চীনের কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব
2021-01-20 10:39:58

বেইজিং স্বাস্থ্য কমিশন গত ১১ জানুয়ারি জানিয়েছে যে, এ পর্যন্ত রাজধানীতে ১০লাখেরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ  করেছেন। অতি উচ্চ মাত্রার সংক্রমণ ঝুকিতে থাকা ৯ ধরনের মানুষ গত ১৫ জানুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ শেষ করেন। তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ প্রদান আগামি ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে।

 

এরই মধ্যে অনেকেই ভ্যাকসিন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় জানতে চেয়েছেন। তাদের আগ্রহের জবাবে আমরা এখানে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।

 

৭৯.৩৪ শতাংশ সংরক্ষণ মানে কী?

টিকার সংরক্ষণ হার ৭৯.৩৪ শতাংশ মানে, যারা এ টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৭৯.৩৪ শতাংশ মানুষ সুরক্ষা পেয়েছেন। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদন্ড ৫০ শতাংশ। তবে, চীনা টিকার সংরক্ষণ হার তার চেয়ে অনেক বেশি, ৭৯.৩৪ শতাংশ। সংরক্ষণ হার যত বেশি হবে, টিকা তত দ্রুত কার্যকর ভাবে গ্রুপ ইমিউনিটি তৈরি করতে পারে।

 

নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি রূপান্তরের হার ৯৯.৫ শতাংশের মানে কী?

চীনের তৈরি কোভিড-১৯ টিকা একটি নিষ্ক্রিয় টিকা। তৃতীয় পর্যায়ে শারীরিক পরীক্ষার উপাত্ত অনুযায়ী, এ টিকার সংরক্ষণ হার ৭৯.৩৪ শতাংশ এবং  নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি রূপান্তরের হার ৯৯.৫ শতাংশ।

 

নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি সম্পর্কে সহজে বলা যায় যে, এটি টিকার প্রতিরক্ষামূলক প্রভাবের ভিত্তিতে ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে তৈরি এক ধরনের অ্যান্টিবডি। নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি রূপান্তরের হার ৯৯.৫ শতাংশের মানে হল, যারা এ টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৯৯.৫ শতাংশ মানুষের শরীরে নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অ্যান্টিবডি তৈরি না হলে টিকা কার্যকর হয় না। কারণ অ্যান্টিবডি একটি নির্দিষ্ট ঘনত্বে পৌঁছালেই কেবল টিকা কার্যকর হয়। বিভিন্ন মানুষের শারীরিক অবস্থা ভিন্ন। তাই তাদের শরীরে একই ঘনত্বের অ্যান্টিবডির সংরক্ষণ ক্ষমতাও ভিন্ন হবে।

 

 

চীনা টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা বিদেশে চালু হয় কেন?

একটি টিকা তৈরি করলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের শারীরিক পরীক্ষা চালাতে হয়। চীনের প্রথম কোভিড-১৯ টিকা তৃতীয় পর্যায়ের শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাজারে ছাড়া হয়।  চীনের বায়োটেকনোলজি কর্পোরেশনের সিইও ইয়াং সিয়াও মিং এক সাক্ষাত্কারে বলেন, শুরুতে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা চালু হয়। শারীরিক পরীক্ষার আগে পরীক্ষাগারে রসায়নিক এবং পশুর শরীরে পরীক্ষা করা হয়। সাত ধরনের পশুর শরীরে চীনের টিকা পরীক্ষা করা হয়। প্রথম দু পর্যায়ের পরীক্ষার মাধ্যমে ডোজের পরিমাণ ঠিক করা হয়। পাশাপাশি অ্যান্টিবডিগুলো ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে কি না তা নিশ্চিত করা হয়। সবগুলো কাজ পরীক্ষাগারে করা হয়। তবে একটি টিকা বাজারে ছাড়তে হলে মানুষের শরীরে তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হয়। এমন পরীক্ষা যেখানে মহামারি পরিস্থিতি গুরুতর সেখানে করতে হয়। কারণ কেবল বড় আকারের পরীক্ষার মাধ্যমেই টিকার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার অবস্থা জানতে পারা যায়। চীনের মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় এখানে বড় আকারের পরীক্ষা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই চীনের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের শারীরিক পরীক্ষা বিদেশে চালাতে হয়।

 

চীনের টিকা নিষ্ক্রিয় কেন?

এ পর্যন্ত চীনে মোট ৯০লাখের বেশি ডোজ নিষ্ক্রিয় টিকা দেওয়া হয়েছে এবং কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার রিপোর্ট পাওয়া যায় নি। এ পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় এবং পরিশোধন করার পর টিকা তৈরি করা হয়। ফলে এ টিকা শরীরে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করতে পারে। প্রথাগত সরঞ্জাম ব্যবহার করে তৈরি করা হয় নিষ্ক্রিয় টিকা। এ পদ্ধতিতে গবেষণার প্ল্যাটফর্ম পরিপক্ক, উত্পাদন প্রক্রিয়া স্থিতিশীল, টিকার মান নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং দ্রুত গবেষণা শেষ করে বড় আকারে টিকার উত্পাদন করা হয়। এমন টিকার জন্য আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কার্যকরিতার মানদন্ড আছে এবং যারা এমন টিকা উত্পাদন করে তাদের জন্য উচ্চ মানের প্রতিরক্ষামূলক মানদন্ড আছে বলে তার উত্পাদন প্রক্রিয়া অনেক নিরাপদ। আর নিষ্ক্রিয় টিকা গবেষণা ও উত্পাদনের ক্ষেত্রে চীন আগে থেকেই বিশ্বের সামনের সারিতে রয়েছে। বর্তমানে এজ১এন১ ফ্লু টিকা, হেপাটাইটিস টিকাসহ সবই নিষ্ক্রিয় টিকা। তাই চীন নিষ্ক্রিয় টিকা তৈরি করেছে। তবে, চীন মোট ৫টি পদ্ধতির মাধ্যমে কোভিড-১৯ টিকা গবেষণা করছে। নিষ্ক্রিয় টিকা ছাড়াও অন্য চার ধরনের টিকা নিয়ে কাজ করছে চীন।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর  বিশ্বে মোট ৬০ ধরনের কোভিড-১৯ টিকা শারীরিক পরীক্ষার পর্যায়ে প্রবেশ করে এবং এদের মধ্যে ১৫টি টিকা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা সম্পন্ন করে, এসবের মধ্যে ৫টিই চীনের তৈরি টিকা। (শিশির/এনাম/রুবি)