হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক অলিভার স্টোন
2021-12-30 10:00:18

সম্প্রতি হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এবং তিনবার অস্কার অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী অলিভার স্টোন এবং তার ছেলে শিন স্টোন সিনহুয়া বার্তা সংস্থাকে একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছেন।  তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ সৃষ্টিতে আসক্ত এবং অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে অযৌক্তিকভাবে পদদলিত করে। এর কারণ হল- মার্কিন অর্থনীতি সামরিক শিল্পের উপর অনেক নির্ভরশীল এবং গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক কর্তৃপক্ষ মার্কিন রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে।

 

অলিভার স্টোন ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তিনি ‘Platoon’, ‘Wall Street’, ‘jfk’এবং ‘Born on the Fourth of July’সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে ওঠেন। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন লেখক ও ঐতিহাসিক। তিনি সাংবাদিক হিসেবে ভেনিজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ, কিউবার সাবেক নেতা ফিদেল কাস্ট্রো এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবেই তিনি এখন বর্তমান রাজনৈতিক ভাষ্যকার।

 

সাক্ষাত্কারে অলিভার স্টোন বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর Military Keynesianism সামরিক কিনেসিয়ানিজম দেখা দেয়। মার্কিন রিপাবলিকান পার্টি এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলো যে, যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাব্দীর ৩০ দশকের পর আবারও বিষণ্ণতায় পড়ে। তাই মার্কিন অর্থনীতির পতন ঠেকাতে অর্থনীতিকে সামরিকীকরণ করা এবং সামরিক শিল্পে পুঁজি বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিলো। যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। কারণ যুদ্ধ করার চেয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া বেশি লাভজনক।

 

সম্প্রতি অলিভার স্টোন মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট জন কেনেডি’র গুপ্তহত্যা বিষয়ক এক তথ্যচিত্র শুটিং করেছেন। তিনি সাংবাদিককে বলেন, কেনেডি বলেছিলেন যে, ‘আমি নিশ্চিত নই যে, আমি সত্যিই পুরো সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি কারণ সামরিক এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আমার পিছনে গোপনে কাজ করছে।’

‘আমরা মনে করতাম যে, শীতল যুদ্ধের অবসান ঘটবে এবং শান্তি ফিরে আসবে, কিন্তু বাস্তবে, অর্থ এখনও সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছেই প্রবাহিত হচ্ছে।’ অলিভার স্টোনের দৃষ্টিতে, শীতল যুদ্ধের সমাপ্তি ছিল একটি বিভ্রম। আসলে, শান্তি আসেনি।

 

অলিভার স্টোন সম্প্রতি ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত অস্ত্র চুক্তি থেকে নিজেকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করেছেন এবং চীনের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক সামরিক কাজে জড়িয়ে থাকা ও তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন।

 

সাক্ষাত্কারে অলিভার স্টোনের ছেলে শিন স্টোন সন্ত্রাসদমন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছি। সেই সময় ছিলো ঠান্ডা যুদ্ধের শেষ দিক। এরপর ১৯৯১ সালে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। স্নায়ুযুদ্ধ থেকে রেহাই পাওয়ার পর পরই যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দশকে ধারাবাহিক যুদ্ধ শুরু করে। এসব যুদ্ধ একটি পর একটি দেশকে ধ্বংস করেছে। আমি মনে করি, সেসময় যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্যবাদের প্রতি আসক্ত ছিলো, অর্থাৎ আমরা জিতেছি, সুতরাং আমরা যা খুশি তাই করতে পারি।’

শিন স্টোন মনে করেন, মার্কিন মূলধারার গণমাধ্যম অব্যাহতভাবে আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলেছে এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা জোরদার করা। তিনি বলেন, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাশিয়া পৈশাচিক আচরণ করে। জনগণ আবার স্নায়ুযুদ্ধের ফাঁদে পড়েছে। সামরিক পক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থা ‘রাশিয়ার হুমকি তত্ত্ব’ প্রচার করেছে।

শাউন স্টোন বলেন, ১১ই সেপ্টেম্বর দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছে। তার হামলার আওতা আর জাতীয় সীমানায় সীমাবদ্ধ নেই। যে কোনো দেশকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে টার্গেট করে ড্রোন হামলা এবং আগ্রাসন চালাতে পারে। এ ধরনের ঘটনা আজও ঘটছে বলে উল্লেখ করেন শাউন স্টোন।

 

শিন স্টোন সিরিয়াকে একটি উদাহরণ হিসেবে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে যে করেছে তার ফলে সশস্ত্র সংগঠনের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে এবং তা কয়েকটি দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ‘মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। অনেক লোক ইউরোপে প্রবেশ করেছেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। তারপর এতে আরও জেনোফোবিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যেমন আমার বাবা উল্লেখ করেছিলেন, আপনি যদি অন্যান্য দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তি নষ্ট করেন, ফলে অশান্তি তৈরি হবে এবং মানুষ গৃহহারা হবে। অবশেষে আপনিও শান্তিতে থাকতে পারবেন না।