এবারও নতুন বছরে প্রথম আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
2021-01-04 15:16:11

 

 

জানুয়ারি ৪: আবারও নতুন বছরে প্রথম আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ৪ থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত, চীনা রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই নাইজেরিয়া, গণতান্ত্রিক কঙ্গো, বোতসোয়ানা, তাঞ্জানিয়া ও সেশেলস সফর করবেন। গত ৩১ বছর ধরেই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নতুন বছরে প্রথম আফ্রিকা সফর করে আসছেন।  

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বে আরও মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। চীন গেল বছর বিভিন্ন সংকট অতিক্রম করেছে। নতুন বছরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্যস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন আফ্রিকাকে। এতে আফ্রিকার ওপর চীনের গুরুত্বারোপ প্রতিফলিত হয়। এতে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের বেইজিং শীর্ষসম্মেলন এবং মহামারী মোকাবিলায় চীন ও আফ্রিকার যৌথ প্রচেষ্টাসংক্রান্ত বিশেষ শীর্ষসম্মেলনের ফলাফলের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি, এ সফর চীন-আফ্রিকা ঐতিহ্যবাহী মৈত্রীকেও আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

১৯৯১ সালে তত্কালীন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো আফ্রিকা সফর করেন। সেই থেকে নতুন বছরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম আফ্রিকা সফরের রীতি চালু আছে। চীন সরকারের আফ্রিকাবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি সু চিং হু মনে করেন, এই চমত্কার ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে বিগত কয়েক দশকে চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের চরিত্র ফুটে ওঠে। চীন ও আফ্রিকা সুখে ও দুঃখে একে অপরের পাশেই থেকেছে সবসময়।

বিশ্বের বড় দেশগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাই পর পর ৩১ বছর নতুন বছরের প্রথম বিদেশ সফরের জন্য আফ্রিকাকে বেছে নিয়েছেন। এতে বোঝা যায়, চীন সবসময় আফ্রিকার দেশগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় নিযুক্ত চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত লিউ কুইচিন বলেন, চলতি সফরের সঙ্গে জড়িত পাঁচটি দেশ পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য-আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা এবং ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। চীন সার্বিকভাবে আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করেছে, যা চীন-আফ্রিকা অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলার প্রতি গভীর কমিটমেন্টের বহিঃপ্রকাশ।

চীন ইতোমধ্যেই ১৫টি আফ্রিকান দেশে মহামারী প্রতিরোধে চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে। ২০২০ সালের শেষের দিকে ১৫টি আফ্রিকান দেশের সুদমুক্ত ঋণ মকুওফ করতে আফ্রিকার ১২টি দেশের সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে চীন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মহামারী মোকাবিলায় হাতে হাত রেখে প্রচেষ্টা চালানো চীন ও আফ্রিকার মৈত্রীকে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করেছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের সফর আফ্রিকার দেশগুলোর মহামারী প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকাও রাখবে।  

সু চিংহু বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দেশ হিসেবে চীন এবং অনেকগুলো উন্নয়নশীল দেশের সমন্বয়ে গঠিত এক মহাদেশ হিসেবে আফ্রিকা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরস্পরের প্রকৃত মিত্র। উন্নয়নশীল দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংকট মোকাবিলা করতে, বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে চীনা অবদান রাখতে ইচ্ছুক বেইজিং। এই সফর বিশ্বের কাছে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

২০২০ সালে একতরফাবাদ, বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ, এবং আধিপত্যবাদ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করেছে। চীনের আফ্রিকা গবেষণালয়ের উপ-প্রধান লি সিন ফেং মনে করেন, এবারের সফরের মাধ্যমে চীন পুনরায় বলতে চায় যে, আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সুসংহতি জোরদার করার গুরুত্ব চীনের কাছে অনেক বেশি।  

চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক নিয়ে সম্প্রতি সৃষ্টি বিভিন্ন গুজব সম্পর্কে লি সিনফেং বলেন, এই সফর উচ্চকণ্ঠে বলবে যে, চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্ব অবিচ্ছেদ্য এবং চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে পরিচালিত নয়। চীন-আফ্রিকা ঐক্য ক্ষুন্ন করার তৃতীয় পক্ষের যে-কোনো প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হবে।

২০২১ সাল হচ্ছে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামসংক্রান্ত বেইজিং শীর্ষসম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত বছর। এই বছরে সেনেগালে নতুন ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সফরে নতুন ফোরামের প্রস্তুতির বিষয়ে আফ্রিকান পক্ষের সাথে মতবিনিময়ও হবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)