২০২০ সালে সারা পৃথীবি অভূতপূর্ব দুর্যোগ ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল, কিন্তু চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যিক আমদানী-রপ্তানী এসবকে টপকে ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে।
গত ১৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসন প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিদায়ী বছরে চীনা পণ্যের বাণিজ্যিক আমদানী-রপ্তানীর মোট পরিমাণ ছিল ৩২.১৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ১.৯শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রপ্তানী বেড়েছে ৪শতাংশ, যা মোট ১৭.৯৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। অন্যদিকেম, সেবছর চীনের আমদানীর পরিমাণ কমেছে ০.৭ শতাংশ বা ১৪.২৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। তাই বছরান্তে দেশটির বাণিজ্যিক উদ্বৃত্ত ২৭.৪শতাংশ বা ৩.৭ট্রিলিয়ন ইউয়ান বৃদ্ধি পায়।
চীন গত বছর অভ্যন্তরীণ সরবরাহকে প্রাধান্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দ্বৈত সরবরাহের পারস্পরিক সহায়তার নতুন উন্নয়ন কাঠামো দ্রুত গড়ে তোলে। পাশাপাশি উচ্চমানের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ তৎপরতা অব্যাহতভাবে সামনে এগিয়ে নেয়। বর্তমানে নতুন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন প্রাধান্যও বজায় রাখছে চীন।
রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসনের মুখপাত্র লি খুই ওয়েন বলেন, ২০২১ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যিক আমদানী-রপ্তানীর প্রবৃদ্ধি বজায় থাকার পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যের উচ্চমানের উন্নয়নের নতুন ফলাফল অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২০ সালে চীন মালামাল বাণিজ্যিক বৃদ্ধি হওয়া বিশ্বের একমাত্র প্রধান অর্থনৈতিক গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যিক আমদানী-রপ্তানী স্পষ্টভাবে অভিষ্ট লক্ষ্য থেকে ভাল ফল লাভ করেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যিক মাত্রা ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এটা পুরোপুরিভাবে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের শক্তিশালী সহনশীলতা ও বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা-ক্ষমতার প্রতিফলনের প্রমাণ রেখেছে। বলা যায়, স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়নের পাশাপাশি গুণগতমানের উন্নয়নও বাস্তবায়িত হয়েছে।
‘নিয়মিত বৃদ্ধি’ প্রধানত ৩টি ক্ষেত্রের হয়েছে। যেমন: এক, আমদানী-রপ্তানীর মাত্রা ও আন্তর্জাতিক বাজারে অংশীদারিত্ব আবারও ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে; দুই, মহামারী প্রতিরোধ সরঞ্জাম ও ‘গার্হস্থ্য অর্থনীতি’ পণ্যের রপ্তানী দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে; তিন, চীনের অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজার আমদানী সম্প্রসারণ করার জন্য শক্তিশালী সমর্থন দিয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কাজ শক্তিশালী ও কার্যকর হওয়ার কারণে কাজ-কর্ম ও উত্পাদন পুনরুদ্ধার তৎপরতা স্থিতিশীলভাবে চলছে। ২০২০ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য প্রথম প্রান্তিকে প্রচণ্ড ধাক্কা সামলে উঠে দ্রুততার সাথে স্থিতিশীলতায় ফিরে এসেছে। এপ্রিল মাসে রপ্তানী হ্রাস থেকে প্রবৃদ্ধির পথে হাটে। পরে একনাগাড়ে ৯ মাস ধরে প্রবৃদ্ধির প্রবণতা বজায় রাখে। বিশ্ব বাণিজ্যের বিপুল সঙ্কুচণের পরিস্থিতিতে সারা বছরই চীনের আমদানী-রপ্তানীর মোট পরিমাণ ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের অংশীদারিত্বেও ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ফলে মালামাল বাণিজ্যে প্রথম রাষ্ট্রের অবস্থান আরো সংহত করেছে চীন। একই সময় চীনের বিশাল বাজারের প্রাধান্য আরও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমদানী চাহিদা স্থিতিশীল থাকে। ২০২০ সালে চীনের অপরিশোধিত তেলের মতো সংস্থান-ভিত্তিক পণ্যের আমদানীর পরিমাণ ৭.৩ শতাংশ বেড়েছে। খাদ্য ও মাংসসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের আমদানীর পরিমাণ পৃথকভাবে ২৮ ও ৬০.৪ শতাংশ বেড়েছে।
এতে বৈদেশিক বাণিজ্যিক কাঠামো অধিকতরভাবে সুবিন্যস্ত হওয়া, উন্নয়ন চালিকাশক্তি অধিকতরভাবে বৃদ্ধি, এবং উচ্চমানের উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্মের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা স্পষ্ট। এসব ‘গুণগত মান উন্নত’ হওয়ার প্রতিফলন। সাধারণ বাণিজ্যিক আমদানী-রপ্তানীর অনুপাত উন্নত হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের আঞ্চলিক উন্নয়ন আরও ভারসাম্যমূলক হয়েছে। মধ্য ও পশ্চিম অঞ্চল, ও পূর্বাঞ্চলের শিল্প রূপান্তর বজায় রাখায় নতুন অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া, সারা বছর বহুমুখী শুল্কমুক্ত এলাকার আমদানী-রপ্তানীর পরিমাণ ১৭.৪ শতাংশ বেড়েছে। অবাধ বাণিজ্যের পরীক্ষামূলক অঞ্চলে আমদানী-রপ্তানীর বৃদ্ধি ছিল ১০.৭ শতাংশ। হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দরে শুল্কমুক্ত পণ্যের আমদানী-রপ্তানীর বৃদ্ধি ছিল ৮০.৫ শতাংশ।
২০২০ সালে চীন-ইউরোপ রেলপথে ১২জার ৪০০টি ট্রেন ও ১১লাখ ৩৫হাজার কন্টেইনার যাতায়াত করেছে। যা বিশ্ব শিল্প চেইন ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
নববর্ষের ছুটিতে নান চিং বিমানবন্দরে আন্তঃসীমান্ত ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্যের তত্ত্বাবধান স্থল খুবই ব্যস্ত ছিল। নান চিং শুল্কের তদারকিতে নববর্ষের ৩দিনের ছুটিতে মোট ৩৫হাজার টেক্সটাইল ও পোশাক, নিত্য-ব্যবহার্য্যসহ বিভিন্ন পণ্য সুষ্ঠুভাবে শুল্ক ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে।
ওই সময়ে শুধু নান চিন নয়, চীনের হাংচৌ, ছিংতাও ও কুয়াংচৌসহ বিভিন্ন শহরের বন্দর আন্তঃসীমান্ত ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্যের রপ্তানী ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছিল। বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন ব্যবসায়িক ধরনগুলোর অন্যতম হিসেবে চীনের আন্তঃসীমান্ত ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্যের আবির্ভাব হয়েছে। এটি চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিনত হয়েছে।
মহামারীর প্রভাবে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সংখ্যা অনেক কমে যায়। চীন-ইউরোপ ট্রেন উন্নয়নকে সমর্থন দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসন যথাসময়ে ১০টি ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে চীন-ইউরোপ ট্রেনের মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্য ও ডাকসহ বিভিন্ন পরিবহন শিল্প চালানো। মহামারীর পর শুল্ক প্রশাসন ডাক বিভাগকে বিদেশে যাওয়ার অস্থায়ী ডাক রুট শুরু করতে সমর্থন দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে উত্পাদন চেইন ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা সুনিশ্চিত করেছে। পরবর্তীতে শুল্ক প্রশাসন অব্যাহতভাবে তত্ত্বাবধান জোরালো করা এবং সেবা সুবিন্যস্ত করার মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্যের উচ্চমানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে থাকবে।
(প্রেমা/এনাম)