নতুন স্বপ্নের নাম ‘ভোলা সেতু’
2021-01-24 20:00:24

অবকাঠামো উন্নয়ন একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক। বিষয়টি বেশ ভালভাবেই উপলব্ধি করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকা সরকার। তাই অবকাঠামো নির্মাণে একের পর এক মাইলফলক ছুঁয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আগামীবছরই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প – পদ্মাসেতু।

নতুন স্বপ্নের নাম ‘ভোলা সেতু’_fororder_qiao

দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়নের অঙ্গীকার থেকে সরে এলেও, এর বাস্তবায়ন থেকে সরে যায় নি সরকার। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সেতু। অবশ্য এ সেতুর ওপর দিয়ে যে রেলপথ তৈরি হচ্ছে, সেটি অর্থায়ন করছে চীন সরকার। পদ্মাসেতু প্রকল্পের পাশাপাশি নির্মাণাধীন রয়েছে অর্থের বিচারে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প - রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র । এছাড়াও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্প, নদীর নিচ দিয়ে প্রথম সুড়ঙ্গপথ – কর্ণফুলি টানেলসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ।  

 

এরই ধারাবাহিকতায় সরকার এবার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের। তেঁতুলিয়া ও কালাবাদর নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত হবে ‘ভোলা সেতু’ যা সংযুক্ত করবে বরিশালকে। এটির দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১০ কিলোমিটার, যা পদ্মাসেতুর চেয়েও প্রায় ৪ কিলোমিটার বেশি দীর্ঘ। সরকার মনে করছে, ভোলা সেতু নির্মাণ হলে দেশের অর্থনীতিতে আসবে নতুন গতি। দেশজ উত্পাদনে প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে আরও অন্তত ১ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সেতুর অবকাঠামো তৈরী হলে এ অঞ্চলের মাথাপিছু আয় বাড়বে আর নিশ্চিত হবে শিক্ষা ও চিকিত্সার সুযোগও।

 

ভোলা সেতু নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। আর বাকি অর্থ বিদেশি সহায়তা হিসেবে পাওয়ার আশা করছে সরকার। সেতুটি নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে চারটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের একটি যৌথ দল। তাদের প্রতিবেদন বলছে, এ সেতু নির্মাণে প্রযুক্তিগত কোনো বাধা নেই। সেতুটি এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে, প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞ দলের। যত দ্রুত সম্ভব সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

 

বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণে এখন সবচেয়ে বড় অংশীদার চীন। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার আশা করছে, ভোলা সেতু নির্মাণে আর্থিক সহায়তা করবে চীনের নেতৃত্বে থাকা এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক। এ নিয়ে ব্যাংকটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে সরকার এবং মিলেছে ইতিবাচক সাড়াও।

 

ভোলা সেতুর প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব যাচাইয়ের পর এটি নির্মাণে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ভোলা অংশে ভেদুরিয়া ফেরিঘাট থেকে বরিশাল অংশের লাহারঘাট ফেরিঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ হবে এ সেতু। সেতুটি শ্রীপুর চরের প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত যাবে উঁচু সড়কের আকারে আর মূল সেতু হবে ৮ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। সংযোগ সেতু প্রায় ১ কিলোমিটার আর সংযোগ সড়ক হবে দুই কিলোমিটার। এর জন্য প্রায় ৫০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। প্রথম দিকে এ সেতু দিয়ে পার হবে দিনে প্রায় ৭ হাজার যানবহন।  পর্যায়ক্রমে যানবহন চলাচলের সংখ্যা হবে ৬০ হাজারের কাছাকাছি।

তেঁতুলিয়া ও কালাবাদর নদী বাংলাদেশের মূল-ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে দ্বীপজেলা ভোলাকে। শুধু একটি সেতুর অভাবে জেলাটির সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই দেশের অন্য অংশের। এ বিচ্ছিন্নতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রেখেছে ভোলাকে। নদী দুটির ওপর সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ হলে ভোলাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে আর উন্নত হবে জেলার আর্থসামাজিক অবস্থাও।

 

 

 

জানুয়ারি ২৪, চীন আন্তর্জাতিক বেতার