অক্সফোর্ডের টিকা কবে পাবে বাংলাদেশ?
2021-01-10 19:16:12

অক্সফোর্ড-অ্যাস্টাজেনেকার করোনা টিকা পেতে আগেভাগেই উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার। টিকা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি ডোজ টিকার চুক্তি করা হয়। বরাদ্দ করা হয় প্রয়োজনীয় ৬০০ কোটি টাকা। জানুয়ারির শেষে কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে টিকা পাওয়া যাবে একরকম নিশ্চিত সবাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ সরকারের মন্ত্রীরা বহুবার এমন আশ্বাস দিয়েছেন দেশবাসীকে। সরকারের এ উদ্যোগ সবার প্রশংসা কুড়ায়। আশায় বুকবাঁধে দেশের মানুষ।

কিন্তু ৩ জানুয়ারি পশ্চিমা একটি বার্তাসংস্থায় সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পুনাওয়ালার একটি সাক্ষাৎকার ওলটপালট করে দেয় সবকিছু। সাক্ষাৎকারে সেরাম প্রধান জানান, টিকা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত সরকার। ভারতের জনগণকে প্রথম টিকা দিতেই এ উদ্যোগ বলে জানান তিনি।

আদর পুনাওয়ালার এ বক্তব্যে হইচই পড়ে যায় বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলে। অক্সফোর্ডের করোনা টিকা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। হতাশ হয় বাংলাদেশের মানুষ। এতো উদ্যোগ, এতো আয়োজনের পরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে যথাসময়ে বাংলাদেশ টিকা প্রাপ্তি।

এ ক্ষেত্রেও ত্বরিৎ পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয় ভারতের শীর্ষ মহলের সঙ্গে। ৪ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, বাংলাদেশ যথাসময়ে করোনা টিকা পাবে। যেহেতু বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ পর্যায় এ বিষয়ে অবহিত রয়েছেন— তাই টিকা পেতে সমস্যা হবে না। ভারত করোনা টিকার বাণিজ্যিক রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ-ভারত জিটুজি- অর্থাৎ সরকারি পর্যায়ে এ চুক্তি করেছে, এমন আরও অনেক যুক্তি দেখান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও একই দিন ফের জোর দিয়ে বলেন যথাসময়ে টিকা পাবে বাংলাদেশ। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন চলাকালেই ভারতে হাইকমিশনার ফোন করে স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নানকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।

একই দিন সেরাম ইনস্টিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানান, টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার খবর পুরোপুরি ঠিক নয়। তবে তারা এখনো টিকা রপ্তানির অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন- যা পেতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। এ ছাড়া রপ্তানি শুরুর আগে ভারত সরকারকে ১০ কোটি ডোজ টিকা দিতে হবে।

৬ জানুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ভারতে টিকা দেওয়া শুরু হলে ১৫ দিনের মধ্যে তা রপ্তানির অনুমতি দেয়া হবে। আর ভারতে টিকা দেওয়া শুরুর কথা ১৩ জানুয়ারির মধ্যে।

সেরামের টিকা নিয়ে কয়েকদিনের এ ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়- বাংলাদেশের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা আসলে কাটেনি এখনো।

প্রথমত: বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকাকে আশ্বস্ত করেছে যথাসময়ে টিকা প্রাপ্তির বিষয়। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন পর্যায় থেকে বাংলাদেশকে এ নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে তা বলা হয়নি। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হলেন এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভারতীয় কর্মকর্তা যিনি এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে তার আশ্বাস শেষ কথা নয়।

দ্বিতীয়ত: ভারতে ১৩ জানুয়ারির মধ্যে টিকা দেওয়া শুরু হলে ১৫ দিনের মধ্যে রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার কথা বলেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র। সেরামের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেনের বক্তব্য অনুযায়ী রপ্তানির অনুমতি পেতে কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। এ ছাড়া ভারত সরকারকে প্রথমে ১০ কোটি ডোজ টিকা দিতে হবে। এ টিকা সরবরাহ করতেই সেরামের অনেক সময় লেগে যাবে।

এ সব ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণে বোঝা যায় বাংলাদেশ জানুয়ারিতে তো নয়ই, ফেব্রুয়ারির প্রথমেও টিকা পাবে কিনা গভীর সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিকা প্রয়োগে যে নীতিমালা স্বাস্থ্য

অধিদপ্তরের জমা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে টিকা হাতে পাওয়ার পরও প্রস্তুতির জন্য দু’মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে যদি টিকা পাওয়াও যায় তা বাংলাদেশের মানুষকে দিতে গড়িয়ে যাবে মার্চ-এপ্রিল।

এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে শুধু ভারতের ওপর নির্ভর করে না থেকে অন্যান্য উৎস থেকেও টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আশার কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবশেষ এমন আভাস দিয়েছেন যে চীন, রাশিয়া ও আমেরিকা থেকে সরকার টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিচ্ছে।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।