১. চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গত এক সপ্তাহের কর্ম তত্পরতা
সদ্য বিদায়ী ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কেন্দ্রীয় গ্রাম বিষয়ক কর্মসভায় উপস্থিত থেকে গুরুত্বর্পর্ণ এক ভাষণ দিয়েছেন।
ভাষণে তিনি বলেন, ‘কৃষি, কৃষক ও গ্রাম’কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তাই তিনি কৃষির গুণগত মানসম্পন্ন ও কার্যকর উন্নয়নকে বেগবান এবং গ্রামের কৃষকদের সমৃদ্ধ ও সুখী জীবন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন।
ওই দিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। ফোনালাপে প্রেসিডেন্টদ্বয় একে অপরকে এবং চীন ও রুশ জনগণকে খৃষ্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
সি চিন পিং বলেন, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারী মানবজীবন ও নিরাপত্তায় অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ ডেকে এনেছে। কঠিন সময়ে চীন ও রাশিয়া একে অপরের কেন্দ্রীয় স্বার্থে পারস্পরিক সমর্থন দিয়েছে; যা উচ্চমানের পারস্পরিক আস্থা ও মৈত্রীর প্রতিফলন। আগামী বছর ‘চীন-রাশিয়া প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি’ স্বাক্ষরের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে দু’দেশ সহযোগিতা আরও জোরদার করবে।
একই দিন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার প্রেসিডিয়ামের চেয়ারম্যানের সুস্থতা কামনা করে একটি বার্তা পাঠান। এতে তিনি কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার জনগণের দ্রুত বিজয় কামনা করেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সার্বিক সংস্কার গভীরতর কমিশনের ১৭তম অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন।
এতে সি চিন পিং সংস্কারের প্রতি বৈশ্বিক আস্থা জোরদার করতে নতুন উন্নয়নের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সংস্কারের আরও অগ্রগতি অর্জনের নির্দেশনা দেন।
ওই দিন রাতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিং থেকে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাকখোঁ, ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট মিশেল চার্লস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লিয়েনের সঙ্গে এক ভিডিও বৈঠকে যোগ দান করেন।
এ সময় তিনি বলেন, চীন-ইইউ পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তি চীনের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও আশাবাদের প্রতিফলন। এ চুক্তি পরস্পরের পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও বিরাট বাজার তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি, এটি উচ্চমানের ব্যবসার পরিবেশ, শক্তিশালী নীতিগত নিশ্চয়তা ও উজ্জ্বল সহযোগিতার ভবিষ্যৎ গঠন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট সি।
গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশ্ববাসীকে খৃষ্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ২০২০ সাল ছিল একটি ব্যতিক্রমী বছর। কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়লে চীন জনগণের জীবন রক্ষার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। চীনারা একসঙ্গে পরিশ্রম করে মহামারী প্রতিরোধের মহা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। যৌথভাবে মহামারী প্রতিরোধের লড়াইতে অংশ নেয়ার সময় চীনাদের সাহস, অদম্য পরিশ্রম, আত্মরক্ষা, বিপদ মোকাবিলা, আত্মত্যাগ, এবং পারস্পরিক সহায়তার মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। এ সময়ে চিকিত্সা কর্মী ও গণফৌজের সৈনিক, বিজ্ঞানী ও আবাসিক কমিউনিটির কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ও প্রকল্পের শ্রমিক, নবোতিপর বৃদ্ধ ও নতুন প্রজন্মের তরুণসহ অসংখ্য মানুষ নিজের মূল্যবান জীবন ও ভালবাসা দিয়ে অন্যদের জীবন রক্ষা করেছিলেন। নিজেদের শক্তি দিয়ে মহা শক্তি গড়ে তুলেছেন তাঁরা। প্রতিটি দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রত্যেকের হাতে হাত রেখে প্রতিটি মর্মস্পর্শী ঘটনায় নিজেদের মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন।
সাধারণ জনগণের বীরত্বগাথা মানব ইতিহাসে চির অমর হয়ে থাকবে। মহামারীর সময় প্রত্যেক চীনা মানুষ নিজেদের মহান হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন । প্রেসিডেন্ট সি শুভেচ্ছা বার্তায় প্রত্যেক আক্রান্ত রোগীকে সমবেদনা জানান! সবাইকে বীরোচিত শ্রদ্ধা জানান! তিনি তাঁর মহান দেশ, জনগণ এবং পরিশ্রমী জাতির জন্য গর্বিত বলে উল্লেখ করেন।
২০২১ সাল হলো সিপিসি প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ সিপিসি’র প্রথম উদ্দেশ্যটি গত ১০০ বছরে কখনও পরিবর্তন হয় নি। সিপিসি জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে সবসময় পার্টির প্রাথমিক উদ্দেশ্য বহাল রাখবে এবং নিজের দায়িত্ব পালন করবে, যাতে চীনা জাতির মহা সমৃদ্ধি বাস্তবায়ন করা যায়।
আগামি শতকে সিপিসি সার্বিক সমাজতান্ত্রিক ও আধুনিক চীন গড়ার ‘জাতীয় নতুন পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করবে। উন্নয়নের পথ সব সময়ই সুদীর্ঘ ও পিচ্ছিল হয়। শুধুমাত্র পরিশ্রম করে ও চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে একে অর্জন করতে হয়। সবাই পরিশ্রম করে আরও সুন্দর সাফল্য নিশ্চিত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গত ১ জানুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কিউবার বিপ্লবের ৬২তম বার্ষিকী উপলক্ষে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সম্পাদক রাউল কাস্ত্রো ও প্রেসিডেন্ট দিয়াজ-কানেলকে অভিনন্দনবার্তা পাঠান। প্রেসিডেন্ট সি তাঁর বার্তায় বলেন, কিউবার বিপ্লবের ৬২ বছরে দেশটির জনগণ দৃঢ়ভাবে বিপ্লবের সাফল্য রক্ষা করেছে এবং দেশ গঠনে মহা সাফল্য অর্জন করেছে। চীন ও কিউবা হলো ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কমরেড ও ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু’দেশের পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা জোরদার হয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা উন্নত হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধের মাধ্যমে দু’দেশের ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী আরো বেড়েছে। কিউবার নেতাদের সঙ্গে দু’দেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চান প্রেসিডেন্ট সি।
গত ২ জানুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নতুন সংশোধিত ‘সশস্ত্র বাহিনীর সরঞ্জাম বিধি’ সই করেছেন। ফলে এ বিধি ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। বিধিতে বলা হয়েছে, সি চিন পিংয়ের নতুন যুগে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতান্ত্রিক চেতনায় সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা হবে। সেসঙ্গে নতুন যুগের সামরিক কৌশলের ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
২. এবারে চীনের পরিবেশ রক্ষা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন:
গত ৫ জানুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রণীত দেশটির ছোং ছিং মহানগরের ইয়াং চি নদীর বদ্বীপ অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত কর্মসভার পঞ্চম বার্ষিকী পালিত হয়। ২০১৬ সালে প্রথম কর্মসভা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর আরো দুবার তিনি কর্মসভায় সভাপতিত্ব করেন।
গত ৫ বছর ধরে চীনা প্রেসিডেন্ট সি ইয়াং চি নদীর অববাহিকা উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর সি চিন পিং ইয়াং চি নদীর বদ্বীপের ১১টি প্রদেশ ও মহানগর পরিদর্শন করেন। এসব পরিদর্শনের সময় তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেওয়া, ও সবুজায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ছোং ছিং মহানগরে অনুষ্ঠিত ইয়াং চি নদীর বদ্বীপের অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন বিষয়ক কর্মসভায় প্রেসিডেন্ট সি বলেছিলেন, এ অঞ্চলের উন্নয়ন করতে গেলে চীন জাতির দীর্ঘস্থায়ী স্বার্থে কাজ করা প্রয়োজন। অঞ্চলটিতে গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়ন বেগবান করতে হবে।
দু’বছর পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে সি চিন পিং আবার ইয়াং চি নদীর দুতীরে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন পরিদর্শন করেন। সে সময় ইয়াং চি নদীর বদ্বীপের অর্থনৈতিক অঞ্চলের ১১০টি শহর বায়ুর মানের সূচক, ও দূষিত পানি সমস্যা মোকাবিলাসহ নানা খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছিল।
এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় অগ্রগতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়াও ব্যাপকভাবে এগিয়ে যায়। বর্তমানে ইয়াং চি নদীর বদ্বীপের ১১টি প্রদেশ ও শহরের জিডিপি’র পরিমাণ চীনের মোট জিডিপি’র ৪৫শতাংশ ছাড়িয়েছে।
রুবি/এনাম