মহামারির সময় শহরকে রক্ষাকারী সাধারণ মানুষের গল্প
2021-01-22 16:37:24

মহামারির সময় শহরকে রক্ষাকারী সাধারণ মানুষের গল্প_fororder_qi1

 

সম্প্রতি চীনের হ্য পেই প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী সি চিয়া চুয়াং-এ আবারও নভেল করোনাভাইরাসের মহামারি দেখা দেয়। তা প্রতিরোধ করার জন্য সেখানে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কমিউনিটি ও আবাসিক এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নে‌ওয়া হয়, গণ পরিবহনব্যবস্থা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়, শপিং মল ও সুপারমার্কেটও বন্ধ হয়ে যায়...তবে জনগণের জীবন তো আর থেমে থাকতে পারে না! এমন অবস্থায় সি চিয়া চুয়াং শহরে এক একটি ‘সরবরাহ দল’ যেন ‘অশ্বারোহী সৈন্যের’ মতো লোকজনের সেবা দিতে থাকে। তারা হলেন ‘ডেলিভারি ভাই’, তারা হলেন গাড়িচালক ফান ক্লাবের সদস্য, তারা হলেন সড়ক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত মানুষ। তারা এই শহরকে প্রাণচঞ্চল করেছে, তারা অসংখ্য পরিবারের উষ্ণতা রক্ষা করেছে।

আজকের আসরের প্রথম অংশে আমরা তাদের গল্প আপনাদের বলব।

 

গত ১৫ তারিখ দুপুর ১টায়, সি চিয়া চুয়াং শহরের ছিয়াও সি এলাকার নাগরিক চেং তার মোবাইলফোনের এপিপিতে কাছাকাছি সুপারমার্কেটের অনলাইন স্টোরে রুটি, শাকসবজি, বিস্কুটসহ বিভিন্ন জিনিসের অর্ডার করেন। মোট মূল্য ১৪৬ ইউয়ান। বেলা ২টা ৩০ মিনিটে, ডেলিভারি ভাই তাকে ফোন করে জানান, তিনি কমিউনিটির মেইন গেটে পৌঁছেছেন। তিনি বের হয়ে তার অর্ডার করা জিনিস নিতে পারেন। মাডাম চেং জানান, সুপারমার্কেটের অনলাইন স্টোরে পণ্য সস্তা, আর জিনিস আগের দুই দিনের চেয়ে বেশি হয়েছে, ডেলিভারিও হয়েছে খুব তাড়াতাড়ি, বেশি সময় অপেক্ষা করার দরকার হয়নি। প্রতিটি অর্ডার ডেলিভারি করতে শুধু ৫ ইউয়ান ফি লাগে।

করোনাভাইরাসের মহামারির সময়, সি চিয়া চুয়াং-এর শপিং মল ও সুপারমার্কেট বন্ধ হয়েছে। কিন্তু স্টোরগুলো অনলাইনে জনগণকে সেবা দিতে থাকে। শুরুতে কিছু সমস্যা দেখা গেলেও, খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু সুশৃঙ্খল হয়ে যায়। লাখ লাখ পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর জন্য চীনের ইএমএস, এসএফ ও জেডিসহ বিভিন্ন ডেলিভারি কোম্পানির ডেলিভারি কর্মীরা নিজ নিজ কর্মপদে ফিরে এসেছেন, তারা হলেন এবারের মহামারির সঙ্গে লড়াইয়ে খালি রাস্তায় শহরের ‘অশ্বারোহী সৈন্য’।

৪৯ বছর বয়সী ওয়াং সু সিয়ান হলেন সি চিয়া চুয়াং শহরের ডাক অফিসের একজন ডেলিভারি কর্মী। তিনি গত ৯ তারিখে কর্মস্থলে ফিরে আসার প্রস্তুতি নেন, আর ১০ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবারও কাজ শুরু করেন। সেদিন থেকে তিনি প্রতিদিন খালি রাস্তায় যাতায়াত করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার কর্তব্য হল সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বিভিন্ন জিনিস সঠিক ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া। ক্রেতার কোনো সমস্যা থাকলে, আমি সেবা দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো, ক্রেতাকে সন্তোষজনক সেবা দিবো।’ জানা গেছে, সি চিয়া চুয়াং শহরের ডেলিভারি কোম্পানির ১ হাজারেরও বেশি নিউক্লিক অ্যাসিড নেগেটিভ ডেলিভারি কর্মী এই শহরের লোকজনকে সেবা দিচ্ছে।

গত ১১ তারিখ, হ্য পেই প্রদেশের হাই-ওয়ে গ্রুপের এক সম্পত্তি কোম্পানি প্রথম দফায় ‘জনগণের সুবিধার জন্য সেট প্যাকেজ’ সরবরাহ করতে শুরু করে। সেদিন রাতে জনগণের দৈনন্দিন জিনিস কেনার সুবিধার জন্য দু’টি ক্রয়ের উইচেট গ্রুপ খোলা হয়। প্রত্যেক গ্রুপে ৫ জন সদস্য আছে। এই কোম্পানি দুধ ও মাংসের সরবরাহকারীর কাছ থেকে সরাসরি কিনে থাকে, ডেলিভারি কর্মী প্রতিদিন ভোর ২টায় সরবরাহকারির কাছ থেকে ফ্রেশ মাংশ ও দুধ নেয়, তারপর ভোর ৫টার দিকে প্রত্যেক পরিবারে এসব জিনিস পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু হয়, প্রতিদিন রাত দশটার দিকে তা শেষ হয়। প্রতিদিন ডেলিভারি কর্মীরা শুধু চার পাঁচ ঘন্টা বিশ্রাম নিতে পারেন।

মহামারির সময় শহরকে রক্ষাকারী সাধারণ মানুষের গল্প_fororder_qi2

২. ‘সরবরাহ সৈন্যের গল্প’

গত ১২ তারিখ থেকে সি চিয়া চুয়াং শহরে পুরো শহরের সবার দ্বিতীয় দফার নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্ট শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা এখানের মহামারি প্রতিরোধে সহায়তা দেয়ার জন্য চিকিত্সক পাঠিয়েছে। তবে একটি সমস্যা হল, অন্য প্রদেশ থেকে আসা এসব চিকিত্সকতে ভোরে তাদের থাকার জায়গা থেকে বিভিন্ন কমিউনিটির টেস্ট স্থানে যেতে হয়। সি চিয়া চুয়াং শহরে একটি গাড়ি ফ্যান ক্লাব আছে, এই ক্লাবের সদস্যরা হলেন এসইউভি গাড়ির মালিক। ক্লাবের সদস্য ক্য ফেং লিং নিজের এসইউভি গাড়ি চালিয়ে দু’জন চিকিত্সককে টেস্ট স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সুবিধা হল গাড়ি আছে এবং আমরা তা চালাতে পারি। অন্য সাহায্য আমরা করতে পারি না। আমরা শুধু নিজের গাড়ি প্রদান করতে পারি, নিজের খরচে তেল চার্জ করি, নিজের খরচে খাবার খাই, অন্যকে কষ্ট না দেয়ার চেষ্টা করি। আমরা শুধু অন্যের হাসিমুখ গ্রহণ করি, টাকা গ্রহণ করি না।’

এই গাড়ি ফ্যান ক্লাবের সদস্য কু জুন জানিয়েছেন: তাদের এই ক্লাব খুব সাধারণ একটি গাড়ি ফ্যান ক্লাব। একই ব্রান্ডের গাড়ি মালিক এই ক্লাবে যোগ দিতে পারে। অথবা মাঝে মাঝে একসাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম আয়োজন করতে পারে। ক্লাব গঠনের ২০ বছরেরও বেশি সময়ে, প্রতিবার কোনো দুর্যোগ ঘটলে, ক্লাবের সদস্যরা সবসময় সাহায্য দিতে দ্বিধা করে না। এটাই তাদের ঐতিহ্য ও অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যেমন চীনের ওয়েন ছুয়ান ভূমিকম্প, ছিং হাই ইয়ু শু ভূমিকম্প, উ হানের করোনাভাইরাসের মহামারির সময় তাদের ক্লাবের সদস্যরা সাহায্য দেয়ার কাজে অংশ নিয়েছিলেন। সি চিয়া চুয়াং শহরে দ্বিতীয় দফায় মহামারি দেখা দেয়ার পর গত ৬ তারিখ থেকে ক্লাবটি কাজ করা শুরু করে। বর্তমানে সি চিয়া চুয়াং-এর চারটি এলাকায় ১২০টিরও বেশি এসইউভি গাড়ি, ৭ শতাধিক গাড়ি মালিক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর সাহায্য দিচ্ছে। তারা চিকিত্সক ও চিকিত্সাসামগ্রী পাঠায়, কমিউনিটিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে।

মহামারির সময় শহরকে রক্ষাকারী সাধারণ মানুষের গল্প_fororder_qi3

এই গাড়ি ফ্যান ক্লাব উইচেটে ‘নিরাপদ হ্যপেই প্রদেশ’ নামের এটি গ্রুপ খুলেছে। এই উইচেট গ্রুপ তাদের আকস্মিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে, এতে বিভিন্ন গাড়ি এবং সদস্যের বিন্যাস করা হয়। তারা নিজেদের জন্য কঠোর নিয়ম নির্ধারণ করেছে। তা হল: সরকারের দেয়া কর্তব্যের বাইরে কোনো কাজ করা যাবে না, চিকিত্সার আবর্জনা সরবরাহ করা যাবে না; আক্রান্ত ব্যক্তি বা জিনিস সরবরাহ করা যাবে না, ভালোভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হবে এবং সময়মতো জীবাণুমুক্ত করে গাড়িতে ফ্রেশ এয়ার বজায় রাখতে হবে।

সাংবাদিক ‘নিরাপদ হ্য পেই প্রদেশ’ উইচেট গ্রুপে দেখেছেন, কোনো কোনো সদস্য হাই ওয়ে’র মোড়ে অন্য প্রদেশ থেকে পাঠানো চিকিত্সাসামগ্রীর অপেক্ষা করছেন, কেউ কেউ কমিউনিটিতে জীবাণুমুক্তকরণ জিনিস সরবরাহ করছেন, কেউ কেউ হাই ওয়ে’র মোড়ে কর্মরত সড়ক পুলিশসদস্যদের খাবার সরবরাহ করছেন।

 

 

যদি আমরা বলি, শহর মানুষের দেহের মতো, শহরের রক্তনারীতে ডেলিভারি ভাই হল শরীরে পুষ্টি সরবরাহের লোহিত কণিকা, তাহলে শহরের সড়কে টহলরত কর্মীরা যেন ‘শ্বেত রক্তকণিকা’র মতো। এরা প্রতিরোধের দায়িত্ব পালন করে প্রতিরোধক সামগ্রী বিতরণের সাহায্য করার মাধ্যমে।