ডিসেম্বর ২৯: ২০২১ সালে জটিল ও কঠিন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মধ্যেও চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে উন্নত হয়েছে।
অক্টোবর মাসে ডেনমার্কের বিখ্যাত খেলনা প্রস্তুতকারক কম্পানি লেগো গ্রুপ চীনের কুয়াংচৌ শহরে বিশ্বের বৃহত্তম ফ্ল্যাগশিপ দোকান খোলে। ৭২১ বর্গমিটার আয়তনের দোকানটি অনেক চীনা শিশুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে লেগো গ্রুপ চীনে ৭০টিরও বেশি চেইন স্টোর ও একটি ফ্ল্যাগশিপ দোকান খুলেছে। ২০২২ সালে আরও ৮০টি দোকান খোলার পরিকল্পনা আছে লেগোর। লেগো গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ইউয়ান ওয়েই বলেন,
“গত দশ বছর ধরে আমরা দ্রুত সামনে এগিয়েছি। মহামারীর মধ্যেও আমরা চীন সরকারের ভোগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রচেষ্টা দেখেছি। আমরা সংশ্লিষ্ট নীতিতে উপকৃত হতে চাই এবং ভোগ বাড়াতে নিজস্ব অবদান রাখতে চাই।”
টানা ৪ বছর ধরে লেগো কম্পানির পণ্য চীনে ১০ শতাংশ হারে বেড়েছে। চীনে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়ে তারা চীনা বাজারের প্রতি ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনার প্রতি নিজেদের আস্থার পরিচয় দিচ্ছে।
২০২১ সালে মহামারীর মধ্যেও চীনে আসা বিদেশি বিনিয়োগ ১০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম ১১ মাসে চীনে ব্যবহৃত বিদেশী বিনিয়োগ ১ লাখ ৪২২০ কোটি ইউয়ান ছিল, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫.৯ শতাংশ বেশি। এ সম্পর্কে চীনের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক সাং পাই ছুয়ান বলেন,
‘মহামারী ভাল করে নিয়ন্ত্রণে রাখার ফলে চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে পেরেছে। যার ফলে, বিনিয়োগের নিরাপত্তা ও মুনাফা নিশ্চিত হয়েছে। তাই বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য চীন একটি আদর্শ দেশ।’
শুধু আন্তর্জাতিক কম্পানি নয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অর্থনৈতিক পূর্বাভাস থেকেও চীনের ওপর তাদের আস্থার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংক ২০২২ সালে চীনের জিডিপি যথাক্রমে ৫.৬ শতাংশ ও ৫.৪ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে, যা বিশ্বের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারের চেয়েও বেশি।
তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সঙ্কুচিত হওয়ার প্রেক্ষাপটেও চীনের আমদানি-রপ্তানি টানা ১৬ মাস ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে চীনের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৫.৩৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উগ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে আমাদানি-রপ্তানি ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স ও বিদেশে পণ্যগুদাম প্রতিষ্ঠাকে নতুন উন্নয়নের সূচক হিসেবে দেখা হয়। বিদেশে পণ্যগুদাম থাকায় অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার পর অধিকাংশ ভোক্তা ৭ দিনের মধ্যে পণ্য পেতে পারেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স ২০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পর্যন্ত চীনের বিদেশে প্রতিষ্ঠিত গুদম ১৯০০টি ছাড়িয়েছে, যার মোট আয়তন ১ কোটি বর্গমিটারেরও বেশি।
এসব সংখ্যার পেছনে রয়েছে একটি ক্রমশ উন্মুক্ত চীন। চীনের উন্নয়ন থেকে শুধু নিজ দেশের জনগণ উপকৃত হচ্ছে তা নয়, সারা বিশ্বের জনগণও উপকার পাচ্ছে। জার্মানির বোশ হোম অ্যাপ্লায়েন্সসের চীন অঞ্চলের মহাপরিচালক ডা. এলেক্সান্ডার ডোনি বলেন,
‘চীনের অব্যাহত উন্মুক্তকরণ ও সংস্কার হলো আমাদের চীনে বিনিয়োগের মুল কারণ। চীন উন্মুক্ত উদ্ভাবনকে উত্সাহ দেয়। তাই চীনে আমরা বৃহত্তম গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করি। তা ছাড়া, জার্মানি ও অন্যান্য দেশের গবেষণাকেন্দ্রের নতুন প্রযুক্তিগুলোও চীনে নিয়ে আসি।’
চীনের অব্যাহত উন্মুক্তকরণ ও উচ্চ মানের উন্নয়ন বিশ্বের অর্থনীতি এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, এ কথা বলাই বাহুল্য। চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের অন্যতম চালিকাশক্তি। (স্বর্ণা/আলিম/ছাই)