চীনা প্রেসিডেন্টের সেই ভাষণ গাঢ় অন্ধকারে এক চির উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা: সুইজারল্যান্ডে চীনা রাষ্ট্রদূত
2021-01-18 14:47:58

জানুয়ারি ১৮: ঠিক চার বছর আগের খৃষ্টীয় নববর্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ২০১৭’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ‘যুগের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া এবং বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রচার’ শীর্ষক এক ভাষণ প্রদান করেন।

 

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়াং সি থিং চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজিকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাত্কারে বলেন, সুইজারল্যান্ডের সর্বস্তরের বন্ধুরা, বিশেষত যারা চীনা প্রেসিডেন্টের ওই ভাষণটি তখন শুনেছিলেন, তাঁরা এখনও ভাষণটি মনে রেখেছেন। তাঁরা ভাষণটিকে গাঢ় অন্ধকারে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা মনে করছেন। একে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির বিকাশের এক সময়োপযুগি দিক-নির্দেশনা মনে করেন তাঁরা। বিস্তারিত শুনবেন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

সুইজারল্যান্ডে চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়াং সি থিং বলেন, নভেল করোনাভাইরাস মহামারী এবং জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি প্রকৃতপক্ষে পুরো বিশ্বকে বহুলাংশে প্রভাবিত করেছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ব্যবস্থার স্বাভাবিক কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ করেছে।

 

তিনি বলেন,

“মহামারীটি দেশগুলির মধ্যে মানুষের আদান-প্রদানকে প্রভাবিত করেছে, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকেও জটিলতায় ফেলেছে, এবং অনেক অর্থনীতির অপুরনীয় অভ্যন্তরীণ ক্ষতি করছে। ফলে কিছু দেশ বিশ্বাস করছে যে, শিল্প ও সরবরাহ চেইন নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায়। কিছু দেশ এখনও একতরফাবাদ, সুরক্ষাবাদ এবং ক্ষমতার রাজনীতি নিয়ে গর্ব করছে এবং তারা একটি 'প্রযুক্তিগত যুদ্ধে' জড়িত রয়েছে। এসব ধারণা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ব্যবস্থার স্বাভাবিক পরিচালনকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।”

 

ওয়াং বলেন, এসব বিশ্বায়ন বিরোধী ধারণা বর্তমান সমস্যাবলি মোকাবিলায় কোন কাজে আসবে না, বরং অন্যদের এবং নিজেদের ক্ষতির কারণ হবে। প্রেসিডেন্ট সি চার বছর আগে বলেছেন যে, বিশ্ব অর্থনৈতিক সমুদ্রের পক্ষে বিচ্ছিন্ন একটি ছোট হ্রদ বা নদীর কাছে পিছু হটা অসম্ভব এবং এটি ঐতিহাসিক ধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

 

বর্তমানে প্রশ্ন উঠেছে যে, চলমান বৈশ্বিক মহামারীর প্রেক্ষাপটে আমাদের অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন বজায় রাখা এবং এর পক্ষে প্রচারনা কীভাবে চালানো উচিত? এবং মহামারী-উত্তর সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অর্জন করার পথ নিয়ে কী সব কথা বলা প্রয়োজন?।

 

রাষ্ট্রদূত ওয়াং বলেন, “প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ইতোমধ্যে তাঁর বক্তৃতায় প্রশ্নগুলোর যুৎসই উত্তর দিয়ে রেখেছেন। তা হলো, সব সুযোগের পুরোপুরি ব্যবহার করা, সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা করা, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রবণতা পরিচালনা করা, একটি গতিশীল প্রবৃদ্ধির মডেল তৈরি করা, একটি উন্মুক্ত ও লাভ ও কল্যাণের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সহযোগিতা মডেল, একটি সুষ্ঠু ও যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনের মডেল, একটি সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল তৈরি করা। ‘সুবর্ণ বাক্যগুলো’ উচ্চারণের চার বছর পরেও এসবের শক্ত ব্যবহারিক তাত্পর্য রয়েছে।”

 

রাষ্ট্রদূত ওয়াং আরও বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবের প্রেক্ষাপটে চীন একমাত্র বৃহৎ অর্থনীতি যেটি ২০২০ সালে তার ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি  বজায় রাখার গৌরব অর্জন করেছে। গত বছর বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অর্থনীতির অবদানের হার ছিল আগের বছরগুলির তুলনায় অনেক বেশি। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে চীনের অর্থনীতি বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি অবদান রাখবে। এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান চীন একটি দায়িত্বশীল বড় দেশ হিসাবে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সুস্থ বিকাশের জন্য রাখছে।

 

তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট সি’র কথাগুলো আজও পড়তে খুব রোমাঞ্চকর এবং অনুপ্রেরণামূলক মনে হয়। চীন যতই সমস্যায় পড়ুক না কেন, দেশটি বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সাথে একযোগে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে উচ্চ স্তরে উন্নীত করতে এবং সমস্ত মানবজাতির কল্যাণ করতে আগ্রহী। ওই ভাষণটি সর্বদা মানব জাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির বিকাশের দিকটি আলোকিত করবে এবং মানুষকে আস্থা, উষ্ণতা এবং আশা যোগাবে। এক বন্ধু আমাকে বলেছিল যে, সে এখনও ওই ভাষণটি পড়ে। সে মনে করে যে, এটি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি উজ্জ্বল বাতিঘরের মতো। বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির স্বীকৃতি দিতে, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে, এবং মহামারীর পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে উত্সাহিত করার জন্য ওই ভাষণের বাস্তব তাত্পর্য এবং নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রয়েছে।”

(জিনিয়া/এনাম/শুয়েই)