উহানের মানুষ তাঁদের শহরকে মহামারির পর আরও বেশি ভালবাসেন
2021-01-24 18:32:54

ইসরাইলের টেলিভিশন ‘চ্যানেল ১২’ এর আমন্ত্রণে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)’র কয়েকজন সাংবাদিক সম্প্রতি উহান সফর করেন। তখন তাঁরা শহরটিতে বসবাসকারী অনেক মিডিয়াকর্মী, হুয়া নান সীফুড বাজারের ব্যবসায়ী এবং বারের মালিকসহ সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সাংবাদিক দলটি উহান বাসীদের নিকট জানতে চেয়েছিলেন যে, গত এক বছর তাঁরা কীভাবে কাটিয়েছেন?

 

সিয়াও লিন একজন মিড়িয়াকর্মী। মহামারি চলাকালে তিনি ‘উহানের ডায়েরি’ নামে ধারাবাহিক ভ্লগ তৈরি করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর অ্যাকাউন্টের ভক্তের সংখ্যা ৫০লাখ। তাঁর তৈরি এ ভ্লগটি ৬কোটি বারের মতো দেখা হয়েছে।

 

২০২১ সালের শুরুতে সিয়াও লিন এক সাক্ষাত্কারে বলেন, “যখন মহামারি খুব গুরুতর, তখন ব্যস্ত উহান শহর হঠাত্ করে খালি হয়ে যায়। রাস্তায় কোন গাড়ির দেখা মিলতো না। মহামারি আমার জীবনযাপনের উপরও প্রভাব ফেলে। গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে আমার বড় বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এখন আমার বড় বোন মা হয়েছেন। মহামারির কারণে এখনও আমাদের দেখা হয় নি।”

 

সিয়াও লিন মহামারিতে শুধু উহানের অবস্থা রেকর্ড করেছেন, তা কিন্তু নয়, তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি গাড়ি দিয়ে চিকিত্সক ও নার্সদের হাসপাতাল ও বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। কোভিড-১৯ রোগীদেরকে ওষুধ পৌঁছে দিয়েছেন।

 

তিনি বলেন, “যখন আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি, তখন আমি দুবারের মতো মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে অনুভব করেছিলাম। একবার আমি হাসপাতালে আমার মা’র একজন বন্ধুকে নিয়ে আসি। তিনি একজন কোভিড-১৯ রোগী, তবে তখনও শনাক্ত হন নি। আরেকবার আমি একজন কোভিড-১৯ রোগীকে ওষুধ পোঁছে  দিয়েছি। একজন পুরুষ আমার কাছে ওষুধ নিয়ে আসেন। আমি উনাকে চিৎকার করে কেঁদে উঠতে দেখি। কারণ কিছুক্ষণ আগে তিনি তাঁর বাবার মুত্যুর খবর পেয়েছেন।”

 

সিয়াও লি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, চিত্রের নিজস্ব শক্তি আছে এবং মানুষকে সান্ত্ব করতে পারে। আমি মাহামরিতে কিছু চিত্র, কিছু মানুষ ও কিছু গল্প ক্যামেরার মাধ্যমে ধারন করেছি। লোকজন আমার ভ্লগ দেখে মনে করেন, অনেক মানুষ এ শহরকে রক্ষা করেছে। উহান কঠিন অবস্থায় ছিল, তবে আমরা সাহস নিয়ে এ কষ্টকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।”

 

হুয়া নান সীফুড বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, “মহামারি শুরু হওয়ার পর আমরা হুয়া নান সীফুড বাজার থেকে দশ কিলোমিটার দূরে অন্য একটি বাজারে স্থানান্তরিত হয়। আমার মতো আরও প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ হুয়া নান সীফুড বাজারের ব্যবসায়ি এখানে এসেছেন। বিদেশের তথ্যমাধ্যম বলছে যে, হুয়া নান সীফুড বাজারে অনেক অবৈধ পণ্য আছে। যেমন: বাদুর ইত্যাদি। আমি বলতে চাই, আমাদের এ বাজারটি  খুবই পরিষ্কার এবং আমি কখনও বাদুরসহ অন্য কোন অনাকাংক্ষিত বা অবৈধ পণ্য দেখি নি। ২০২০ সালে আমার ব্যবসা আগের তুলনায় ৫০শতাংশ কম হয়েছে। আমি হিমায়িত পণ্যের ব্যবসা করি, তাই সব পণ্যের কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে হয়। গত মাসে আমি টিকা নিয়েছি এবং আশা করি সারা পৃথিবীর মহামারি খুব দ্রুত শেষ হবে। দেখুন, উহানে মহামারি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং এ শহর এখন সারা চীনে সবচেয়ে নিরাপদ একটি শহরে পরিণত হয়েছে বলে আমি মনে করি।”

 

উ ই থেং ও ওয়াং সিয়াও ইউয়ু উভয়ে একসাথে উহানে  একটি বার খুলেছেন। উ ই থেং বলেন, “আমি উহানে গত ১১বছর ধরে বাস করছি। শুরুতে আমি নিজেকে বহিরাগত মানুষ হিসেবে মনে করতাম  এবং উহান থেকে পালানোর ভাবনা ছিল আমার। তবে, এখন আমি নিজেকে উহান মানুষ হিসেবে মনে করি।  উহান এমন একটি শহর যা নতুন জিনিষগুলোকে দ্রুত গ্রহণ করতে পারে এবং সবাই এখানে উন্নয়নের সুযোগ ও সম্ভবনা খুঁজে পায়।(শিশির/এনাম/রুবি)