দাভোস এজেন্ডার অনলাইন সম্মেলন মহামারী মোকাবিলায় আস্থা যুগিয়েছে
2021-01-28 16:23:17

 

জানুয়ারি ২৭: জেনিভার সদর দফতরে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘দাভোস এজেন্ডার’ অনলাইন সম্মেলন শুরু হয় ২৫ জানুয়ারি। চলবে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। অনলাইনে শুরু হওয়া এই এজেন্ডায় ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে গত ২৫ জানুয়ারি ভাষণ দেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

প্রতিবছরের জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এ বছরের নির্ধারিত শীর্ষ সম্মেলন ১৩ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঠিক হয়েছে। তবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে একটি ‘দাভোস এজেন্ডা অনলাইন সম্মেলন’ আয়োজের সুযোগ হাত ছাড়া করেনি। এর উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে মহামারী মোকাবিলায় আলোচনা সম্ভব করা।  

১৯ জানুযারি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ফোরামের প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক ঝুঁকি রিপোর্ট, ২০২১’-তে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারী ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান বাড়িয়েছে, সামাজিক বৈষম্য বাড়িয়েছে, যা আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের অর্থনৈতিক বিকাশের পথে বাধার সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তীব্রতর হবে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। গেল বছর মহামারীর পাশাপাশি বিশ্বের একতরফাবাদ ও বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদের আক্রমণও বিশ্বকে সইতে হয়েছে।

চলতি মহামারীকে শতাব্দীর জনস্বাস্থ্য সংকট হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ ইতোমধ্যে মারা গেছেন। পাশাপাশি, ২০২০ সালের বৈশ্বিক অর্থনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ মন্দাবস্থায় পড়েছে। ফলে  অনেক দেশের জিডিপি সংকুচিত হয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা অনুমান করছে, মহামারীসৃষ্ট অর্থনৈতিক ও শ্রমসংকটের ফলে বিশ্বব্যাপী বেকার মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের চেয়ে অনেক বেশি। মুদ্রা তহবিলের প্রধান বলেছেন, ২০২১ সালেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকবে।

মহামারী মানবজাতিরকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, মহামারীর মতো বিপর্যয় জাতি, আভিজাত্য, ধনী, গরিব বিবেচনা করে না, সবাইকেই আক্রমণ করে। এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হলে চাই উইন-উইন সহযোগিতা।

চার বছর আগে দাভোস বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর ভাষণে প্রথমবারের মতো বলেছিলেন যে, ‘মানবজাতি ইতোমধ্যেই এক অভিন্ন স্বার্থ সংক্রান্ত কমিউনিটিতে পরিণত হয়েছে’। সবার স্বার্থ পরস্পর নির্ভরশীল। যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানবজাতির সামনে সেটি ছিল সি চিন পিংয়ের একটি ভালো প্রস্তাব। চলমান পরিস্থিতিতে সি চিন পিংয়ের সেই প্রস্তাব প্রাসঙ্গিক।

১৮ জানুয়ারি, ক্লাউস সোয়াব অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘২০২১ সাল অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। এটি মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বছর’। বিশ্বকে এ বছর মহামারীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি, বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারেও কাজ করতে হবে। গত শতাব্দীর ৩০-এর দশকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট বলেছিলেন, ‘আমাদেরকে শুধু ভয় পাওয়াকেই ভয় করতে হবে।’ বর্তমানে  মানবজাতি অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে ভীত। এ অবস্থায় মতভেদ দূর করতে হবে, মতৈক্য গড়ে তুলতে হবে, বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, এবং ‘মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলার’ দৃঢ়প্রতিজ্ঞা প্রদর্শন করতে হবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)