ক্রীড়াবিষয়ক চলচ্চিত্র ‘Tough Out’
2021-01-06 12:34:21

ক্রীড়াবিষয়ক চলচ্চিত্র ‘Tough Out’_fororder_bang

ক্রীড়াবিষয়ক চলচ্চিত্র ‘Tough Out’_fororder_bang1

ক্রীড়াবিষয়ক চলচ্চিত্র ‘Tough Out’_fororder_bang2

 ‘Tough Out’ নামে এ চলচ্চিত্রে চীনের জুনিয়র বেসবল দলের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

এই জুনিয়র বেসবল দলের সদস্যরা একটু বিশেষ ধরণের। তারা হচ্ছে গ্রামে থেকে যাওয়া কিশোর। তাদের বাবা-মা কাজের জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়েছেন; তবে তারা গ্রামে রয়ে যায় ও সেখানেই জীবনযাপন করছে। চলচ্চিত্রে ক্রীড়ার মাধ্যমে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের গল্প তুলে ধরা হয়।

 

সম্প্রতি এ চলচ্চিত্রের পরিচালক সুই হুই চিং সিনহুয়া বার্তা সংস্থায় দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ক্রীড়ার উত্সাহব্যঞ্জক শক্তি চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরায় তা আরো বেশি আবেদন সৃষ্টি করেছে।

চীনের সিনেমা হলে প্রদর্শিত ক্রীড়াবিষয়ক ‘Tough Out’ চলচ্চিত্রটি চলতি বছরের তরুণদের নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র এবং তা শ্রেষ্ঠ পূর্ণ দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার লাভ করে। তা ছাড়া, সদ্যসমাপ্ত চীনের কুয়াংচৌ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্যচিত্র উত্সবে জুরিবোর্ডের সুপারিশে এ প্রামাণ্যচিত্রটি পুরস্কার ছিনিয়ে নেয়। পরিচালক সুই হুই চিং বলেন, এ চলচ্চিত্র তৈরির তিন বছরের মধ্যে বেসবল সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজানা একদল তরুণের দুর্দান্ত সফলতা পাওয়া পর্যন্ত নানা ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ছাং বাং’ অথবা ‘শক্তিশালী ও চমত্কার’ নামে এই বেসবল দলের কোচের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছেন চীনের জাতীয় বেসবল দলের সদস্য। তারা দিনের পর দিন যে কাজটি করেছেন তা হলো, তরুণদের মধ্যে যারা বেসবল খেলায় দক্ষ তাদেরকে প্রাদেশিক ও জাতীয় দলে পাঠানো এবং তাদেরকে ভালো ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেওয়া। তাদের ধরে রাখার চেতনা আমাকে দারুণ মুগ্ধ করেছে।

 

পরিচালক বলেন, দলের সদস্যদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আপনি তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বুঝতে পারবেন। এই দলের সদস্যদের বেশিরভাগই পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এসেছে। তাদের বাবা মা সারা বছর ধরে শহরে কাজ করেন বা ছোটবেলা থেকেই তারাই অনাথ। সুন লিং ফোং নামে বেশ কয়েকজন কোচ বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদেরকে বেইজিংয়ে নিয়ে আসেন। তারা মনে করেন, গ্রাম থেকে আসা এসব কিশোর শহরের কিশোরদের তুলনায় আরো বেশ কষ্ট সহ্য করতে পারবে। পাশাপাশি, তারা আশা করেন, ক্রীড়ার মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যত আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

 

পরিচালক বলেন, বেসবল ছাড়া তাদের ভবিষ্যত সহজেই কল্পনা করা যায়। হয়তো তারা সারা জীবন জন্মস্থানের সেই ছোট গ্রামেই বাস করতো। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমি সবাইকে আশা দিতে চাই। চলচ্চিত্রে বেসবল খেলা থেকে তৈরি হওয়া আনন্দের প্রকাশ ঘটায় কিশোররা। তাদের বেঁচে থাকার সুযোগ ও নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে বেসবল খেলা।

 

বাড়িতে ফিরে আসা সংক্রান্ত একটি খেলা বেসবল। কারণ বেসবল খেলায় হোম বেসে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে স্কোর অর্জন করতে হয়। পরিচালক বলেন, ছত্রভঙ্গ অবস্থার সম্মুখীন হতে বাধ্য হয় বেসবল দলের সদস্যরা। আসলে মানুষের বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সহচার্য। দলীয় খেলা হিসেবে বেসবল দলের সদস্যরা সহাবস্থান ও তাদের মনের শূন্যতা পূরণ করতে পারে। এটি হলো তাদের জন্য এই খেলাধুলা থেকে পাওয়া আরেকটি কল্যাণকর বিষয়।

 

বিশিষ্ট দৃষ্টিকোণ এবং সামাজিক উদ্বেগে ভরপুর একটি প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে  ‘Tough Out’ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের আগে অনেক বিখ্যাত পরিচালক ও অভিনেতা-অভিনেত্রী এটি নিয়ে কথা বলেন- যা নানা আলোচনার সূত্রপাত করে। চীনের অলিম্পিক কমিটি এবং চীনের বেসবল সমিতি এই চলচ্চিত্রের জন্য প্রবন্ধ প্রকাশের পাশাপাশি, তৃণমূলের অনেক বেসবল ক্লাব ও প্রশিক্ষণ সংগঠনও এই অনুপ্রেরণামূলক চলচ্চিত্র উপভোগের আহ্বান জানায়।

 

এই চলচ্চিত্র হলো চীনা চলচ্চিত্রের মধ্যে বিশেষ ধরনের চলচ্চিত্র। ‘Woman Basketball Player No.5’ এবং ‘The Drive to Win’সহ বেশ কয়েকটি ক্ল্যাসিকাল চলচ্চিত্র চীনের এক প্রজন্মের মানুষকে উত্সাহ দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রীড়া থিমটি চলচ্চিত্র প্রযোজকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ‘Unbeatable’ এবং ‘TO THE FORE’ নামে বিভিন্ন ক্রীড়া-বিষয়ক চলচ্চিত্র বক্সঅফিসে ভালো আয়ের সাথে সাথে তা দর্শকদের প্রশংসাও লাভ করে।

 

চলতি বছর ৩৩তম গোল্ডেন রুস্টার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে পরিচালক (Peter Chan) পিটার চানের পরিচালিত ‘তুও কুয়ান’ চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসসহ তিনটি পুরস্কার লাভ করে। সৌভাগ্যের বিষয় হলো- তিনি চলতি বছরের ফাস্ট তরুণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ক্রীড়ার প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার মাধ্যমে বোঝা যায়, কেন তিনি ‘Tough Out’ নামে এ চলচ্চিত্রের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন।

 

পরিচালক সুই হুই চিং মনে করেন, ক্রীড়াকে কেন্দ্র করে নির্মিত চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের বাস্তবতা তুলে ধরা হলো খুব ভালো একটি পদ্ধতি। কারণ ক্রীড়া বিষয়ক নানা থিম জনগণের কাছে খুবই সমাদৃত হয় এবং তা সবার মধ্যে একই আবেদন সৃষ্টি করতে পারে। অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, খেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো প্রতিযোগিতা। তাই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে আমরা বিভিন্ন চরিত্রের বড় হওয়া বা পরিপক্ব হওয়ার প্রক্রিয়া দেখা যায়।

 

পরিচালক সুই হুই চিং বলেন, ক্রীড়া-বিষয়ক নানা থিম নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করার সময় আমাদের উদ্দেশ্য হলো- ক্রীড়ার মাধ্যমে মানুষের ওপর দৃষ্টি দেওয়া। হয়তো এ চলচ্চিত্র দেখার আগে বেসবল সম্পর্কে আপনাদের কোনো জ্ঞান ছিলো না এবং চলচ্চিত্র দেখার পর সে অবস্থা খুব একটা পরিবর্তন হয় না। তবে চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রগুলোর অভ্যন্তরীণ সংবেদনশীলতা বোঝা যায়। সুই হুই চিং মনে করেন, ক্রীড়াবিষয়ক চলচ্চিত্রগুলোতে ক্রীড়া বিষয়টি বহনকারী মাত্র, এর সারমর্ম হলো মানুষের অবস্থা তুলে ধরা।

 

পরিচালক সুই হুই চিং বলেন, ভবিষ্যতে ক্রীড়াসংক্রান্ত নানা থিম নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। ক্রীড়াসংক্রান্ত চলচ্চিত্র তৈরি করার জন্য আরো পরিপক্ব দল ও আরো বেশি পুঁজি দরকার। আসলে খেলাধুলা সংক্রান্ত উত্তেজনাপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বের কথা জোর দিয়ে বলেন তিনি।

(লিলি/তৌহিদ)