টিকা কার্যক্রম শুরু: বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি
2021-01-31 18:29:51

দেশে করোনা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ওঠানামার মধ্যে থাকলেও সংক্রমণ কমেছে লক্ষ্যণীয়ভাবে। সবশেষ ৩০ জানুয়ারি গত নয় মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংক্রমণ তিন শো’র নিচে নেমেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বেড়ে যায় দ্বিগুণের বেশি। হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষা ও রোগীর চাপও কমেছে অনেকটা। গত কিছুদিন ধরেই অব্যাহত রয়েছে এ প্রবণতা। এরই মধ্যে ২৭ জানুয়ারি শুরু হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি। টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা-সংশয় থাকলেও ধীরে ধীরে এতে আগ্রহী হচ্ছেন তারা। বাড়ছে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা। ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১১ হাজার জন টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের দশ মাসের মাথায় শুরু করা গেছে টিকা কার্যক্রম। ২১ জানুয়ারি ভারতের উপহারের ২০ লাখ ডোজ টিকা প্রথম দেশে আসে। ২৫ জানুয়ারি আসে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ডের ৫০ লাখ ডোজ। ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। একে একে টিকা নেন করোনা মোকাবেলায় সম্মুখসারির ২৬ যোদ্ধা। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন ও টিকা গ্রহীতাদের সাহস যোগান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত টিকা পেতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য আলাদাভাবে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথাও বলেন সরকার প্রধান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মহামারি মোকাবেলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। সবশেষ ৩০ জুন ঢাকায় এক ওয়েবিনারে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা মহামারি মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূঁয়সী প্রশংসা করেন।  শুরুতে করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিভাগ বেহাল দশায় পড়লেও দ্রুত টিকা আনার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে সরকার। এ জন্য তারা প্রশংসার দাবিদার।

তবে, এখনো টিকা নেয়ার বিষয়ে মানুষের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব পুরোপুরি কাটেনি। টিকা নিলে পাশ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা, নিবন্ধন জটিলতা, সর্বোপরী টিকার সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো এখনো সামনে এসেছে।

প্রথম দিকে যারা টিকা নিয়েছেন- নার্স রুনু ভেরোনিকা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা, ডা. অরূপ রতন চৌধুরীসহ ২৬ জন- তাদের সবারই স্বাস্থ্য ভালো রয়েছে বলে জানানো হয়েছে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। কারোই বড় ধরনের কোনো পাশ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। টিকা গ্রহীতা দু’একজনের শরীরে সামান্য ব্যথা হলেও তা সেরে গেছে। পাশ্বপ্রতিক্রিয়ার ভীতি কাটাতে স্বাস্থ্যবিভাগের এ বিষয়টিতে আরো প্রচারণ চালানো দরকার।

এদিকে, দ্বিধা-সংশয় কাটিয়ে যারা টিকা নিতে আগ্রহী, তারা নিবন্ধন করতে গিয়ে জটিলতায় পড়ছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা নামে একটি ওয়েবসাইটটি খুলে দেয়ার কথা বলেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কিন্তু টিকাকর্মসূচি শুরুর চার দিন পরও সেটাতে নিবন্ধন করতে গিয়ে ব্যর্থ হন অনেকে। তাছাড়া সুরক্ষা নামে মোবাইল অ্যাপটিও চালু হয়নি ঘোষণা অনুযায়ী।

সমস্যাটি সামনে আসার পর এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক জানান, এখন শুধু করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং ৫৫ উর্ধ্বরাই টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ওপর চাপ কমাতেও এমন ব্যবস্থা বোঝা যায়। একই কারণে চালু করা হয়নি মোবাইল অ্যাপটিও। কিন্তু এ বিষয়টি আগে থেকেই পরিষ্কার করা হলে জনভোগান্তি হতো না। এতে করে অনেকেরই টিকায় আগ্রহ হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম অবশ্য জানিয়েছেন, নিবন্ধনের জন্য ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মোবাইল অ্যাপটি পাওয়া যাবে গোগল প্লে স্টোরে। আর ১ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় পৌঁছে যাবে টিকা। কিন্তু সম্মুখযোদ্ধা বা ৫৫ উর্ধ্বদের বাইরে অন্যরা কবে নাগাদ নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন সে বিষয়টির কোনো সুরাহা হলো না এখনো। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা উচিত স্বাস্থ্য বিভাগের। নইলে টিকাদান কর্মসূচি বিঘ্নিত হবার ঝুঁকি থেকেই যায়।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।