রোববারের আলাপন: ষাটোর্ধ এক নানীর শরীরচর্চার গল্প
2021-01-08 21:24:13

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, আশা করি আপনারা ভাল আছেন। সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু আকাশ, সঙ্গে আছি আমি এনাম।

বন্ধুরা, আপনারা কি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন? যদি আমি দাদা-দাদির গল্প বলি, তাহলে আপনারা হয়তো ভাববেন এটি কোন ভাবেই শরীরচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তাইনা? আসলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। 

আজকে আমি আপনাদের একজন নানী’র শরীরচর্চার গল্প শোনাবো। কেমন? সম্প্রতি শাংহাই শহরের একজন ৬৮বছর বয়সি নানী মাদাম ছেন চি ফাং এর শরীরচর্চার ভিডিও ইন্টারনেটে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। 

শরীরচর্চা কেবল তরুণ-তরুণীদের জন্য ভাবা হলেও, মাদাম ছেন এ ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছেন।  ভিডিওতে সাদা চুলের এ নারীকে পূর্ণশক্তি নিয়ে সব ধরনের শরীরচর্চা করতে দেখা যায়। এতে অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারি অবাক হয়েছেন। 


মাদাম ছেন হচ্ছেন শাংহাই শহরের অধিবাসী। তিনি অবসর গ্রহণের আগে একটি মুদিখানায় চাকরি করতেন। তিনি বলেন, শরীরচর্চা করার আগে তাঁর শারীরিক অবস্থা একদম ভাল ছিলনা। মানসিক অবস্থাও এই ভালো তো এই খারাপ থাকতো। 

তিনি বলেন, “মেয়েকে জন্ম দেওয়ার পর থেকে আমার স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হতে ছিলো এবং মনের অবস্থাও ভালো ছিলনা।” 

তিনি আগে ব্যাডমিন্টন খেলতে অনেক পছন্দ করতেন। কিন্তু হাটুতে সমস্যা দেখা দিলে তিনি খেলা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এদিকে শরীরচর্চা কম করার কারণে তাঁর ওজন বাড়তে শুরু করে। 
 
২০১৮ সালে একটি শারীরিক পরীক্ষায় তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর ফ্যাটি লিভার ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। ফলে তিনি আবার শরীরচর্চা শুরু করেন। সে বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি প্রথমে ব্যায়ামাগারে প্রবেশ করেন। 

মিস্টার লিউ হচ্ছেন মাদাম ছেনের কোচ। তিনি বলেন, “ষাটোর্ধ প্রবীণদের ব্যায়ামাগারে খুব কমই দেখা যায়। আমি যখন প্রথম মাদামকে দেখি, তখন তাঁর শারীরিক অবস্থা এতটা ভালো ছিলনা। তাঁর হাটুতে সমস্যা ছিল। হাটুর ব্যথায় তিনি অনেক ভোগেছেন। তাঁর পেশিগুলোও অনেক দুর্বল ছিলো।” 

২০১৯ সালের প্রত্যেক দিন মাদাম ব্যায়ামাগারে আসেন। কোচের নিদের্শনায় এবং নিজের নিরলস প্রচেষ্টায় তাঁর শারীরিক অবস্থা দিন দিন ভালো হতে থাকে। তারপর তিনি পর্যায়ক্রমে তাঁর শরীরচর্চার ধরন উন্নত করতে থাকেন । তিন মাসের প্রশিক্ষণের পর তিনি ১৪ কিলোগ্রাম ওজন কমিয়েছেন। আবার শারীরিক পরীক্ষায় তাঁর শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। 

মাদাম ছেন বলেন, “প্রথম মাসে আমার ওজন ৫ কিলোগ্রাম কমেছে, তিন মাস পর আমি একেবারে একজন নতুন মানুষ বনে যায়। লোকজন মাঝে মাঝে আমার প্রশংসা করেন। তাঁরা মনে করেন, হয়তো আমি অনেক কষ্টকর প্রক্রিয়া অতিক্রম করে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছি। কিন্তু আসলে আমি শরীরচর্চার প্রতি মিনিট সময়কে উপভোগ করেছি এবং এখনও করি।”

নিরলসভাবে শরীরর্চচার মাধ্যমে মাদাম ছেন সুস্থ হয়েছেন। তাই তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা অন্য বন্ধুদেরকে বলতে চান । মহামারীর সময় তিনি তাঁর কোচদের সঙ্গে শরীরচর্চার একটি অনুশীলন টিকটকের মাধ্যমে আনলাইনে শেয়ার করেছেন। 

আনলাইনে মাদাম ছেনের নাম হচ্ছে রাতের মুক্তা । তিনি আশা করেন, একটি রাতের মুক্তার মতোই, তিনি নিজকে এবং অন্যদেরকে আলোকিত করতে পারবেন। বর্তমানে তিনি অনলাইনে শরীরচর্চার জন্য অনেক জনপ্রিয়। টিকটকে তাঁর এ্যাকাউন্টের ৪লাখেরও বেশি ভক্ত রয়েছে। 

সম্প্রতি মাদাম ছেন চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএজমি’র একটি টিভি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছেন। এতে তিনি আরও বেশি মানুষকে শরীরর্চ্চায় অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করেছেন।