অনলাইন চিকিত্সার ভবিষ্যত
2021-01-06 14:08:40

১ চীনের যান চলাচলকে ব্যাপক হারে প্রভাবিত করে মহামারি

 

সম্প্রতি গাইড মানচিত্র অ্যাপ্লিকেশন ‘২০২০ বার্ষিক চীনা ভ্রমণ প্রতিদেবন’ প্রকাশ করেছে । এতে বলা হয় যে, সদ্য বিদায়ী বছরের জানুয়ারির শেষ দিক থেকে মার্চ মাসের শেষ দিক পর্যন্ত চীনের প্রধান শহরগুলোতো গাড়ি চলাচল তুলনামূলক কম ছিল। তবে, ৩ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় গাড়ি চালাচল আবার বৃদ্ধি পায়। চীনের জাতীয় দিবস ১ অক্টোবরে গাড়ি চলাচলের পরিমাণ ছিলো সবচেয়ে বেশি।

 

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি যখন উহান শহরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়, তখন থেকে সারা চীনে গাড়ি চলাচল ক্রমশ কমতে থাকে, এবং ১৫ ফেব্রুয়ারিতে সে বছরের সবচেয়ে কম গাড়ি চালাচল করেছিল।

 

বর্তমানে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার পাশাপাশি উত্পাদন পুরুদ্ধার হয়েছে চীনে। গত ৩ এপ্রিল চীনের গাড়ি চলাচল সূচক ছিলো ১০৫.১শতাংশ।  জুন থেকে দেশটির নানা জায়গায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা শূন্যে নেমে আসে। ফলে সারা দেশে আবার গাড়ি চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

২০২০ সালের প্রথমার্ধের পুরোটাজুড়ে লোকজন নিজ গৃহে সময় কাটান। সে সময় তারা নিয়মিত মানচিত্র অ্যাপ্লিকেশনে বাজার করতেন। কিন্তু বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, তারা সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করেন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, দর্শনীয় স্থান, শপিং মল, রেল স্টেশন ও হোটেলসমূহে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ গমন করে কুয়াং চৌ দক্ষিণ রেল স্টেশনে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর ৪লাখ ৩৭হাজার যাত্রী কুয়াং চৌ দক্ষিণ রেল স্টেশনের মাধ্যমে ভ্রমণ করে সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করে।

 

মহামারির প্রভাব কাটিয়ে ২০২০ সালে চীন বিশ্বের একমাত্র বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে তার প্রবৃদ্ধিকে মহামারির আগের ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০২০ সালে গাইড মানচিত্রে দেখায় যে, সারা দেশে ছোট ছোট দোকানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এপ্রিল মাসের তুলনায় ডিসেম্বর মাসে এ সংখ্যা ২৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে কুই চৌ, কান সু, ছুং ছিং, ছিংহাই, শানসি, হ্যপেই, ইউন নান ,হ্য নান, হাই নান ও ইনার মঙ্গোলিয়ায় ছোট দোকানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ছোট দোকান জীবনকে আরও রঙিন করেছে এবং অর্থনীতির পুরুদ্ধারে প্রাণশক্তি যুগিয়েছে।

 

অর্থনীতি দ্রুত পুরুদ্ধারের পেছনে কোটি কোটি শ্রমিকের অবদান রয়েছে। পরিসংখ্যা অনুযায়ী, কুয়াং চৌ, শাংহাই, শেনচেন, ছেংতু, বেইজিং, তুং কুয়ান, হাং চৌ,সু চৌ, ফুও শান ও ছুংছিং শহরের লোকেরা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছে।  

 

২ অনলাইন চিকিত্সার ভবিষ্যত

মহামারির কারণে মানুষ বেশি করে অনলাইন চিকিত্সার কথা শুনেছে ও ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা পেয়েছে। সরকারের সমর্থন এবং চাহিদা বাড়ার প্রেক্ষাপটে অনলাইন হাসপাতালের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে।

 

জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন কতৃক গেল বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী চীনে প্রতিষ্ঠিত হয় ৯০০টি অনলাইন হাসপাতাল। এর মধ্যে ২০২০ সালের প্রথমার্ধেই চালু হয় ২১৫টি। মহামারির সময়ে অনলাইন চিকিত্সা গ্রহণকারীর সংখ্যা ১৭গুণ বেড়েছে এবং অনলাইন হাসপাতাল থেকে পরামর্শ নেয়ার মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে ২০গুণ। আগামি ১-৩ বছরে অনলাইনে চিকিত্সা গ্রহণ ও প্রেসক্রিপশন নেওয়া মানুষের সংখ্যা বর্তমানের ১০শতাংশ থেকে ৫০শতাংশে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

মহামারির সময়ে অনলাইন চিকিত্সা সেবাপ্রদানকারীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। ২০২০ সালের ৬মাসে অনলাইনে সেবাদানকারী ডাক্তারের সংখ্যা ২০১৯ সালের সারা বছরের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সংস্থার পূর্বাভাস মতে, আগামি ৩বছরের মধ্যে চীনের দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে উপরের শ্রেণীর সব হাসপাতালে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠিত হবে। ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার নীতি প্রণয়ন করে অনলাইন চিকিত্সাকে সমর্থন দিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে চীনের হাসপাতালগুলোর ৮০ শতাংশই অনলাইন সেবা প্রদান করবে।

 

 

৩ বেইজিংয়ে কোভিড-১৯ টিকাদান শুরু

সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে, বেইজিংয়ে কোভডি-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চীনের বসন্ত উত্সব অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আমদানিকৃত হিমায়িত পণ্যের শুল্ক বিভাগের কর্মী, ও সব বন্দরের কর্মীসহ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ৯ ধরনের লোকজনকে টিকা দান শেষ করা হবে। এদের টিকাদান শেষ হওয়ার পর টিকার উত্পাদন পরিমাণ আরও বাড়বে এবং সাধারণ মানুষও চাইলে টিকা গ্রহণ করতে পারবে।

 

ভিড় এড়াতে টিকা গ্রহণের জন্য আগাম সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। টিকা গ্রহণকারীদের জন্য চালু হয়েছে গ্রীণ চ্যানেল। টিকা গ্রহণের প্রক্রিয়া মাত্র ১০ মিনিটে সম্পন্ন হয়। করোনাভাইরাসের টিকার বৈশিষ্ট হলো, প্রত্যেককে দুই ডোজ টিকা নিতে হয়। প্রথম ডোজ নেওয়ার অন্তত ১৪ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়।

 

গর্ভবতী, ও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন মহিলা, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ, গুরুতর লিভার ও কিডনি রোগী, এবং মারাত্বক ক্ষতিকর টিউমারের রোগীগণ আপাতত কোভিড-১৯ টিকা নিতে পারেন না।

বেইজিং স্বাস্থ্য কমিশনও সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, এ পর্যন্ত কোন টিকাই পুরোপুরি কোন ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে নি। খুব কম সংখ্যক মানুষ এ টিকা নিলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে না। তাই টিকা নেওয়ার পরও মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে, এবং সামাজিক দূরুত্ব মেনে চলতে হবে। প্রয়োজন হলে নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষা করাতে হবে।

(শিশির/এনাম/রুবি)