের সেরাম ইন্সস্টিটিউট থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতি ডোজ টিকার জন্য বাংলাদেশকে গুনতে হচ্ছে ৪ ডলার বা ৩৪০ টাকা। যদিও ভারত একই টিকা পাচ্ছে ২.৭২ ডলার বা ২৩১ টাকা। ভারত থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর আনা এই টিকা বাংলাদেশের খোলা বাজারে বিক্রি হবে ১৩ ডলার বা ১ হাজার ১শ’ টাকায়। প্রতিজনের জন্য ২ ডোজ টিকার দাম পড়বে প্রায় আড়াই হাজার টাকা।
অক্সফোর্ডের তৈরি টিকার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম পড়বে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ২টি টিকার। ফাইজার উৎপাদিত টিকার দাম পড়ছে বাংলাদেশি টাকায় ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত। আর মডার্নার তৈরি টিকার দাম আরও বেশি প্রায় ৩০০০ হাজার টাকা।
এসবের মাঝে একটু স্বস্তির খবর দিচ্ছে চীনের টিকা। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অর্ধেকেরও কম দামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকা সরবরাহ করছে চীন। তাদের উৎপাদিত সিনোভ্যাক টিকা ব্রাজিল কিনেছে ৮৯০ টাকায় আর ইন্দোনেশিয়া ১১০০ টাকায়। এছাড়াও তুরস্ক, বাহরাইন, সার্বিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে আরো কম দামে টিকা দিয়েছে চীন।
বসে নেই রাশিয়াও। তাদের তৈরি স্পুতনিক-ফাইভ টিকার দাম তুলনামূলক কম। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে প্রতি ডোজ টিকা তারা সরবরাহ করছে আড়াইশ টাকায়। আর অন্য দেশের জন্য দাম রাখছে ৮০০ টাকারও বেশি।
‘’ টিকার দাম কখনোই ৪ ডলারের বেশি হবে না, পরে আরো কমবে ’’
এদিকে বাংলাদেশের টিকার দাম নিয়ে বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাব্বুর রেজার সাথে কথা বলেছে চীন আন্তর্জাতিক বেতার। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে আনা টিকার দাম কখনোই ৪ ডলারের বেশি হবে না, বরং পরবর্তী চালানে দাম আরো কমে আসতে পারে।
প্রধান রাব্বুর রেজা, নির্বাহী কর্মকর্তা, বেক্সিমকো ফার্মা
বিশেষ প্রতিবেদন:
সবার জন্য করোনা টিকা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত করেনি সরকার
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকার বন্দোবস্ত করতে পেরেছে তা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও কম। অথচ টিকা কার্যক্রমের লক্ষ্য হার্ড ইমিউনিটি অর্জন। এ লক্ষ্য অর্জন করতে জনগোষ্ঠীর ৭০ থেকে ৮০ ভাগকে টিকার আওতায় আনতে হবে। জনগণের এ বিরাট অংশকে টিকা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে কোন পথে হাটছে বাংলাদেশ? আর টিকা বাণিজ্য ও ভ্যাকসিন ডিপ্লোমেসিইবা কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে? উত্তর খুজেঁছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রতিবেদক আজহার লিমন।
দেশব্যাপী ভারত থেকে পাওয়া ৭০ লাখ ডোজ দিয়ে যখন করোনার টিকা কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি চলছে, তখন রাজধানীর মহাখালির টিএন্ডটি এলাকার আমার কথা হচ্ছিলো রিক্সাচালক শুকুর আলীর সঙ্গে। ২ দিন বাদে রোববারই প্রথমবারের মত করোনা ভ্যাকসিনের গণ ব্যবহার শুরু হবে। কিন্তু এ নিয়ে তেমন কিছু জানেন না শুকুর আলী।
শুকুর আল বলছিলেন, “শুনে যে টিকা আসছে। সারাদেশে পৌছেঁও গেছে। তবে আমরা পাবো কি না তার কোন গ্যারান্টি নেই। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। যেহেতু আমরা গরীব মানুষ নাও পাইতে পারি।“
রিক্সাচালক শুকুর আলীর মত বাংলাদেশের টিকা কার্যক্রম নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না নিম্নবিত্ত ও প্রযুক্তিতে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অনেকেই। যদিও বিভিন্ন দেশে গ্রুপভিত্তিক টিকা কার্যক্রম শুরুর প্রথম ধাপেই রাখা হয়েছিলো জনাব শুকুরের মত পরিবহন শ্রমিক ও খেটেখাওয়া নিম্নবিত্তের মানুষদের।
আরেকজন রিক্সাচালক বলছিলেন, শুনছি যে কিনতে হতে পারে। ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলে মানুষ কিনতে পারে। যেটা শুনছি ১০০০ টাকা। এত টাকা দিয়ে টিকা নেওয়ার আসলে সার্মথ্য নাই। এত টাকা আমরা উপার্জনই করতে পারি না। এমনিই এখন ইনকাম নাই।
ঢাকার আরেক মাইক্রোবাস চালকের ধারণা, পয়সাওয়ালা ধনী ব্যক্তিরা নেওয়ার পর যদি থাকে তাহলে হয়তো গরীবেরা টিকা পাবে।
বাংলাদেশে প্রথম ধাপে টিকা দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যমকর্মীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত মোটামুটি ১৭ ক্যাটাগরির মানুষকে। ভারতের ৭০ লাখ ডোজ দিয়ে প্রথম ধাপের এ টিকা কার্যক্রমের লক্ষ্য ৭০ লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া। ভ্যাকসিন বিষয়ক মুখপাত্র অধ্যাপক মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বাকি জনগোষ্ঠীর জন্য ঠিক কীভাবে টিকা কার্যক্রমের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার?
ডা. মিজানুর রহমান চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানান, আপাতত তারা চলমান টিকা কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত আছেন। টিকা আনার নতুন কোন পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানেন না।
বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় যে মোট ৩ কোটি ২০ লাখ ডোজ টিকা পাবে তা দেশীয় একটি বেসরকারি ফার্মাসিটিক্যালস ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের একটি বাণিজ্য চুক্তির অংশ। এ টিকা দিয়ে জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ মনে করেন, হার্ড ইমিউনিটি কিংবা টিকা কার্যক্রমের লক্ষ্য অর্জনে এ হার মোটেও সন্তোষজনক নয়। তিনি মনে করেন, কার্যকর টিকা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে জনগোষ্ঠীর অন্তত ৭০ থেকে ৮০ ভাগ। কিন্তু যেখানে বিশ্বব্যাপী করোনা টিকার সংকট রয়েছে সেক্ষেত্রে করণীয় কী?
বে-নজির আহমেদ বলেন, “আসলে আমাদের প্রথমেই একটা ভালো পরিকল্পনা করতে হবে। ঠিক করতে হবে আমরা কোথায় কতটুকু টিকা দিতে চাই। সেই অনুযায়ী আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যে, বাকি টিকাটা আমরা কোন জায়গা থেকে আনবো। এখন থেকেই যদি আমরা প্লান করতে থাকি। তাহলে হয়তো দেখা যাবে টিকাটা পেয়ে যাবো আমরা সময়মত।“ মর্ডানা, জনসন এন্ড জনসন কিংবা চাইনিজ ভ্যাকসিন আছে কয়টা, নিজেদের প্রয়োজনেই যে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে বলে মনে করেন ডা. বে-নজির।
কিন্তু টিকার বিকল্প উৎস নির্ধারণে কতটা এগোতে পেরেছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ও করোনাবিষয়ক মুখপাত্র মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলছেন, আপাতত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা ভাবছে সরকার।
ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, একটা পপুলেশনের ২০ শতাংশের দেওয়ার কথা ছিলো ডব্লিউএইচও এবং গ্যাভির। তবে তারা এখন এ পরিমাণকে বাড়িয়েছে। তারা এখন বলছে ২৭ ভাগ দেবে। এ টিকা আসার পর যদি দেখা যায় সফলতা পাওয়া গেছে। তখন নানা ধরনের টিকা বাজারে আসবে। দামও কমতে পারে। তখন দেখা যাবে।
ডা. রোবেদ আমিন, লাইন ডিরেক্টর ও করোনাবিষয়ক মুখপাত্র, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ট্র্যাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য, এখন পর্যন্ত টিকার আওতায় আনা গেছে বিশ্বের ২ শতাংশেরও কম মানুষকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ব্যবহারের জন্য অনুমতি পেয়েছে বিশ্বের ৫টি দেশের ৯টি ভ্যাকসিন। যেহেতু প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক ভবিষৎ নির্ভর করছে টিকা কার্যক্রমের ওপর, তাই সামনের দিনগুলোতেও টিকা বাণিজ্য আর কুটনীতি যে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এমন অবস্থায় উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকা কী হয় সেদিকেই নজর রাখছে সংশ্লিষ্টরা।
স্বাক্ষাতকার:
‘করোনা টিকা বিক্রি না করে বিনামূল্য দেয়া উচিত। টিকা নিয়ে বাণিজ্যের মনোভাব খারাপ উদাহরণ’ - ডা. বেনজির আহমেদ।
করোনা টিকার আদ্যপান্ত জানাতে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক এবং আইইডিসিআরের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ। তিনি জানান, স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত না করায় সাড়া মিলছে না। উপজেলাভিত্তিক টিকাকেন্দ্র ভুল পরিকল্পনা, নিয়ে যেতে হবে ইউনিয়ন পর্যায়ে’
অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ
চীনের দারিদ্র্য বিমোচনের গল্প:
ফুল চাষের বিপ্লব ঘটিয়ে দারিদ্র বিমোচনের উদাহরণ তৈরি করেছেন হংকং এর নারী উদ্যোক্তা
চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং। এই অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় ফুল চাষের বিপ্লব ছড়িয়ে দিয়ে দারিদ্র বিমোচনে উদাহরণ তৈরি করেছেন এক নারী উদ্যোক্তা। মাত্র ৩ বছরে ফুল চাষকে এক প্রকার শিল্পে পরিণত করেছেন তিনি। নানা উদ্ভাবন ও গ্রামের কৃষকদের সম্পৃক্ত করে দারিদ্র্য বিমোচনের আন্দোলন গড়ে তুলেছন নারী উদ্যোক্তা লেউং অন-লি। বিস্তারিত থাকছে সাজিদ রাজু’র প্রতিবেদনে।
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ গুইচৌ। এরই একটি এলাকা হেঝ্যাং কাউন্টি। ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে গ্রামের পর গ্রাম। এসব গ্রামে কেবল ফুলের সৌরভ নয়, আছে আর্থিক স্বচ্ছলতার হাসিও। অথচ এক সময় দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হতে হয়েছে এখানকার মানুষদের।
এই এলাকায় এখন চোখে পড়বে সাদা রঙের শতশত গ্রিনহাউজ সারি করে সাজানো। এর মধ্যে শোভা পাচ্ছে নানা রঙের ও জাতের বাহারি ফুল। এ ফুলের সৌরভই ভাগ্য ফিরিয়েছে এই এলাকার অসংখ্য মানুষের। আর এই এলাকার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বদলে দেয়ার পেছনের কারিগর হংকং এর নারী উদ্যোক্তা লেউং অন-লি।
লেউং জানান, তিনি প্রথম যখন এখানে আসেন, তখন পাহাড়ের উপর থেকে পুরো এলাকাকে রূপকথার রাজ্যই মনে হয়েছে। গ্রামের আনাচে কানাচে ঘুরেই তার মন খারাপ হয়ে গেছে। তিনি বলছিলেন, এখনো অনেক মানুষ দরিদ্র্য আছে। দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারা তার কাছে সত্যিই এক অর্থবহ বিষয়।
শুরুতে চাষীদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। পরে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন ফুল শিল্প। এখানে চোখে পড়বে ফুল নিয়ে বাহারি কাজ। কেউ ব্যস্ত ফুলের তোড়া তৈরিতে। কেউবা বিশেষভাবে মুড়িয়ে বাজারে নেয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন ফুলগুলো।
উদ্ভাবনে ফুল চাষেও এসেছে বৈচিত্র্য। প্রায় ৩০ প্রকার ক্রিসেন্থিমাম ফুল মিলবে এখানে। শুরুর দিকে প্রাকৃতিক বৈরি পরিবেশে অনেক ফুল নষ্ট হতো জানিয়ে এখানকার ফুল চাষিরা বলছেন, এখন নানা কৌশল রপ্ত করেছেন তারা। এতে ফুল চাষে ব্যয় কমেছে, বেড়েছে আয়।
এখানকার স্থানীয় ফুলচাষী চৌ ছিয়াও বলছিলেন, তিনি আগে অন্য শহরে কাজ করতেন। যা আয় হতো, তা দিয়ে কোন রকমে খেয়েপরে বাঁচা যেত। লিউং এর দেখাদেখি পরে তিনিও ফুল চাষ শুরু করেন। এখন অনেক আয় হয় বলেও জানান ছিয়াও।
ব্যক্তি উদ্যোগে শুরু হলেও পরে সরকারের নজর কাড়ে লেউং এর সফলতা। উমেং পাহাড়ের জনপদে উপত্যকাগুলোতে সরকারি উদ্যোগে তৈরি করা হয় ২ হাজার মিটার বিস্তৃত গ্রিনহাউজ। এখন এখানকার উৎপাদিত ফুল রফতানি হয় জাপানসহ নানা দেশে।
হংকং এর সান ইয়েত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এই এলাকার ফুলের সুনাম শুনে দেখতে এসেছেন। তিনি জানান, এখানে আসার পর পুরো ধারণা পাল্টে গেছে।
তারা প্রত্যাশা, এক সময় দেশের জন্য তিনিও কাজ করতে পারবেন। বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূর করতে ভূমিকা পালন করার ইচ্ছা তার আছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী।
এই এলাকার ৬’শ পরিবারের কমপক্ষে ৬ হাজার মানুষ এই উদ্যোগের মাধ্যমে দারিদ্র্য মুক্ত হয়েছে বলে জানায় হংকং কর্তৃপক্ষ। এখানকার উদ্যোক্তা ফুল চাষীদের প্রত্যাশা, তাদের এসব উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে বেকার জনগোষ্ঠী যখন কর্মসংস্থানের হদিস পাবে, তখনই তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে।
প্রিয় দর্শক, এর মধ্য দিয়ে আয়োজনের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আমরা। আপনার পরামর্শ আমাদের সমৃদ্ধ করবে। আপনার যে কোন পরামর্শ পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। চীন আন্তর্জাতিক বেতার –সিআরআই বাংলা’র ফেসবুক পাতায় আপনার মন্তব্য করতে পারেন। আরো যুক্ত থাকতে পারেন সিএমজি বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla এবং ইউটিউব লিঙ্কে youtube.com/cmgbangla গিয়েও আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে পারেন। আগামী পর্বে আবারো কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সুস্থ্য থাকুন, শুভকামনা সবাইকে।