কয়েকটি দেশ চীনা টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার কথা স্বীকার করেছে
2021-01-08 15:02:40

জানুয়ারি ৮: কোভিড-১৯ মহামারী এখনও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। একাধিক দেশ পৃথক পৃথকভাবে নিজ নিজ জনগণকে কোভিড-১৯ মহামারী টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা কার্যকর করা শুরু করেছে। এদিকে, নতুন বছরে অনেক দেশ চীনা টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং চীন থেকে টিকা আমদানির চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল (বৃহস্পতিবার) ব্রাজিলে চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বুতান তান ইনস্টিটিউট সেদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী, ব্রাজিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চীন থেকে ১০ কোটি কোভিড-১৯ টিকা আমদানি করবে। এর মধ্যে ৪.৬ কোটি টিকা সাও পাওলো রাজ্যে পাঠানো হবে এবং বাকি ৫.৪ কোটি টিকা ফেডারেল সরকারের সমন্বয়ে অন্যান্য জায়গায় ব্যবহৃত হবে। ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এদুয়ার্দো পাজুয়েলো এদিন আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, আগামী ৩০ এপ্রিলের আগে প্রথম দফার ৪.৬ কোটি চীনা টিকা পাওয়া যাবে। আর চলতি বছরের মধ্যেই বাকি টিকাও পাওয়া যাবে। একই দিন সাও পাওলো রাজ্যের সরকার ও বুতান তান ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছে যে, চীনা টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। রাজ্যটি স্থায়ী সময় আজ (শুক্রবার) সেদেশের জাতীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান ব্যুরোর কাছে চীনা টিকার জরুরি ব্যবহারের আবেদন জানাবে।

স্থানীয় সময় বুধবার পেরুর প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিসকো রাফায়েল চীনের সাইনোফার্ম গোষ্ঠীর সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারী টিকা আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ঘোষণা করেন। চুক্তি অনুসারে, প্রথম দফার ১০ লাখ টিকা এ মাসের মধ্যেই পেরুতে পৌঁছাবে। প্রেসিডেন্ট বলেন, পেরুতে সাইনোফার্মের কোভিড-১৯ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, চীনা টিকা কার্যকর।

এদিকে, স্থানীয় সময় গত ৩ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়া এদিন থেকে গোটা দেশের ৩৪টি প্রদেশে চীনা টিকা ব্যবহারের কথা ঘোষণা করেছে। সেদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টিকা কাজকর্মবিষয়ক মুখপাত্র সিতি নাদিয়া তারমিজি বলেন, চীনা টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়েছে যে, এ টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। তিনি বলেন, ‘সাইনোফার্ম সিনোভ্যাক বায়োটেক কোম্পানির তৈরী টিকা তুরস্ক ও ব্রাজিলে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালেও একই ফল পাওয়া গেছে।’

ওদিকে, থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ৪ জানুয়ারি জানায়,  চীন থেকে ২০ লাখ টিকা তিন দফায় থাইল্যান্ডে আমদানি করা হবে।

এর আগে চীনা টিকা গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থানীয় সময় ৫ জানুয়ারি চীন থেকে আরও কয়েক লাখ টিকা আমদানির ঘোষণা দিয়েছে।  

এদিকে, স্থানীয় সময় ২ জানুয়ারি রাতে মিসরের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যামন্ত্রী হালা জায়েদ ঘোষণা করেন যে, সেদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে সাইনোফার্ম গোষ্ঠীর তৈরী কোভিড-১৯ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চীনা টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘মিসর ও চীন মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে পরস্পরকে সমর্থন করে আসছে।’ তিনি চীনকে মিসরকে  সহায়তা করায় ধন্যবাদ জানান। মিসরে চীনা টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল সুষ্ঠুভাবে চলেছে। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে টিকা খাতে গবেষণা ও মহামারী প্রতিরোধে সহযোগিতা চালানোর আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বস্তুত, বিভিন্ন দেশ চীনের সঙ্গে টিকা আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহেরেত্তিন কোকা সম্প্রতি জানান, তাঁর দেশ সাইনোভ্যাক বায়োটেক কোম্পানির সঙ্গে টিকা আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কয়েক দফায় ৫ কোটি চীনা টিকা তুরস্কে আমদানি করা হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সেদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাইনোভ্যাক বায়োটেক কোম্পানির সঙ্গে ১৯.১ কোটি টিকা আমদানির চুক্তি করেছে।  

চীন কোভিড-১৯ টিকার গবেষণা ও তৈরীর ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। চীন আন্তর্জাতিক টিকা সহযোগিতায় অংশ নিতেও ইচ্ছুক। চীন ইতিবাচকভাবে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকার গবেষণা ও উত্পাদনের সহযোগিতায় অংশ নেওয়ার উত্সাহ দেয়। সম্প্রতি চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং বলেন, চীন সরকার বরাবরই টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। চীনের টিকা গবেষণা ও উত্পাদন প্রতিষ্ঠানগুলো কঠোরভাবে বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম মেনে কাজ করে যাচ্ছে। (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)