জানুয়ারি ২৮: গতকাল (বৃহস্পতিবার) চলতি বছরের বসন্ত উত্সবের যাতায়াত শুরু হয়েছে। তবে, অন্যান্য বছরের মতো এবার রাস্তা-ঘাটে তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কারণ মহামারীর প্রভাবে অনেক মানুষ যেখানে আছেন সেখানেই বসন্ত উত্সব উদযাপনের পরিকল্পনা করেছেন। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় সরকার মানুষদের স্থানীয়ভাবে বসন্ত উত্সব উদযাপনে উত্সাহিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থাও নিয়েছে।
লু ইউয়ান শানসি প্রদেশের একটি তেল গ্যাস কোম্পানিতে কাজ করেন। তাঁর দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু মহামারীর কারণে তাঁর এ প্রত্যাশা পুরণ হয় নি। তিনি বলেন, “আমি দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। আট মাস আগে আমার স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছে। খুব শীগগিরই বাবা হবো বলে মনে খুব আনন্দ কাজ করছে। কিন্তু মহামারীর কারণে এবার সম্ভবত বাড়ি ফিরে যেতে পারবো না। এজন্য পরিবারের কাছে আমি ক্ষমা চাই। তোমরা নিজেদের যত্ন নাও। তোমরা ভাল থাকলেই, আমিও ভাল থাকব।”
সুচৌ শহরে চিয়াহ্য খাদ্য কোম্পানিতে কর্মরত হু ফেই এবার বাড়ি যাবেন না। কিন্তু তিনি পরিবারের সবার জন্য বহু আগেই উপহার কিনে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি পরিবারের জন্য অনেক জিনিস কিনেছি। আমার বাচ্চা ছেলের জন্য একটি ইলেক্ট্রিক গাড়ি কিনেছি। নতুন বছরে তারা যাতে সুখে ও নিরাপদে থাকতে পারে, তাই প্রত্যাশা করি।”
তাঁরা সবাই মহামারী থেকে নিজ পরিবারকে নিরাপদ রাখতে এবার বসন্ত উতসবে পরিবারে ফিরে যাচ্ছেন না। এ অবস্থা দেখে অনেক অঞ্চলের স্থানীয় সরকার ও কোম্পানি তাঁদের জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা করেছে। যেমন: চিয়াংসু, চেচিয়াং, ফুচিয়ানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে বসন্ত উত্সব পালনের জন্য বিশেষ ভাতা দেওয়া হয়েছে। সরকারের ভাতার ভিত্তিতে বিভিন্ন কোম্পানিও তাদের পক্ষ থেকেও কিছু ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চিয়াংসু প্রদেশের চিনছেন বয়ন কোম্পানি স্থানীয়ভাবে উত্সব পালনের জন্য অন্য অঞ্চলের কর্মীদের জন্য উত্সব ভাতা, ওভারটাইম ভাতা এবং মহামারীর পর পালাক্রমিক ছুটির ব্যবস্থা নিয়েছে। কোম্পানির প্রশাসনিক পরিচালক থাও শুয়ে চিউন বলেন, “বর্তমানে অধিকাংশ কর্মী কোম্পানিতে থেকে যাবে বলে জানিয়েছে। তাই কোম্পানির পরিচালকগণ নববর্ষের রাতে তাঁদের সঙ্গে একসাথে ডিনার করবেন। তাঁদের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে নিজেদের পরিবারের সাথে কথাবার্তা বলার ব্যবস্থাও করবে আমাদের কোম্পানি।”
হুনান প্রদেশের ই ইয়াং শহরে নান ইউয়ে কুং আবাসিক এলাকার কমিউনিটি সম্পাদক ছেন রেন জেন বলেন, বাইরে উত্সব কাটানো ছেলে-মেয়েদের নিশ্চিন্ত করার জন্য আমরা কমিউনিটির বৃদ্ধদের জন্য উত্সবের রাতের ডিনারের ব্যবস্থা করবো এবং তাঁদের বাসায় খাবার পাঠিয়ে দেবো। যাতে তাঁদের ছেলে-মেয়ে কাছে না-থাকার যন্ত্রনা একটু লাগব হয়। তিনি বলেন, “আমরা ভাল বাবুর্চি আনবো তাঁদের জন্য ভালো খাবার রান্না করার জন্য। প্রত্যেক বয়স্ক মানুষের পরিবারের জন্য পাঁচ ধরনের খাবার রান্না করা হবে। তার অর্থ ‘উ জি ডেং খ্য’, অর্থাত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা ভাল থাকবে।”
মানুষের সমাবেশ কমানোর জন্য অনেক রেঁস্তোরা থেকে বাবুর্চিগণ বাসায় গিয়ে রান্না করে দিয়ে আসবেন। যেমন নানচিং তা ভাই তাং চেইন রেস্তোরার বাবুর্চি লু ছি বলেন, “ভোক্তাদের পরিবারের অবস্থা ভিন্ন, তাদের ঘরে রান্নার যন্ত্রপাতি নাও থাকতে পারে। তাছাড়া, রান্নার স্বাদ, রূপ ভাল হতে হবে এবং শুভ কামনার অর্থও প্রকাশ করতে হবে। তাই বিভিন্ন পরিবারে গিয়ে রান্না করতে আমাদের অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। আশা করি এ ব্যতিক্রম বসন্ত উত্সবে, এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষ পরিবারে থাকার স্বাদ পাবে এবং আনন্দে সময় কাটাতে পারবে।”
(ইয়াং/এনাম/ছাই)