বিশ্বব্যবস্থা সচল রাখতে অর্থনীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করে সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে অর্থনীতি। অর্থনীতি হয়ে উঠছে রাজনীতির হাতিয়ার, কূটনীতির মূলমন্ত্র আর স্বকিয়তার রক্ষাকবচ। এই অর্থনীতির নানা সমাচার নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাপ্তাহিক আয়োজন ব্যবসাপাতি।
‘ব্যবসাপাতি’র আজকের আয়োজনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, ‘সাজিদ রাজু’। দেশ-বিদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে আপনাদের জন্য থাকছে বিশেষ প্রতিবেদন। প্রতি পর্বেই থাকছে অর্থ-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত অতিথির সাক্ষাতকার।
আজ জানাবো করোনাকালে বাংলাদেশের পোশাক খাত কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, অর্থনৈতিক সংকট উত্তোরণে কি কি পদক্ষেপ নিয়ে এসব বিষয় নিয়ে। কেমন কেটেছে পোশাকখাতে কর্মরত শ্রমিক ও মধ্যমসারির কর্মীদের গেল বছর? করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও এরই মধ্যে তৈরি হওয়া সংকট কিভাবে সামাল দিচ্ছে কারখানাগুলো? করোনার মধ্যে তৈরি হওয়া অভ্যাসগুলো কি আমাদের তৈরি করতে পেরেছে আগামীর যে কোন সংকট কাটিয়ে উঠতে? এমনই নানা জিজ্ঞাসার খোঁজখবর নিয়ে থাকবে বিশেষ প্রতিবেদন। জানাবো বিশ্বের নানা প্রান্তের বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর, তুলে ধরবো অর্থনীতির নানা সমীকরণ।
### চীন-ইইউ বিনিয়োগ চুক্তি ‘ভুল’ নয় – জার্মান মন্ত্রী
চীনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিনিয়োগ চুক্তি কোন ‘ভুল’ নয় বরং এর ফলে বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (আইএমএফ) এর ডেভোস এজেন্ডার ভার্চুয়াল বৈঠকে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন জার্মান জ্বালানী ও অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী পিটার অল্টমায়ার।
উন্মুক্ত বাজার ও বহুপক্ষবাদ চর্চার ওপর জোর দিয়ে পিটার অল্টমেয়ার বলেন, করোনায় বিশ্ব সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আছে এবং দরিদ্র দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
৭ বছরের দীর্ঘ আলোচনা শেষে গেল বছরের ডিসেম্বরে দ্বিপক্ষীয় এ বিনিয়োগ চুক্তিতে সম্মত হয় চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ চুক্তির ফলে ইউরোপ ও চীনের বিনিয়োগকারীরা দুই অঞ্চলে বিশাল বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে।
করোনা মহামারি মোকাবিলা ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চলতি সপ্তাহে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম আয়োজিত দাভোস এজেন্ডার ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন বিশ্বের প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী, সরকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ ২৫ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। >
বিশেষ প্রতিবেদন:
পোশাক খাতের ঘুরে দাঁড়ানো নির্ভর করছে মধ্যম সারির কারখানাগুলোর টিকে থাকার ওপর
গেল ৬ মাস ধরে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে গড়ে ২৫৬ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে, যা গেল বছরের প্রতি মাসের গড়েরও বেশি। যদিও গেল বছরের তুলনায় এখাতে ব্যবসা কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এ চিত্রের মূল্যায়নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে তৈরি পোশাক খাত। কিন্তু কেমন চলছে এখাতের ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত নয়, আকারে ক্ষুদ্র কিংবা মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছে। তারা মনে করেন, পোশাক খাতের সার্বিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নির্ভর করছে এসব উদীয়মান কারখানার ঘুরে দাঁড়ানোর ওপরই। আজহার লিমনের রিপোর্ট।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজার বস্তি। রিক্সাওয়ালা, হকার, গৃহকর্মীর মত নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে এ বস্তির বাসিন্দা আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারাখানার তৈরি পোশাক শ্রমিক।
এ বস্তিরই বাসিন্দা এ বৃদ্ধার অভিজ্ঞতা, করোনা সংকটে বিভিন্ন কারখানায় কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বস্তি ছাড়ার হিড়িক পড়ে। শুরু হয় তৈরি পোশাককর্মীসহ খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের জীবন।
করোনা সংকটে কী পরিমাণ পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন কিংবা পেশা পরিবর্তন করেছেন? তাদের বর্তমান অবস্থাই বা কি? এ নিয়ে পরিপূর্ণ কোন পরিসংখ্যান নেই সরকার, খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠন কিংবা বেসরকারি সংগঠনগুলোর হাতেও। তবে বেসরকারি কয়েকটি সংস্থা শ্রমিক পরিস্থিতির ওপর জরিপ করেছে। তাতে দেখা গেছে কোভিড সংকটে চাকরি হারিয়েছেন কম করে হলেও সাড়ে ৩ লাখ পোশাক শ্রমিক।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ –সিপিডি’র এক জরিপ বলছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গড়ে প্রতিটি কারখানার যে পরিমাণ কর্মী নিয়োজিত ছিলো, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতি কারখানায় কমপক্ষে ১১ শতাংশ শ্রমিক কম ছিলো। চাকরি হারানো পোশাক শ্রমিকদের মোটামুটি ৭০ শতাংশকে বেতন দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি সুযোগ সুবিধাসহ শ্রমিক ছাটাইয়ের নিয়ম মানা হয়েছে ৫ শতাংশেরও কম কারখানায়। পোশাক শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাজমা আক্তার। তিনি মনে করেন, কারখানা মালিকদের এতো এতো সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরও করোনা সংকটে সবচেয়ে বেশি অধিকারবঞ্চিত হয়েছেন পোশাক শ্রমিকরা।
নাজমা আক্তার, সভাপতি, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি’ও বলছে, শ্রমিকদের বেতনের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হলেও সেখানে সুশাসন নিশ্চিত হয়নি। গেল বছরের ডিসেম্বরে সংস্থাটি প্রকাশিত ‘তৈরি পোশাক খাতে করোনাভাইরাস উদ্ভূত সংকট : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে এসেছে সংকট উত্তরণে নানা সুবিধার কথা বলা হলেও তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৪২ শতাংশ শ্রমিক প্রণোদনার অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু সরকারি প্যাকেজ, বিদেশি ক্রেতা ও দাতাগোষ্ঠীর দেয়া প্রায় ৬২ কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা ও আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কতটা সমতা রক্ষা করা হয়েছে? বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, প্রণোদনা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
মোহাম্মদ হাতেম, সহ-সভাপতি, বিকেএমইএ
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সবশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গেল ডিসেম্বরেই বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ২৪৯ দশমিক আট ছয় কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ কম। গেল ৬ মাসের হিসেবও বলছে, ২০১৯ সালে প্রতিমাসের গড় রফতানির চেয়েও গেল ৬ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানির গড় পরিমাণ বেশি। তাহলে এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প কি শুধু বৃহৎ কারখানাগুলোর জন্য? সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখনও অর্ধেকের বেশি কারাখানা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
এই বিশ্লেষক মনে করেন, পোশাক রপ্তানির অন্যতম বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন, ভ্যাকসিন আসার মত খবরে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংকট আগের মত গভীর হবে না। তবে ড. মোস্তাফিজের মত, করোনা সংকটে তৈরি পোশাক খাতের ভঙ্গুরতা স্পষ্টভাবে ধরা দিয়েছে। সামনের যে কোন ধাক্কা সামলাতে অল্প কিছু ক্রেতার ওপর নির্ভরশীলতা কমানোসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ঝুঁকি প্রশমন ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে হবে।
বিশেষ প্রতিবেদন: ‘করোনা কষ্টই দেয়নি, দিয়েছে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের বিরল সুযোগ’
লকডাউনে ঘরে থাকাসহ চাকরি হারানো, নানা সংকটে পড়তে হয়েছে এ খাতের প্রাণ শ্রমিকদের। তাদের জীবনে কতোটা প্রভাব ফেলেছে করোনা? করোনার অভিঘাত কেবলই কষ্ট দিয়েছে নাকি দিয়েছে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের বিরল সুযোগ? পোশাক কারখানার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীর সঙ্গে কথা বলে তাদের করোনাকালীন জীবনের গল্প শোনাচ্ছেন হাবিবুর রহমান অভি।
নাজমা সুলতানা, কাজ করেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায়। জীবিকার তাগিদে গত ১৩ বছর ধরে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে রয়েছেন এ শহরে। দীর্ঘ এ সময়ে নানা রকম প্রতিকূলতা আর অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। তবে গতবছরের মার্চে দেশে করোনা আসার পর ভিন্ন রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে নাজমাকে। আশঙ্কা নিয়েই যোগ দিয়েছিলেন কাজে।
তিনি বলেন, করোনার কালে খুব ভয় পেয়েছিলেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানায় যোগ দিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, সতর্ক আগেও ছিলেন, এখনো আছেন।
নাজমার অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যায় পোশাক খাতের লাখো শ্রমিকের গল্প। তারা বলছেন করোনা মহামারীর সময় তাদের এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের যেকোন বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজে লাগবে।
প্রকৃতির কাছে মানুষ কতোটা অসহায় তা করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে জানিয়ে আরেকটি কারখানার শ্রমিক আমজাদ হোসেন বলছিলেন, এ দুর্যোগ মোকাবিলার অভিজ্ঞতাই সামনের দিনের পথচলার হাতিয়ার হবে।
নওশাদ হোসেন, একটি কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মী। তিনি বলছিলেন, করোনাকালে অনেক সহকর্মীকে চাকরি হারাতে দেখেছেন। তিনি নিজেও শুরুর দিকে বেকার জীবন কাটিয়েছেন কয়েক মাস। পরে একটি কারখানায় কাজ পান। তার জীবনের সবচেয়ে দুঃসময় গেছে ২০২০ সালে জানিয়ে তিনি বলেন, নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য এক দুঃসময় এ করোনা কাল। তবে এ অভিশাপ থেকে খুব দ্রুতই মুক্তি মিলবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
সব সংকট কেটে গিয়ে তাদের জীবনেও আসবে সাফল্যের সোনালী রোদ, এমনটা প্রত্যাশা পোশাক শ্রমিকদের।
## স্বাক্ষাতকার: গেল বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর আশঙ্কার মধ্যে পড়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জনের মাধ্যম পোশাক খাত। কেমন গেল এ খাতের করোনাকাল? কতোটা চ্যালেঞ্জিং ছিলো এ খাতের পথচলা? বিদেশী ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ার পরও কি করে টিকে এ খাতের ছোট-মাঝারি কারখানাগুলো? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে চীন আন্তর্জাতিক বেতার কথা বলেছে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এলডিসি গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে।
### চীনের দারিদ্র্য বিমোচনের গল্প:
দারিদ্র্য বিমোচনে চীন সরকারের নেয়া নানা প্রকল্প নজর কেড়েছে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের। তারা বলছেন, দশকজুড়ে নিজ দেশে যে কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে চীন, তা হতে পারে যে কোন দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অনুকরণীয়। সাজিদ রাজু’র প্রতিবেদন।
চীনের সাংহাই প্রদেশের গ্রামগুলোতে ঢুকলেই চোখে পড়বে স্ট্রবেরির চাষ। একের পর এক সারি সারি সাদা রঙের ছাউনিতে ঘেরা গ্রিনহাউজ নজর কাড়বে যে কারো। আর তাতেই সারা দিন কর্মব্যস্ত কৃষকের দল।
মৌসুমে পাকা স্ট্রবেরি তুলতে ব্যস্ত থাকেন তারা। এরপর তা প্যাকেট করে বাজারে পৌছানোর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় অত্যন্ত যত্নের সাথে। আর এই কর্মযজ্ঞেই ভাগ্য খুলেছে গ্রামের অসংখ্য মানুষের।
একইরকম ব্যস্ততা চোখে পড়বে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রদেশ গুইচৌ এর বিভিন্ন এলাকায়। সারি সারি চা গাছের কুড়ি ও পাতা তুলতে ব্যস্ত কর্মীদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। মূলত সরকারের হাতে নেয়া দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরিকল্পনা করেই এমন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে চীনের গ্রামাঞ্চল জুড়ে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরাও স্বীকার করছেন, এক সময়ের দারিদ্র্যক্লিষ্ট চীন আর নেই। কয়েক বছরের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় ভেতর থেকে বদলে যাচ্ছে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্নয়নশীল দেশ চীন, শুরু থেকেই দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ২০২০ সালেই ১০০ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য মুক্ত করেছে। নিজ দেশে লক্ষ্য অর্জন করে এখন চীন হাত বাড়িয়েছে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর দারিদ্র্য বিমোচনে।
এক সময় চীনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন মেক্সিকোর লি জিওয়েন। চীনের এসব পদক্ষেপ কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ হয়েছে তার। তিনি বলছিলেন, দারিদ্র বিমোচনে চীনের কর্মযজ্ঞ পাথেয় হতে পারে যে কোন দরিদ্র দেশের জন্য।
লি জিওয়েন বলেন, ‘’সারা বিশ্বের মতো চীনও জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে কঠিন সময় পার করছে। কিন্তু অতিদারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে চীন কখনো থামেনি। সি চিনপিং এর নেতৃত্বে অসাধ্য সাধন করেছে চীন। দারিদ্র্য বিমোচনে চীন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা পুরো বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়।“
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ গানসুতে ঢুকলে দেখা যায় একরের পর একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে গরু, ভেড়া ও ছাগলের খামার। নাগরিকদের উপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সুযোগ দেয়া হয়েছে কর্মসংস্থানের।
আফ্রিকান ইউনিয়নের গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষি বিষয়ক কমিশনার জোসেফা লিওনেল জানান, সময় এসেছে আফ্রিকার দেশগুলোত দারিদ্র্য দূর করার অব্যর্থ কৌশল নিতে পারে চীনের কাছ থেকে।
জোসেফা লিওনেল মনে করেন, দারিদ্র্য বিমোচনে নেয়া চীনের পদক্ষেপ সমন্বিত। এরই মধ্যে তারা দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগে যেসব জায়গা দারিদ্র্যপীড়িত ছিলো এখন সেখানকার বেশ উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি, অবকাঠামো আর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের মিশেলে একটি উদাহরণ তৈরি হয়েছে চীনে। তিনি বিশ্বাস করেন আফ্রিকান ইউনিয়নের দেশগুলোর জন্য চীনের উদাহরণ কাজে লাগানোর সময় হয়েছে।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফাব্রিজিও হকশিল্ড জানান, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একইভাবে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব।
ফাব্রিজিও হকশিল্ডের মতে, চীন শুরু থেকেই মানব উন্নয়ন সূচকে ভালো করছে। এখন তারা দারিদ্র্য দূরীকরণের অভিজ্ঞতা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গেও ভাগাভাগি করছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, চীন এখানেও ভালো কাজ করছে।
চীনের একেক একেক এলাকায় স্থানীয় চাহিদা ও উৎপাদনের বিষয় মাথায় রেখে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় খামার প্রতিষ্ঠা করে বেকারত্ব দূর করার প্রক্রিয়া এখনো চলমান। কূটনীতিকরা বলছেন, দেশে দেশে এই ধারনা বাস্তবায়ন করা গেলে দারিদ্র্য দূর করে অভাবমুক্ত সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে সুফল মিলবে দ্রুত।
এরই মধ্য দিয়ে আয়োজনের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আমরা। আপনার পরামর্শ আমাদের সমৃদ্ধ করবে। আপনার যে কোন পরামর্শ পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। চীন আন্তর্জাতিক বেতার –সিআরআই বাংলা’র ফেসবুক পাতা ও ইউটিউব লিঙ্কে গিয়ে আপনার মন্তব্য করতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে আবারো কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সুস্থ্য থাকুন, শুভকামনা সবাইকে।