জানুয়ারি ১৯: চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর গতকাল (সোমবার) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০২০ সালে চীনা জিডিপি’র পরিমাণ ২.৩ শতাংশ বেড়ে ১০১.৫৯৮৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে। এবারই প্রথম চীনের জিডিপি ১০০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। আজকের টপিকে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব।
১০০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান মানে কী? এ সংখ্যাটি জাপান, জার্মানি, ব্রিটেন ও ফ্রান্স—এই চারটি বড় অর্থনৈতিক সত্ত্বা’র মোট জিডিপি’র সমান। আইএমএফ’র হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে চীনা মুদ্রা বিনিময়ের হার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি’র ৬৭ শতাংশ। এই সংখ্যা ২০২০ সালের শেষ দিকে দাঁড়ায় ৭১.৪ শতাংশে। ২০০০ সালে চীনের জিডিপি ছিল ১০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে। আর এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে। বিগত ২০ বছরে চীনা অর্থনীতি ১০ গুণ বেড়েছে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কোভিড-১৯ মহামারী গোটা বিশ্বে যখন ছড়িয়ে পড়েছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও নিম্নমুখী প্রবণতায় বজায় রেখেছে, তখন চীনা অর্থনীতি প্রথম প্রান্তিকে ৬.৮ শতাংশ সংকুচিত হয়। তবে চতুর্থ প্রান্তিকে চীনের জিডিপি বেড়েছে ৬.৫ শতাংশ। আর গোটা বছরে ২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে চীনের জিডিপি, যা বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের প্রবৃদ্ধি। তবে এই ব্যতিক্রমী বছরে এটা অসাধারণ সাফল্য। ব্লুমবার্গ নিউজ জানায়, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি মহামারী মোকাবিলা করেছে, যা গেল বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
২০২০ সালকে মানবজাতির এক জলাশয় বলে চিহ্নিত করা হয়। এ বছর কোভিড-১৯ মহামারী আকস্মিকভাবে এসে মানুষের স্বাভাবিক জীবন নষ্ট করেছে। পাশাপাশি, একতরফাবাদ এবং বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ বেড়েছে। কিছু দেশ ভাইরাসের জন্য চীনের ওপর অন্যায় দোষ চাপিয়েছে ও ভাইরাস নিয়ে রাজনীতি করার অপচেষ্টা করেছে। এটি কেবল যে সেসব দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য অনুকূল হয়নি, তা নয়, বরং এতে বৈশ্বিক শিল্প চেইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই পটভূমিতে চীন নিজের স্থিতিশীলতা কাজে লাগিয়ে নিজের কাজ ভালভাবে করার চেষ্টা করেছে। গোটা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকিয়েছে চীনা সরকার। পাশাপাশি, অর্থনীতির চাকার স্বাভাবিক গতিও ঠিক রেখেছে এবং সবার আগে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, বড় দেশগুলোর মধ্যে চীনই ২০২০ সালে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি অজন করতে সক্ষম হয়েছে। চীনের ঘুরে দাঁড়ানো মহামারী মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকেও সাহায্য করেছে। গেল বছরের মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বরের শেষ দিক পর্যন্ত, চীন ২ শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ২২৪.২ বিলিয়ন মাস্ক, ২.৩১ বিলিয়ন সুরক্ষামূলক পোশাক এবং ২ লাখ ৭১ হাজার ভেন্টিলেটর রপ্তানি করেছে। গেল বছর চীনের রপ্তানির মোট পরিমাণ ছিল ১৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি।
চীনা অর্থনীতির আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে চীনা বাজার বৈদেশিক পুঁজির স্বর্গ। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়, গেল বছর কোভিড-১৯ মহামারীর গুরুতর আঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করেছে চীন। বিশ্বে সার্বিকভাবে আন্তঃদেশীয় সরাসরি পুঁজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে গেলেও, গোটা বছরে চীনে বিদেশি পুঁজির সরবরাহ ছিল ভালো। রিপোর্টে বলা হয়, ২০২০ সালে গোটা চীনে আর্থিক ক্ষেত্রে বৈদেশিক পুঁজির প্রকৃত ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৯৯৯.৯৮ বিলিয়ন ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৬.২ শতাংশ বেশি। চীনে বৈদেশিক পুঁজির কাঠামো আরও সুবিন্যস্ত হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)