হপ্তানামা: করোনার নতুন রূপে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে..
2021-01-20 14:43:05

প্রথমে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গত এক সপ্তাহের কর্ম তত্পরতা তুলে ধরছি...

হপ্তানামা: করোনার নতুন রূপে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে.._fororder_u=2075966417,1345370480&fm=15&gp=0

ইন্দোনেশিয়ার যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার পর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত ১০ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোকে সমবেদনা জানিয়েছেন। সমবেদনায় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার বন্ধুসূলভ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে চীন সরকার ও জনগণের পক্ষে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর শোক জানাই এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই।

 

গত ১০ জানুয়ারি উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির অষ্টম প্রতিনিধি সম্মেলনে কিম জং উন পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

সি চিন পিং বলেন, উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির অষ্টম প্রতিনিধি সম্মেলন দেশের সমাজতান্ত্রিক চেতনা উন্নয়নের ধারাবাহিক পথ অনুসরণ করেছে। যা খুব তাত্পর্যপূর্ণ। কিম জং উনের শীর্ষনেতা হিসেবে নির্বাচিত হওয়া তাঁর প্রতি জনগণের আস্থা ও সমর্থনের প্রতিফলন। চীন ও উত্তর কোরিয়া ভালো সমাজতান্ত্রিক প্রতিবেশী দেশ। দু’দেশের সম্পর্ক উন্নত করা হল চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকারের নীতি। তিনি উত্তর কোরিয়ার সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দু’দেশের সম্পর্ক জোরদার করা, দু’দেশের সমাজতান্ত্রিক চেতনা উন্নত করা, রাজনৈতিক পদ্ধতিতে কোরীয় উপদ্বীপের সমস্যা সমাধান করা এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে চান।

গত ১১ জানুয়ারি  প্রাদেশিক ও মন্ত্রী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সিপিসি’র ঊনবিংশ কংগ্রেসেরর পঞ্চম পুর্ণাঙ্গ অধিবেশনের চেতনা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়েছে। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, চীনকে তার লক্ষ্যপানে পৌঁছতে হলে যথাযথভাবে নতুন উন্নয়ন পর্যায়কে আঁকড়ে ধরতে হবে এবং নতুন উন্নয়ন কাঠানো নির্মাণ দ্রুততর করতে হবে।

 তিনি বলেন, ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ চলকালে উচ্চমানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে সার্বিকভাবে আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ নির্মাণের এক শুভ সূচনা নিশ্চিত করতে হবে।

সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ প্রতিষ্ঠা করে প্রথম শত বছরের লক্ষ্য বাস্তবায়নের পর চীন সার্বিকভাবে আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার নতুন যাত্রা শুরু করে দ্বিতীয় শতকের লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 সি চিন পিং বলেন, এটা চীনের এক নতুন উন্নয়ন পর্যায়ে প্রবেশ করার প্রতীক। আগামি ৩০ বছর হবে ঐতিহাসিক এ মহান আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করার নতুন পর্যায় । তাই পুরো পার্টিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার জন্য কষ্টকর প্রয়াস চালাতে হবে।

 

গত ১২ জানুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাদির নুরগোজয়েবিক জাপারবকে এক অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন।   

বার্তায় সি চিন পিং বলেন, দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ২৯ বছরে চীন-কিরগিজ সম্পর্কের উন্নয়ন ফূলপ্রসু হয়েছে। তিনি বলেন, “চীন ও কিরগিজিস্তানের সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক উন্নয়নের উপর আমি অতন্ত্য গুরুত্ব দেই। আপনার সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় পারস্পরিক সহযোগিতা গভীরতর করতে এবং দুদেশের গণকল্যাণ নিশ্চিত করতে ইচ্ছুক আমি।”

 

 

২. করোনার রূপান্তর নিয়ে আলোচনা

জাপান সরকার গত ১০ জানুয়ারি জানিয়েছে, ব্রাজিল থেকে জাপানে প্রবেশকারী  ৪জন পর্যটক কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের শরীর থেকে সংগৃহিত নমুনা বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, তাঁরা রূপান্তরিত নতুন প্রজাতির ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে, এ ভাইরাসের যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত নতুন ভাইরাসের সঙ্গে খুব একটা মিল নেই।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. থেডরোজ আধানম এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, হু সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট লক্ষ্য করেছে। করোনাভাইরাস যত বেশি ছড়িয়ে পড়ে, তার রূপান্তরের সম্ভবনা তত বেশি। নতুন রূপান্তরিত ভাইরাস আরও বেশি সংক্রামক বলে আগামিতে আরও বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে বা হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। এটি চিকিত্সাকর্মী ও হাসপাতালের জন্য বড় সমস্যা হবে। বিশেষ করে গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বসের পথে রয়েছে।

 

তিনি বলেন,সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা কার্যকরভাবে করোনাভাইরাসের জিন সিকোয়েন্সিং করতে পারি এবং তাই এর পরিবর্তন জানতে পারব ও একে মোকাবিলা করতে পারবো। যদিও ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি ও টিকা এখন কার্যকরভাবে করোনাভাইরাস ঠেকাতে পারছে, তবে ভবিষ্যতে  এ দুয়ের আরও সমন্বয় করতে হবে।

 

গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশ করে ‘বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ এবং ‘ঝুঁকি ত্বত্তাবধান কাঠামো দলিল’। আশা করা যায়, এর সাহায্যে নানা দেশ করোনাভাইরাসের জিন সিকোয়েন্সিং পরিকল্পনা করতে পারবে। সকল দেশকে করোনাভাইরাস নিয়ে জিন সিকোয়েন্সিং জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে হু।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি প্রকল্পের প্রযুক্তিগত প্রধান মারিয়া ভ্যান কারখোভে বলেন, রূপান্তরিত করোনাভাইরাস এখনো নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সম্প্রতি বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে এবং তার মূল কারণ রূপান্তরিত ভাইরাস নয় বরং মানুষের অবাদ চলাফেরা।

 

তিনি বলেন,“যদিও আমরা রূপান্তরিত করোনাভাইরাস আবিষ্কার করেছি, তবে এ ভাইরাস এখনো নিয়ন্ত্রণযোগ্য। আমাদের আছে বিশ্বব্যাপী জিন সিকোয়েন্সিং ব্যবস্থা, তাই আমরা ভাইরাসের পরিবর্তন আবিষ্কার করতে পারি। আসলে রূপান্তরিত ভাইরাস আকিষ্কার করা ও ছড়িয়ে পড়ার আগে অনেক দেশে মহামারির অবস্থা গুরুতর হয়েছে। তার মূল কারণ হলো মানুষের যোগযোগ বৃদ্ধি।”

 

তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালে ইউরোপীয় দেশগুলো মহামারি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং কোন কোন দেশে প্রতিদিন নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০জনের কম ছিল।

তিনি বলেন,“আমরা এ যুদ্ধে পরাজিত হয়েছি। কারণ গত গ্রীষ্মকালের পর আমরা আমাদের সামাজিক মেলামেশার পদ্ধতি পরিবর্তন করেছি। নববর্ষের ছুটিতে ব্যক্তিগত ও পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে। তাই কোন কোন দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।”

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি প্রকল্পের দায়িত্বশীল ব্যক্তি মাইক রাইয়ান বলেন, বর্তমানে কোন প্রমাণ নেই যে, রূপান্তরিত ভাইরাস আরও মারাত্নক হয়ে উঠবে। তবে, ভাইরাস আগের তুলনায় আরও বেশি সংক্রামক, তা ঠিক।

 

তিনি বলেন,এটা একটি ফুটবল গেমের মতো। আপনার প্রতিপক্ষ দলে নতুন একজন বিকল্প প্লেয়ার গেমে যোগ দিয়েছে তবে গেমের নিয়ম পরিবর্তন হবে না। আমরাও আগের মতো সবই করবো। তবে গেম হবে আরও চ্যালেঞ্জিং। কারণ প্রতিপক্ষ দলে পরিবর্তন এসেছে।

 

এনাম, আমরা জানি, বর্তমানে বৃটেন, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে করোনার নতুন প্রজাতি পাওয়া গেছে।  রূপান্তরিত করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

 

৩ সিন চিয়াং বিষয়ে নিয়ে আলোচনা...

গত ১২ জানুয়ারি চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সরকারের তথ্য কার্যালয়ের উদ্যোগে বেইজিংয়ে দ্বিতীয় সিনচিয়াং বিষয়ক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) সিনচিয়াং কমিটির তথ্য ও প্রচার বিভাগের উপপ্রধান ছু কুই বাস্তবতার ভিত্তিতে সিনচিয়াং সম্পর্কিত প্রচলিত সব অভিযোগ ও সমালোচনা খণ্ডন করেন। 

বিদেশে চীন-বিরোধীদের নানা অপপ্রচার তথা সিনচিয়াংয়ে গণহত্যা, জবরদস্তিমূলক শ্রম, কঠোর তদারকি ও নিয়ন্ত্রণেরও জবাব দিয়েছেন তিনি । 

তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত, সিনচিয়াংয়ে উইগুর জাতির জনসংখ্যা ১ কোটি ১লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১কোটি ২৭লাখে দাড়িয়েছিল। সেসময়ে উইগুর জনসংখ্যা ২৫.০৪শতাংশ বৃদ্ধি পায়। আর একই সময়ে হান জাতির জনসংখ্যা ৮৮ লাখ থেকে বেড়ে ৯০ লাখে পৌঁছে। তখন তার বৃদ্ধির হার ছিল কেবলমাত্র ২শতাংশ।

 

তিনি আরও বলেন, সিনচিয়াংয়ে কোন জাতির নারীদের কোনভাবেই গর্ভপাতে বা জন্ম নিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা হয় না। কেউ জন্ম নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিলে সেটা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার ভিত্তিতে নিয়ে থাকে। কোন সংস্থা বা ব্যক্তি এতে কোন রকম হস্তক্ষেপ করে না। কথিত বাধ্যতামূলক বন্ধ্যাকরণের অস্তিত্ব একেবারেই নেই সেখানে। 

তিনি বলেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দিকে চেয়ে দেখেন, মানবাধিকার রক্ষা ও সন্ত্রাসবাদ দমনের অজুহাতে তারা আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধ বাধিয়েছে। এতে লাখ লাখ নিরিহ ও বেসামরিক মানুষ আহত কিংবা নিহত হয়েছে। অনেকে তাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হয়েছে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অনেক স্থানে বন্দিশালা স্থাপন করেছে। সেখানে মানবাধিকারের চরম লংঘন হচ্ছে । 

তিনি জিজ্ঞেস করেন, “আসলে কে বন্দিশিবির প্রতিষ্ঠা করেছে? কে বন্দিদের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাচ্ছে? কে মানবাধিকারকে ভূলন্ঠিত করছে? বিশ্বাস করি, সবারই এসব প্রশ্নের উত্তর স্পষ্টভাবে জানা আছে!”   

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে বা করছে, তা আন্তর্জাতিক সমাজের রীতিনীতি, ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। মানবিক নৈতিকতা এসব কখনো সমর্থন করে না এবং মানবাধিকারের চরম লংঘন। আসলে যুক্তরাষ্ট্রই দেশে দেশে প্রকারান্তরে গণহত্যা চালাচ্ছে।