বিদায়ী বছরে চীনের আমদানি ও রপ্তানি খাত সফলতার নতুন ইতিহাস গড়ে
2021-01-15 14:59:07

অভূতপূর্ব দুর্যোগ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চীন সদ্য বিদায়ী বছরে তার বৈদেশিক বাণিজ্যের আমাদানি ও রপ্তানিতে ভাল ফলাফল অর্জন করেছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) চীনের জাতীয় শুল্ক প্রশাসন প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, গত বছর চীন সারা বিশ্বের একমাত্র বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার গৌরব অর্জন করে।  গত বছের দেশটির পণ্য বাণিজ্যের রপ্তানি ও আমদানির মোট পরিমাণ ছিল ৩২.১৬ট্রিলিয়া ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১.৯ শতাংশ বেশি এবং চীনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

 

শুল্ক প্রশাসনের উপাত্ত অনুসারে, ২০২০ সালে চীনের পণ্য বাণিজ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৭.৯৩ ট্রিলিয়ান ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৪শতাংশ  বেশি। আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪.২৩ট্রিলিয়ান ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ০.৭শতাংশ কম। এভাবেই চীনের রপ্তানি ও আমদানির মোট পরিমাণ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে।

 

বৃহস্পতিবার চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে চীনের রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসনের মুখপাত্র ও পরিসংখ্যান  বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধান লি খুই ওয়েন বলেন, ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্য গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়নের বাহ্যিক পরিবেশও জটিল ছিল। এমন প্রেক্ষাপটেও চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের রপ্তানি ও আমাদনি দ্রুত পুরুদ্ধার হয়ে উন্নয়নের ইতিবাচক প্রবণতা বজায় রাখে।

তিনি বলেন, ২০২০সালের প্রথম প্রান্তিকে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য বিপুল পরিমাণে হ্রাস পাওয়ার পর দ্রুত স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসে এবং বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে। সারা বছরে চীনের রপ্তানি ও আমাদিন পরিমাণ ৩২ট্রিলিয়ান ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। যখন বিশ্ব বাণিজ্য মারাত্মকভাবে সঙ্কুচিত হয়, ঠিক তখনই চীন এমন সফলতা অর্জন করে বিশ্বকে অবাক করে দেয়। পাশপাশি, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের অনুপাত ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্থানে গিয়ে দাঁড়ায়। বিশ্ব বাণিজ্য  সংস্থা প্রকাশিত মাসিক প্রধান অর্থনীতির পণ্য বাণিজ্য উপাত্ত অনুয়ায়ী, ২০২০ সালের প্রথম ১০মাসে চীনের রপ্তানি-আমদানি, রপ্তানি ও আমাদানির আন্তর্জাতিক বাজার অনুপাত ছিল যথাক্রমে ১২.৮শতাংশ, ১৪.২শতাংশ ও ১১.৫শতাংশ, যা চীনের ইতিহাসে আগেকার সর্বোচ্চ রেকর্ডের তুলনায় যথাক্রমে ০.৮,০.৪ ও ০,৭ শতাংশ বেশি। ফলে বিশ্বে বৃহত্তম পণ্য বাণিজ্য দেশ হিসেবে চীনের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়।

 

উপাত্ত থেকে আরও জানা গেছে, ২০২০ সালে চীনের প্রধান ৫টি বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল আসিয়ান, ইউরোপীয় ইউনিয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। একই সময়ে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সংশ্লিষ্ট দেশের মধ্যে রপ্তানি ও আমাদানির পরিমাণ ছিল ৯.৩৭ ট্রিলিয়ান ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১শতাংশ বেশি। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনে দেখা দেয় নতুন শিল্পের উন্নয়ন। সারা বছরে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য রপ্তানি ও আমাদানি ছিল ১.৬৯ ট্রিলিয়ান ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩১.১ শতাংশ বেশি। একই সময়ে চীন-ইউরোপ রেলের ১২.৪ হাজার বারের মতো আসা-যাওয়া হয় এবং ১১৩৫ হাজারটি স্ট্যান্ডার্ড কন্টেইনার  যাতায়াত করে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৫০ শতাংশ ও ৫৬ শতাংশ বেশি।

 

২০২০ সালে মহামারি প্রতিরোধক সামগ্রী চীনের রপ্তানি ও আমাদানি উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে। এসব সামগ্রীর বৃহৎ সরবরাহকারী দেশ হিসেবে চীন বিশ্বের ২০০টি দেশ ও অঞ্চলে মহামারি প্রতিরোধক সামগ্রী রপ্তানি করে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে বছরের শেষ পর্যন্ত চীনের শুল্ক বিভাগের মাধ্যমে মোট ৪৩,৮৫০কোটি ইউয়ান মূল্যের সামগ্রী পাঠানো হয়।

 

লি খুই ওয়ান আরও বলেন, গেল এক বছরে চীনের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার আমাদানি বৃদ্ধিকে সমর্থন করেছে। মহামারিতে চীনের বিশাল বাজারের সুবিধা আরও স্পষ্ট এবং আমদানির চাহিদা স্থিতিশীল ছিল। অপরিশোধিত তেল, ও মেটাল আকরিকসহ অন্যান্য পণ্যের আমাদানির পরিমাণ যথাক্রমে ৭.৩ শতাংশ ও ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। খাদ্য ও মাংসসহ কৃষি পণ্যের  আমদানি পরিমাণ যথাক্রমে ২৮ শতাংশ ও ৬০.৪ শতাংশ বাড়ে।

 

চলতি বছর সম্পর্কে লি খুই ওয়েন বলেন,  রপ্তানি ও আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি বাজায় রাখবে চীন। আন্তর্জাতিক বাজার চাহিদার অনিশ্চয়তাকে সরবরাহ ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে মোকাবিলা করবে চীন।

(শিশির/এনাম /রুবি)