জানুয়ারি ১৪: গত ৩০ ডিসেম্বর চীন ও ইউরোপের শীর্ষনেতৃবৃন্দ যৌথভাবে ঘোষণা করেছেন যে, চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তির আলোচনা সময়মতো শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে চীন-ইউরোপ সার্বিক, ভারসাম্যপূর্ণ ও উচ্চমানের বিনিয়োগচুক্তির দ্বার উন্মোচিত হলো। এধরনের একটি চুক্তি বেহাল ও পরিবর্তিত বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
চীনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-র চেম্বার অফ কমার্সে
র চেয়ারম্যান ইয়াখ ভুত্খা (joerg wuttke) বলেছে: ‘বর্তমান সময়ে চীন-ইউরোপ মতৈক্য এক গুরুত্বপূর্ণ ও তাত্পর্যবহ ঘটনা।’ ইইউ’র চীনা চেম্বার অফ কমার্সের চেয়ারম্যান চৌ লি হুং চীন ও ইইউ’র আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার সম্ভাবনা এবং চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোন কোন প্রভাব ফেলবে—সেসম্পর্কেও কথা বলেছেন। ‘আজকের টপিক’ আসরে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব।
চীন-ইউরোপ আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার পরিস্থিতি কেমন এবং চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তির আলোচনা সময়মতো সম্পন্ন হওয়া দু’পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতায় কী কী প্রভাব ফেলবে? এ সম্পর্কিত এক আলোচনায় চৌ লি হুং বলেন, “বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারী আরও মারাত্মকভাবে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যেই গেল এক বছর চীন ও ইউরোপ দ্বিপক্ষীয় আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা উন্নয়নের প্রবণতা বজায় রেখেছে। চীন প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। ইউরোপের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীন ও ইউরোপের বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল ৪২৫.৫ বিলিয়ন ইউরো, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৯ শতাংশ বেশি। ইউরোপ থেকে চীনের আমদানির পরিমাণও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। চীনের প্রকাশিত গত নভেম্বর মাসের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইইউ থেকে চীনের আমদানির মোট পরিমাণ ২৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে বেশি।”
চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তির আলোচনা সময়মতো শেষ হওয়ার আরেকটি তাত্পর্য রয়েছে। দু’পক্ষের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। চুক্তির আলোচনা শেষ হওয়া মানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় উঠে যাওয়া।
মহামারী পরিস্থিতিতে এই বিনিয়োগচুক্তি ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কী কী কল্যাণ বয়ে আনবে? এ সংক্রান্ত এক আলোচনায় চৌ লি হুং বলেন, “চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তি ইউরোপের অর্থনৈতিক পুরুদ্ধারে ‘নতুন চালিকাশক্তি’ যোগাবে। এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর, ইইউ’র আরও বিনিয়োগকারী চীনা বাজারে আসবে।”
বস্তুত, নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ইউরোপীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে। ইইউ’র বিভিন্ন সদস্যদেশেও চীনা বিনিয়োগকারীরা অর্থ, রাসায়নিক, জ্বালানি, পর্যটন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা যায়।
চীনের বিনিয়োগকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সুবিধা হচ্ছে, এদের নব্যতাপ্রবর্তনের চালিকাশক্তি ও অর্থ সংগ্রহের সামর্থ্য প্রবল। পাশাপাশি, চীনের আছে পরিপক্ব সরবরাহ চেইন, মূল চেইন এবং প্রবল অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অনলাইন বাজার। চীনের উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়ন ও ক্রমবর্ধমান উন্মুক্তকরণ ইউরোপের বিনিয়োগকারীদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা সৃষ্টি করবে।
চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তি বৈশ্বিক আর্থ-বাণিজ্যিক আদান প্রদানে কী কী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে? এ সম্পর্কিত আলোচনায় চৌ লি হুং বলেন, এই চুক্তির আলোচনা সময়মতো শেষ হওয়া বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতা কমবে এবং অর্থনীতির পুনরুদ্ধার-প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত গতি সঞ্চার হবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)