রোববারের আলাপন: ‘সান সি’ উদযাপিত হয় চীনা নববর্ষের আগের দিন
2021-02-05 16:17:52

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু আকাশ এবং এনাম ।

আকাশ: হ্যাপি চাইনিজ নিউ ইয়ার 
এনাম: হ্যাপি চাইনিজ নিউ ইয়ার

আকাশ: বন্ধুরা, ১১ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে চীনের ‘সান সি’, মানে চীনের চন্দ্র বর্ষের শেষ দিন। এ দিন চীনারা যত দূরেই থাকুক না কেন, সবাই জন্মস্থানে পরিবারের কাছে ফিরে যান। ভাই, তাহলে বসন্ত উতসব কিছুটা বাংলাদেশের ঈদের মত, তাইনা?  সবাই জম্মস্থানে ফিরে যান। 
এনাম:...
আকাশ: বন্ধুরা, আমি জানি আমাদের অনেকেই বড় শহরে কাজ করেন। দেশের বাড়ির আত্নীয় স্বজনদের সাথে এক বছরেও দেখার সুযোগ হয় না। ভাই, আপনিও, বিদেশে চাকরি করেন, দেশের পরিবারের সাথে দেখা করতে পারেন না। যদি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে না পারা যায়, তাহলে বসন্ত উত্সব বা অন্য সব উত্সবই অর্থহীন। অনেক সুস্বাদু খাবার খেলেও, পরিবার সঙ্গে না থাকলে উত্সব একেবারে অর্থহীন। তাইনা ভাই? 
এনাম:...
ভাই, চীনারা ‘সান সি’তে কী কী করে ভাই?
আকাশ: আচ্ছা। বন্ধুরা, আমি তাহলে আমার আগের বসন্ত উত্সবের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করি, তাহলে ‘সান সি’সহ আপনারা বুঝতে পারবেন চীনারা কিভাবে বসন্ত উত্সব কাটায়, কেমন? 
বন্ধুরা, আমি প্রথম কয়েক বছর চীন আন্তর্জাতিক বেতারে কাজ করার সময় বসন্ত উত্সবের মধ্যে অফিস করেছি, মানে জন্মস্থানে ফিরে যেতে পারি নি। তারপর এক বছরে, বসন্ত উত্সবের সময় ছুটি পাই। আসলে ভাই, বসন্ত উত্সবের সময় ট্রেন বা বিমানের টিকেট কেনা অনেক অনেক কঠিন। ভাই, ঈদের সময় বাংলাদেশের অবস্থাও একইরকম, তাইনা?
এনাম:...
আকাশ: এজন্য অনেক কষ্ট করে প্রতিদিন সকালে টিকেট কাউন্টারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরও আমার জন্মস্থান হান তানে ফিরে যাওয়ার টিকেট পাইনি। তখন ট্রেনের টিকেট কেনার কোন মোবাইল অ্যাপ ছিলোনা। এজন্য ট্রেন স্টেশন বা টিকেট কাউন্টারে গিয়ে টিকেট কিনতে হতো। 
এনাম: তারপর কি হলো ভাই?
আকাশ: আমি আশা ছেড়ে দেইনি। অনেক চেষ্টার পর ‘সান সি’ অর্থাত্ বসন্ত উত্সবের আগের দিন বিকেলে হান তানে ফিরে যাওয়ার একটি টিকেট পাই। কিন্তু কোন সিট নেই। আসলে তখন সিট কোনো ব্যাপার না, টিকেট পাওয়াটাই বড় ব্যাপার। টিকেট পাওয়ার পর, আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাই। কারণ সবাই ‘সান সি’র আগে বাসায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য ‘সান সি’র দিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় টিকেট তুলনামূলকভাবে একটু সহজে কিনতে পারা যায়।
এনাম: ভাই আপনি তখন কয়টার সময় হান তানে পৌঁছালেন?
আকাশ: বেইজিং থেকে হান তানের দূরত্ব ৪৪০ কিলোমিটার। দ্রুতগতির ট্রেনে বেইজিং থেকে হান তানে প্রায় দু ঘন্টায় পৌঁছানো যায়। যাইহোক আমি প্রায় পাঁচটার সময় দাদার বাড়ি পৌঁছাই। তার পর প্রথমে আমি এবং আমার বাবা একসাথে দাদীর স্মরণে একটা অনুষ্ঠান করি। এরপর আমরা বাসায় ফিরে যাই। বিকালে ইতোমধ্যে সবাই সব চিয়াও জি বা ডাম্পলিং তৈরি করা সম্পন্ন করেছেন। এনাম ভাই, আপনি আমাদের ভাইবোনদেরকে চিয়াও জি সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন?
এনাম:
আকাশ: বন্ধুরা, চীনে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে বসন্ত উত্সবের সান সি, চু ই, ফো উ, মানে চীনের চন্দ্র নববর্ষের আগের দিন, প্রথম দিন এবং পঞ্চম দিন সবাই চিয়াও জি তৈরি করে খান। এ বিশেষ সময়ে সবাই যত দূরেই থাকুক না কেন, সবাই জন্মস্থানে ফিরে যান এবং একসাথে চিয়াও জি তৈরি করেন। ভাই, বাংলাদেশে ঈদের বা অন্য বড় বড় উত্সবের সময় চীনের চিয়াও জি’র মতো বিশেষ কোন খাবার আছে?
এনাম:... ভাই, আমার একটি প্রশ্ন আছে, চীনারা বসন্ত উত্সব ছাড়া অন্য সময়েও কি চিয়াও জি খান? 
আকাশ: হ্যাঁ। অবশ্যই। ইচ্ছা মতো খেয়ে থাকেন। যেমন আমার বাবা চিয়াও জি খেতে অনেক পছন্দ করেন। এজন্য মা প্রায় প্রতি সপ্তাহে চিয়াও জি তৈরি করেন। এজন্য ছোটবেলায় চিয়াও জি খেতে আমার অনেক বিরক্ত লাগতো।
এনাম: কারণ তখন অনেক খেয়েছেন, হাহা।
আকাশ: জ্বি। কিন্তু, জন্মস্থান থেকে বেইজিংয়ে যাওয়ার পর, বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তরায় থাকার সময়, আমি আমার বাবার মতো চিয়াও জি খেতে অনেক পছন্দ করি। আসলে চিয়াও জি আমার কাছে শুধু একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটা মানে বাড়ি, পরিবারের সম্মিলন। 
ভাইয়া, আমার ধারণা, আমরা যখনই, যেখানেই থাকি না কেন, আমাদের পরিবার সবসময় আমাদের সাথে থাকে। পরিবার সবসময় আমাদের পাশে থাকে, আমাদের মনে থাকে। পরিবার সবসময় আমাদেরকে সমর্থন করে এবং সঙ্গ দেয়। 
এনাম: ভাই, তাহলে আন্টি সব চিয়াও জি তৈরি করার পর সিদ্ধ করেন, তাইনা? 
আকাশ: জ্বি। তবে চিয়াও জি সিদ্ধ করার আগে, চীনে একটি রীতি আছে, পরিবারের বড় ছেলে আতশবাজি ফোটাবেন। আতশবাজি ফোটানোর সাথে সাথে চিয়াও জি সিদ্ধ করা শুরু হবে। 
এনাম: তার মানে, আতশবাজি না ফোটালে চিয়াও জি সিদ্ধ করা হবেনা,তাইনা ভাই?
আকাশ: হ্যাঁ। আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি তখন অনেক দিন জন্মস্থানে বা দাদার বাড়িতে বসন্ত উত্সব কাটাই নি। এ জন্য মন অনেক উদ্দীপিত। চিয়াও জি সিদ্ধ করার পর দাদা, বাবা, মা এবং আমি টেবিলে গোল হয়ে বসে খেতে শুরু করি।তখন ওই মুহূর্তে আমার চোখে পানি চলে আসে। আমার পরিবার যেন আমার চোখের পানি না দেখতে পারে সেজন্য আমি আমার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেই।
ভাই, ওই মুহূর্তটি আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। ভাই, ঈদে আপনার বাড়ি ফিরে যাওয়ার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন?
এনাম:....
এনাম: ভাই, সান সি সন্ধ্যায় চিয়াও জি খাওয়ার পর আপনারা আর কী কী করেছেন?
আকাশ: তখন আমরা চিয়াও জি খাওয়ার পর, দাদার সাথে একসাথে সিসিটিভি’র বসন্ত উত্সবের ‘গালা ইভিনিং’ দেখি। তারপর দাদা ঘুমানোর পর, আমি মা বাবার সাথে নিজের বাসায় ফিরে গিয়ে অব্যাহতভাবে বসন্ত উত্সবের ‘গালা ইভিনিং’ দেখতে থাকি। 
এনাম: তারপর কী করেছেন?
আকাশ: রাত ১২টার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। অর্থাত্ আমরা গালা ইভিনিং দেখতে দেখতে নতুন বছরের শুরুর জন্য অপেক্ষা করি। তারপর নতুন বছর শুরু হবার ঠিক ওই মুহূর্তটিতে সবাই বাইরে গিয়ে আতশবাজি ফোটাই। তখন সারা শহর  আতশবাজির শব্দে ভরে ওঠে।
এনাম: কিন্তু এখন আতশবাজির শব্দ এতো বেশি নেই কেন?
আকাশ: এখন পরিবেশ বা বায়ু দূষণ বন্ধ করতে চীনের অধিকাংশ শহরে আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আতশবাজি ছাড়া বসন্ত উত্সবের আবহ অনেক কমে যায়। ভাই, আপনি জানেন, ছোটবেলায় আমরা অনেক সময় আগে থেকেই বসন্ত উত্সবের অপেক্ষায় থাকতাম। কারণ তখন আতশবাজি ফোটাতে পারতাম। হাহাহা, আর এটা ছিলো ভীষণ মজার এবং আনন্দের। ভাইয়া, বাংলাদেশে ঈদ বা পয়লা বৈশাখে কী কী বিশেষ রীতি রয়েছে? এবং আপনার কিছু মজার স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন?
এনাম:...
আকাশ: বন্ধুরা, আজ এ পর্যন্তই, আগামী অনুষ্ঠানে অব্যাহতভাবে বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, কেমন? নতুন বছরে আপনারা সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দে থাকুন, এই প্রত্যাশা করছি। নতুন বছরে আমরা একসাথে অব্যাহতভাবে সুন্দর জীবনের জন্য সময়ের সঠিক ব্যবহার করবো এবং বেশি বেশি পরিশ্রম করবো। 
এনাম: