জনগণের কোনো কাজ ছোট নয়, জনগণই দেশের ভিত্তি
2021-12-29 10:09:34

জনগণের কোনো কাজ ছোট নয়, জনগণই দেশের ভিত্তি

 

জনগণ হলো দেশের ভিত্তি। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের দৃষ্টিতে, জনগণের সুখী জীবন নিশ্চিত করা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

এই বছর তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে জনগণের খোঁজ খবর নিয়েছেন। বাড়িঘর, অবসর জীবন, কর্মসংস্থান, চিকিত্সা, শিক্ষা...জনগণ যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়, তিনি সেসব বিষয় পরিদর্শন করেন এবং সেসব কাজের নির্দেশনা দেন।

যেখানেই তিনি যান, সেখানেই তিনি জনগণের সঙ্গে কথা বলেন: রান্নার জন্য যে বিদ্যুত্ ব্যবহার করা হয়, সেই বিদ্যুত্-এর দাম কেমন?

পরিবারে কতজন চাকরি করছে?

পরবর্তীতে তোমরা কি কি আশা করো?

তিনি নির্দেশনা দেন: সামাজিক নিশ্চয়তার জন্য জনগণ যে বিষয়ে বেশি মতামত দেয়, সেসব কাজ আরো বেশি করতে হবে। সবসময় ব্যাপক জনস্বার্থের কথা মনে রাখতে হবে, তাদের জন্য আরও কল্যাণকর কাজ করতে হবে।

চলতি বছর হল চীনের চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সূচনা বছর। সি চিন পিং-কেন্দ্রিক সিপিসি সরকার জনগণের কল্যাণে অনেক কিছুই করেছে।

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা প্রেসিডেন্ট সি’র সঙ্গে দেখবো, এই বছর চীনের উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনের পরিবর্তন কোন কোন খাতে হয়েছে।

 

কর্মসংস্থান হল জনগণের জীবনযাপনের ভিত্তি।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দেশের দারিদ্র্যবিমোচন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন, চীনে দারিদ্র্যমুক্তকরণে সার্বিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের উচিত দারিদ্র্যমুক্তকরণের সুফল এবং গ্রাম পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সংযুক্ত করে বিভিন্ন কাজ ভালোভাবে করা, যাতে দারিদ্র্যমুক্তের ভিত্তি আরো সুসংবদ্ধ হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে কর্মসংস্থান জোরদার করা হল স্থানান্তরের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত হওয়া জনগণকে সাহায্য করার এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা।

 

এই বছর, প্রেসিডেন্ট সি শিল্পায়নের উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান জোরদার করার ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন।

গত ৭ জুন, চীনের ছিংহাই প্রদেশের শেং ইউয়ান কার্পেট কোম্পানির কারখানায় যান প্রেসিডেন্ট সি। কোম্পানির একজন কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট সিকে জানান, কাছাকাছি বসবাস করা অনেক গৃহিণী কোম্পানিতে এসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিন-পাঁচ বছরের পর অভিজ্ঞ কর্মী হতে পারে, মাসিক বেতন ৫ হাজার হতে পারে।

 

প্রেসিডেন্ট সি এতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন: শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়। এই খাতে তিব্বতি বৈশিষ্ট্যময় কার্পেট শিল্প দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারে, গ্রামের উন্নতি করতে পারে, জাতীয় ঐক্য জোরদার করতেও পারে।

চীনের কুইচৌ প্রদেশের মিয়াও জাতির সূচিকর্ম, ফুচিয়ান প্রদেশের সা জেলার স্ট্রিড ফুড...এক একটি ছোট ছোট শিল্পের সমৃদ্ধ উন্নয়নের পিছনে বিভিন্ন জায়গা শিল্প উন্নয়নের জন্য কর্মসংস্থান জোরদার করা, গ্রামের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করার বড় গল্প।

গত মে মাসে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হ্য নান প্রদেশের নান ইয়াং শহর পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয় চীনের ‘দক্ষিণাঞ্চলের পানিসম্পদ উত্তরাঞ্চলে পাঠানো’ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ শহর। তিনি সেখানে বলেছিলেন, এই জলসেচ প্রকল্প নির্মাণের কারণে অনেক স্থানীয় জনগণের বাসা স্থানান্তর করা হয়। তাদের পরবর্তী জীবন নিশ্চিত করতে অব্যাহতভাবে কাজ করতে হয়। যাতে তারা স্থিতিশীল জীবন কাটাতে পারে, ধনী হওয়ার পদ্ধতি খুঁজে পেতে পারে।

 

চলতি বছর চীনের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। কর্মসংস্থানের সংখ্যা বাড়ছেই। প্রথম দশ মাসে দেশে ১১৩.৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্ট হয়েছে। যা নির্ধারিত সময়ের আগে পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করেছে।

 

কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিক্ষা কাজের ওপরও অত্যন্ত গুরুত্ব দেন সি চিন পিং।

গত এপ্রিল মাসে, প্রেসিডেন্ট সি বেইজিংয়ের ওয়েন ইয়ু নদীর পাশে বৃক্ষরোপণ কাজে অংশ নেন। তিনি প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের সঙ্গে গাছের চারা রোপণ করেন, শিশুদের লেখাপড়া ও শরীরচর্চার খোঁজ খবর নেন। তিনি শিশুদের উত্সাহ দিয়ে বলেন: একদিকে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে হয়, অন্যদিকে শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা জোরদার করতেও হয়।

 

ছয় মাস পর প্রেসিডেন্ট সি আবার কুয়াং সি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মাও সু গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর শিশুদের দেখে বলেন, তোমাদের উচিত ভালোভাবে পড়াশোনা করা, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দিয়ে গ্রামের উন্নয়ন করা, আধুনিক চীনের ভবিষ্যত তৈরি করা। আমরা বয়স্ক, মধ্যবয়সী এবং যুবক তিন প্রজন্মের মানুষ একসাথে আধুনিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবো।

 

চলতি বছরের মার্চ মাসে, দেশের ত্রয়োদশ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশনের অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে দেখা করার সময় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, শিক্ষা, স্কুল শিক্ষা হোক, পারিবারিক শিক্ষা হোক, পরীক্ষার স্কোরের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা ঠিক না। স্কোর শুধু অল্প সময়ের অর্জন, তবে সারা জীবনের উন্নয়নের দিক থেকে, যদি শিশুদের সুস্বাস্থ্য মানসিক অবস্থা তৈরি না হয়, তা নিশ্চয় হবে না। তিনি সবাইকে যৌথভাবে শিশুদের শিক্ষা কাজে নজর রাখার আহ্বানও জানান। তিনি বলেন, শিক্ষা সংস্কার সম্প্রসারণ করতে হয়, জনগণের সন্তোষজনক শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হয়।

 

এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট জনস্বাস্থ্যের ওপরও নজর রাখেন।

তিনি বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের সময় সবসময় বলেন, আধুনিকায়ন যাচাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হল জনগণের স্বাস্থ্য। তা হল জনগণের সুখী জীবনের ভিত্তি। এই কাজ ভালোভাবে করতে হয়, জনগণকে শীর্ষ স্থানে রাখা, প্রাণকে শীর্ষ স্থানে রাখা সিপিসি এবং গোটা সমাজের এক অভিন্ন চেতনা হতে হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সুস্বাস্থ্য যেন সংখ্যা ‘১’ এর মত, অন্য বিষয় যেন এই ‘১’ পরের শূন্য, ‘১’ ছাড়া ‘০’ থাকার তাত্পর্য নেই।

 

২৩ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের সা মিং শহরের সা জেলার হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সান মিং শহরের চিকিত্সা সংস্কারে সবসময় জনস্বার্থকে শীর্ষ স্থানে বিবেচনা করা হয়।

সংস্কার কার জন্য, আর কার ওপর নির্ভর করতে হয়? আসলে সব কিছুই জনগণের চাহিদা বিবেচনা করেই করতে হয়।

পরিদর্শনকালে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, অব্যাহতভাবে চিকিত্সা, ওষুধ ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার করতে হয়। শ্রেষ্ঠ চিকিত্সা সম্পাদক-কে ভারসাম্যপূর্ণভাবে বিন্যাস করতে হয়, তৃণমূল পর্যায়ের অবকাঠামো উন্নত করতে হবে, জনস্বাস্থ্যের জন্য নির্ভরগোয্য ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

প্রেসিডেন্ট সবসময় বলেন, জনগণ অসুস্থ হলে, চিকিত্সা করার অর্থ থাকতে হয়, তাদের ভালো চিকিত্সা সেবা দিতে হয়, এসব বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি।

 

অগাস্ট মাসে প্রেসিডেন্ট সি চিন পং হ্য পেই প্রদেশের ছেং দ্য শহরের তা কুই গ্রামের চিকিত্সা কক্ষ পরিদর্শন করেন, স্থানীয় গ্রামবাসীর চিকিত্সার অবস্থা, মহামারি প্রতিরোধের অবস্থার খোঁজখবর নেন। এসময় তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের অবকাঠামো ব্যবস্থা এবং গণসেবা ব্যবস্থার নির্মাণকে জোরদার করতে হবে, তৃণমূল পর্যায়ের গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরো সুসংহত করতে হবে।

 

গ্রামবাসী হো প্রেসিডেন্ট সিকে বলেন, এত বছরে আমাদের দেশে অনেক বড় পরিবর্তন হয়েছে, জনগণ জমি চাষ করলে সরকার ভর্তুকি দেয়, অসুস্থ হলে চিকিত্সা বীমা আছে, বড় রোগের বেশি খরচ হলে দেশে সহায়তা ব্যবস্থাও আছে, অবসর জীবনের নিশ্চয়তাও আছে। আপনাদের নেতৃত্বে জনগণ অনেক সুখী জীবন কাটাতে পারছে।

 

এর জবাবে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, আমরা জনগণের সেবাকারী, এটা শুধু একটি স্লোগান নয়, আমরা তো জনগণের জন্য কাজ করি, তা আমাদের দায়িত্ব।

জনগণের সুস্বাস্থ্য হলো সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তি, তা জাতির সমৃদ্ধি ও দেশের সমৃদ্ধির প্রতীক।

২০২১ সালে চীন অব্যাহতভাবে শহর ও গ্রামের নাগরিকদের মৌলিক চিকিত্সা বীমা ও বড় রোগের বীমা ব্যবস্থা একীকরণ করছে। জনগণের চিকিত্সার নিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। এখন দেশের মৌলিক চিকিত্সা বীমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ১৩৬ কোটি। অর্থাত্ দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ চিকিত্সা বীমার আওতায় এসেছে।

করোনাভাইরাসের রোগীর চিকিত্সায় কোনো খরচ লাগে না, সব ফি সরকার বহন করে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের টিকা এবং টিকাগ্রহণের ফিও বহন করে সরকার।

 

এবারে দেখি বয়স্কদের অবসর জীবন সম্বন্ধে প্রেসিডেন্ট সি কি কথা বলেছেন।

তিনি অবসরের পর সেবার ওপর অনেক গুরুত্ব দেন। দেশের বার্ধক্য কাজের উন্নয়ন এবং অবসর জীবনের নিশ্চয়তা ব্যবস্থা নির্মাণে ধারাবাহিক দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

গত অক্টোবর মাসে, চীনের চান্দ্রপঞ্জিকার ঐতিহ্যবাহী ছুং ইয়াং উত্সব অর্থাত্ বয়স্ক উত্সবের সময় তিনি দেশের সব বার্ধক্য-কবলিত লোকদের জন্য সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। তিনি বলেন, গোটা সমাজে বয়স্কদের সম্মান করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে, বয়স্কদের জন্য বিভিন্ন সুবিধাজনক নীতি ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, বয়স্কদের বৈধ স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, যাতে বয়স্করা উন্নয়নের  সুফল শেয়ার করতে পারেন, সুখময় বার্ধক্য জীবন কাটাতে পারেন।

 

অগাস্ট মাসে, প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে হ্য পেই প্রদেশের ছেং দ্য শহরের বিন হ্য কমিউনিটিতে যান, সেখানের অবসর সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। বৃদ্ধ স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, আমরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এখানে কাজ করতে চাই, আমরা চাই আমাদের অবসর জীবনও তাত্পর্যময় হোক। প্রেসিডেন্ট সি তাদের কাজের স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, আপনারা খুব ভালো বলেছেন, আপনারা অবসর জীবন নিশ্চিত করার পদ্ধতি অনুসন্ধানের সঙ্গে অবসর জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করার উপায়ও খুঁজে পেয়েছেন।

 

জনগণের যে বিষয়ে চাহিদা আছে, সেখানে নীতিগত ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়।

চলতি বছরের অক্টোবর মাসে পর্যন্ত, চীনে মৌলিক বার্ধক্য বীমায় অংশগ্রহণের জনসংখ্যা ১০২ কোটি, দেশের সামাজিক বীমার গণসেবা মঞ্চ স্থাপিত হয়েছে, দেশের সব জায়গায় এই বীমার সুবিধা উপভোগ করা যায়।

জনগণের জীবনের মান উন্নয়নের কোনো চূড়ান্ত নিয়ম নেই, শুধুই আছে একটি নতুন সূচনা।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এমন কথাই বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জনগণকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিশ্চয়তা, চিকিত্সা, অবসর জীবনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভালোভাবে কাজ করতে হবে। যাতে বিভিন্ন জাতির লোকজন আরও বেশি সুখী হয়।

প্রকৃতপক্ষে জনগণের কোনও কাজ ছোট নয়।