২০২০ সালে বিশ্বে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ ৪২ শতাংশ হ্রাস; বেড়েছে চীনে
2021-01-25 12:57:21

২০২০ সালে বিশ্বে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ ৪২ শতাংশ হ্রাস; বেড়েছে চীনে_fororder_0125yang3

জানুয়ারি ২৫: জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন গতকাল (রোববার) রাতে ‘বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রবণতা তত্ত্বাবধান প্রতিবেদন’ প্রকাশ করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বৈশ্বিক বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ২০২১ সালেও এ হ্রাসের প্রবণতা বজায় থাকবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে চীনে বিদেশি বিনিয়োগ প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি হয়েছে। ফলে এ বছর চীন বিশ্বের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণকারী দেশে পরিণত হয়। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনে বিনিয়োগ ও কম্পানি বিভাগের পরিচালক চান শিয়াও নিং এক সাক্ষাত্কারে বিস্তারিত আলোচনা করেন।  

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বৈশ্বিক বিদেশি বিনিয়োগ ২০১৯ সালের ১.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ৪২ শতাংশ কমে ৮৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে আসে, যা  ২০০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময়ের তুলনায়ও ৩০ শতাংশ কম। এ প্রসঙ্গে চান শিয়াও নিং বলেন, উন্নত দেশগুলোতে সরাসরি বিনিয়োগ ৬৯ শতাংশ কমে ২২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, যা গত ২৫ বছরে সর্বনিম্ন। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরাসরি বিনিয়োগ ১২ শতাংশ কমে ৬১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, যা বৈশ্বিক সরাসরি বিনিয়োগের ৭২ শতাংশ। এটি একটি নতুন রেকর্ড। ব্রিটেন, ইতালি, রাশিয়া, জার্মানি, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে, কিন্তু চীন ও ভারতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ ৪৯ শতাংশ কমে ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়। তা ছাড়া, গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগ এবং আন্তঃদেশীয় একীকরণ ও অধিগ্রহণও অনেক কমে গেছে। ব্রিটেন, জার্মানি ও জাপানে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে। ব্রিটেনে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ ২০১৯ সালের ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে শূন্যের নিচে চলে গেছে। মহামারী ও ব্রেক্সিট এর জন্য মূলত দায়ী।  

২০২০ সালে চীন সবার আগে মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। মহামারীর প্রেক্ষাপটে যখন বিশ্বে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় অর্ধেক হ্রাস পেয়েছে, তখন চীনে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। এতোদিন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল শীর্ষে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে চীন শীর্ষস্থানে উঠে আসে। এ বছর চীনে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ গত বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা বিশ্বের মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ১৯ শতাংশ।

মহামারী চলাকালেও আন্তর্জাতিক কম্পানিগুলো চীনে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। চীনের উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়াও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হয়েছে। চীনা সরকার বিনিয়োগ-পরিবেশ আরও সুষ্ঠু ও সুবিধাজনক করার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। যার ফল হাতেনাতে পাওয়া গেছে।

বৈশ্বিক বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতির ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। এ সম্পর্কে চান শিয়াও নিং বলেন, বৈশ্বিক বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাসের ধারা ২০২১ সালের শেষার্ধ পর্যন্ত বজায় থাকবে। এক্ষেত্রে ২০২২ সালে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে  আশা করা যায়। মহামারীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ এবং টিকা খাতের অনশ্চিয়তার ফলে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেবে। ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিও এর নেতিবাচক প্রভাব অনুভব করে যাবে। মোদ্দাকথা, বৈশ্বিক সরাসরি বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়ার পর তা চট করে আবার বাড়তে শুরু করবে না। বরং, হ্রাসের প্রবণতা কিছুকাল থাকবে। তারপর, উপযুক্ত পরিবেশে তা আবার বাড়তে শুরু করবে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)