বসন্ত উত্সবের যাত্রা মানে চীনের চন্দ্র পঞ্জিকার নববর্ষকে ঘিরে পরিবহন জগতে এক অন্যরকম ব্যস্ততা ও প্রাণচাঞ্চল্য। পরিবহন জগতে এক নজিরবিহীন চাপ চলতে থাকে প্রায় ৪০ দিন। কারণ ওই সময়টাতে চীনের জনগণ দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে চষে বেড়ান কেবল নিকাটাত্নীয়দের সঙ্গে উতসবটি উদযাপন করতে। ফলে প্রতি বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চীনের পরিবহন জগতে চলে রমরমা ব্যবসা। কিন্তু চলতি বছেরর চিত্র যেন একবারেই ভিন্ন।
গত বৃহস্পতিবার চলতি বছরের বসন্ত উত্সবের যাতায়াত শুরু হয়েছে। তবে, অন্যান্য বছরের মতো এবার রাস্তা-ঘাটে তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কারণ মহামারীর প্রভাবে অনেক মানুষ যেখানে আছেন সেখানেই বসন্ত উত্সব উদযাপনের পরিকল্পনা করেছেন। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় সরকার মানুষদের স্থানীয়ভাবে বসন্ত উত্সব উদযাপনে উত্সাহিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থাও নিয়েছে।
তবে, কিছু মানুষ অবশ্যই যাতায়াত করছেন। ফলে চীনের রেলপথ, সড়ক, বিমান যোগাযোগ ইত্যাদি বিভাগ মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদার ও সুবিধা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রেলপথ বিভাগ খুব কঠোরভাবে যাত্রীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, যাত্রীদের তাপমাত্রা মাপা, দুটি আসনের মাঝে খালি রাখা, যাত্রীদের মাস্ক পরা এবং রেলগাড়িকে জীবাণুমুক্তকরণ ও বায়ু বিনিময়ের ব্যবস্থা জোরদার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাছাড়া, ই-টিকেট, অনলাইন বুকিং ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া, চীনা রাষ্ট্রীয় পরিষদের কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রুপ সম্প্রতি চীনা নাগরিকদেরকে ‘নিজ স্থানেই বসন্ত উত্সব কাটানো’র প্রস্তাব করেছে । এতে নিজের জন্মস্থানে না গিয়ে যে যেখানে কাজ করছে, সেখানেই বসন্ত উত্সব কাটানোর প্রস্তাব রয়েছে। এটি একটি পরামর্শ কিন্তু বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নয়।
বসন্ত উত্সব হলো চীনা মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্সব। তাই এবার চীনাদের অনেক ইচ্ছার বিসর্জন দিতে হচ্ছে। আর সবই মহামারির কারণে। মহামারী না হলে অবশ্যই সবাই নিজের জন্মস্থানে ফিরে যেত। তবে, মুষ্টিমেয় কিছু লোক নাড়ির টানে এবারও বাড়ী যাচ্ছে। তাদের সবার উচিত যাত্রা পথে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বসন্ত উত্সবের সময় মহামারী প্রতিরোধের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, বর্তমান চীনে ব্যাপকভাবে টিকাদান চলছে। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে মহামারী পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে। চীনের লক্ষ্য হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ চীনা নাগরিকদের টিকা প্রদান করা। এর আগে সবার উচিত আরও কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। চীনের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার নাগরিকদেরকে বর্তমান স্থানেই বসন্ত উত্সব কাটানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। ব্যবস্থাগুলো নাগরিকদের শপিং, বিনোদনসহ বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করছে। এছাড়াও টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন ভর্তুকি ও কুপন প্রদান করা হয়েছে। যদিও এ বছরের বসন্ত উত্সবে অনেকে হয়ত নিজের জন্মস্থানে যাবে না, কিন্তু আরও বেশি যত্ন ও মানবিক ব্যবস্থায় সবারই আনন্দের সুযোগ রয়েছে। (ছাই/এনাম/স্বর্ণা)