২০২০ সালের চীনা অর্থনীতির সারসংক্ষেপ
2021-01-11 13:05:02

গত ১৫ ডিসেম্বর চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশটির আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, বিদায়ী বছরের গত ১১মাসে জাতীয় সাধারণ গণ-বাজেটের আয় ছিল ১৬ট্রিলিয়ন ৯৪৮বিলিয়ন ৯শ’ মিলিয়ন ইউয়ান। যা ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ৫.৩শতাংশ কম। চলতি বছরের গত ১১মাসে জাতীয় সাধারণ গণ-বাজেটের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল  ২০ট্রিলিয়ন ৭৮৪বিলিয়ন ৬শ’ মিলিয়ন ইউয়ান। যা ২০১৯ সালের একই সময়ের ব্যয়ের তুলনায় ০.৭ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় চলতি বচরে চীনের আয় সংকোচিত হলেও ব্যয় ঠিকই বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, চীনের জাতীয় প্রবৃদ্ধি তার ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রেখেছে।

 

মহামারী প্রতিরোধ, দারিদ্র্যবিমোচন এবং তৃণমূলের  ‘তিনটি সুরক্ষা’ (মৌলিক জীবিকা, বেতন, অপারেশন) এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় সুনিশ্চিত করার ফলে দেশটির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠিক একই ধরনের কারণে আয় কিছুটা সংকোচিত হয়েছে।

 

মহামারী প্রতিরোধের কারণে সরাসরি গণ-স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরে ৭১শতাংশ বেশি হয়েছে। সামাজিক নিশ্চয়তা ও কর্মসংস্থান, বসতবাড়ির নিশ্চয়তা ও দারিদ্র্যবিমোচন খাতে ব্যয় এবার যথাক্রমে ৯.৮, ৯.৫ ও ৯.২ শতাংশ বেশি হয়েছে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থ মন্ত্রণালয় দৃঢ়ভাবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাষ্ট্রীয় পরিষদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় ধরনের কর ও ফি হ্রাস করেছে। ফলে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান এবং শত মিলিয়ন সাধারণ মানুষ এসব ব্যবস্থার কল্যাণ উপভোগ করেছে। এটিও আয় সংকোচনের একটি কারণ।

 

গত বছর মহামারীর কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থ মন্ত্রণালয় ধারাবাহিকভাবে ৭দফায় ২৮টি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে কর ও ফি কমানোর ব্যবস্থা কার্যকর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মহামারী প্রতিরোধের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ ব্যবস্থা, মহামারীতে প্রভাবিত খাতকে সহায়তা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উত্পাদন পুনরুদ্ধার সমর্থন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে অধিকতর কর ও ফি হ্রাসের ব্যবস্থা। এসব ব্যবস্থা এবং কর ও ফি কমানোর ফলে চলতি বছর শিল্পপ্রতিষ্ঠান খাত থেকে আড়াই ট্রিলিয়ন ইউয়ান আয় কম হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

 

অন্যদিকে,  চীনে আর্থিক তহবিলে সরাসরি প্রবেশ ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। এটি সফলভাবে মহামারীর প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর্থিক বহুমুখী নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীলতাও চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে। এ ব্যবস্থা কার্যকর করার পর বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসন আরও গতিশীল হয়ে উঠেছে। এটি বাজেট প্রশাসনকে উন্নত করা, অর্থের ফলপ্রসূ ব্যবহার নিশ্চিত করা, এবং আর্থিক নিয়ন্ত্রণকে ফলপ্রসূ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। ফলে দেশটিতে গত নভেম্বর মাসের শেষ নাগাদ ৮০শতাংশেরও বেশি তহবিল ব্যবহার করা হয়েছে। এতে স্থানীয় সরকার বিভিন্ন কাজ-কর্ম অতি সহজে সম্পন্ন করতে পেরেছে। ফলে চীন তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে।

 

চলতি বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় আর্থিক তহবিলে সরাসরি প্রবেশ ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা জোরদার করবে জানা গেছে। চারটি প্রধান লক্ষ্য নিয়ে গবেষণা করা হবে। প্রথমত, যুক্তিসঙ্গত উপায়ে সরাসরি আর্থিক তহবিলে পৌঁছানোর মাত্রা সম্প্রসারণ করা। দ্বিতীয়ত, আন্তঃবিভাগ সমন্বয় কর্ম-ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ করা। বিভাগের আওতা সম্প্রসারণ করা। কর্তব্য ও শ্রম-বন্টন সুবিন্যস্ত করা, এবং আর্থিক তদারকি ও বিচার তত্ত্বাবধান জোরদার করা। তৃতীয়ত, সরাসরি আর্থিক তহবিল মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করে আন্তঃবিভাগ উপাত্ত উন্মুক্তকরণ ও ভাগাভাগির উন্নয়ন করা। চতুর্থত, আর্থিক তহবিলে সরাসরি প্রবেশ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে বাজেট প্রশাসন ব্যবস্থা সংস্কার করা। একে সরাসরি বাজেট প্রশাসন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত করে কাঠামোগত সংস্কার পূর্ণাঙ্গ করা। আর্থিক তহবিলে সরাসরি প্রবেশ ব্যবস্থার সুরক্ষা ও বাধ্যবাধকতা জোরদার করার পাশাপাশি আর্থিক তহবিলের ব্যবহার ফলপ্রসূ করা।

 

(প্রেমা/এনাম)