কোভিড-১৯ মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ, দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক মন্দা—২০২১ সালে বিশ্ব অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। আবার এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পৃথিবীর মানুষ সাফল্যও পেয়েছে, যা আশার কথা। ২০২২ সালেও আমরা এসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবো। মহামারী আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, যতক্ষণ না আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো, ততক্ষণ আমরা মহামারীর মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শতভাগ সফল হতে পারব না। ‘আজকের টপিক’ আসরে আমরা ২০২১ সালের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবো।
১. টিকা
২০২১ সালে কোভিড-১৯ টিকার ব্যবহার হয়েছে বিশ্বব্যাপী। এ পর্যন্ত বিশ্বে মোট ৮০০ কোটি ডোজ কোভিড-১৯ টিকা মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এক্ষেত্রে ব্যবধান ছিল আকাশ-পাতাল। এরই মধ্যে চীনসহ অনেক দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকার ন্যায্য বন্টন নিয়ে কাজ করেছে এবং অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ বাড়াতে সচেষ্ট থেকেছে। চীন গোটা বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে এবং নিজের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে।
ফিলিপিন্সের মহামারী প্রতিরোধ কার্যালয়ের জেনারেল কো-অর্ডিনেটর বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে যে, চীনা বিমানটি জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন নিয়ে ফিলিপিন্সে আসতে দেখে দেশের প্রেসিডেন্ট খুব খুশি হয়েছিলেন। এটি আমাদের জনগণের জন্য বড় আশা নিয়ে আসে।’
২. জীববৈচিত্র্য এবং কার্বন নির্গমন
২০২১ সালের অক্টোবরে চীনের খুনমিং-এ জৈববৈচিত্র্যসংক্রান্ত কনভেনশনে স্বাক্ষরকারীদের পঞ্চদশ সভা (COP15) অনুষ্ঠিত হয়। এতে খুনমিং ঘোষণা গৃহীত হয়। নভেম্বরে ‘জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামো কনভেশন’-এর সম্মেলন ব্রিটেনের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ‘প্যারিস চুক্তি’ বাস্তবায়নের বিস্তারিত নিয়ম নিয়ে দেশগুলো মতৈক্যে পৌঁছায়।
৩. অলিম্পিক
২০২১ সালের জুলাই ও অগাস্টে ৩২তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়। অলিম্পিকের চেতনা বিশ্বকে মহামারীর মধ্যেও একত্রিত করে। আর আসন্ন ২০২২ বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক অবশ্যই অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকবে। ইতালির অলিম্পিক গেমসের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের সাফল্য কামনা করি। আমরা সকলেই জানি এই শীতকালীন অলিম্পিক কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে। আমরা একটি ভাল অলিম্পিকের পরিবেশ ও মানবজাতির চেতনা তুলে ধরতে চাই।’
৪. দারিদ্র্য
২০২১ সাল ছিল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী। চীনে সার্বিকভাবে স্বচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূর করেছে। মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তুলতে চীন ২০২১ সালেও কাজ করে গেছে। তানজানিয়ার শস্য ব্যবসায়ী কামভিরা বলেন, ‘আমি চার বছর ধরে খাবারের ব্যবসা করছি। এই সময়ের মধ্যে, আমি তানজানিয়া-জাম্বিয়া রেলওয়েতে ভ্রমণ করেছি। ট্রেনের টিকিট বাসের টিকিটের চেয়ে সস্তা ছিল। তানজানিয়া-জাম্বিয়া রেলওয়ে আমার জীবনকে আরও উন্নত করেছে এবং আমার সন্তানদের জীবন আরও ভালো হয়েছে।’
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা অফিসের অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালক আবদুলাতিফ বলেন,
‘চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দুই পর্যায়ে সাহায্য করে থাকে। একদিকে উন্নয়নের পথ দেখায়, অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহায়তাও দেয়।’
৫. অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার
যদিও বিশ্ব অর্থনীতি এখনও মহামারীর ছায়ায় রয়েছে, আগের বছরের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির তুলনায় ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
এই বছর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের যোগদানের ২০তম বার্ষিকী এবং ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রস্তাবের অষ্টম বছর। নভেম্বর মাসে, চীন আবার আমদানি মেলা সফলভাবে আয়োজন করে।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ২০২২ সালে মানবজাতি মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন এবং যুদ্ধের মতো অনেক সমস্যার মুখোমুখি হবে। শুধুমাত্র হাত মেলানো, সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতার চর্চা এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে জাতিসংঘের মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে রক্ষা করার মাধ্যমেই সব দেশ ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। মনে রাখতে হবে, মানুষের একটিই পৃথিবী রয়েছে। এই পৃথিবীতে সবাইকে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যেতে হবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)