ডিসেম্বর ২৮: একশ্রেণির মার্কিন রাজনীতিবিদ পাগলের মতো মানবাধিকার ইস্যুতে চীনের পেছনে লেগে আছে। ‘উইগুরে জোরপূর্বক শ্রম প্রতিরোধ আইন’ প্রণয়ন থেকে শুরু করে ‘তিব্বতবিষয়ক বিশেষ সমন্বয়কারী’ নিয়োগ দেওয়া পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের অজুহাতে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেই যাচ্ছে। চীনের মানবাধিকার অধ্যয়ন সমিতি গতকাল (সোমবার) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারকে রাজনীতিকরণের প্রয়াস আন্তর্জাতিক মানবাধিকার উন্নয়নের পথে একটি বাধা; এর পরিণতি হবে মারাত্মক।
‘যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারকে রাজনীতিকরণ মানবাধিকারের ভিত্তির জন্য ক্ষতিকর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারকে রাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ‘মানবাধিকারের অস্ত্র’ ব্যবহার করতো। স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হবার পর যুক্তরাষ্ট্র এখন এ অস্ত্র ব্যবহার করছে ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থার দেশগুলোর বিরুদ্ধে। এ অস্ত্রের সাহায্য যুক্তরাষ্ট্র সেসব দেশে নিজের মূল্যবোধ চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করে আসছে।
বাস্তবতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, মানবাধিকার ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার মাত্র। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ জেমস পেক অনেক ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেছেন, মার্কিন সরকারের তথাকথিত ‘মানবাধিকার’ আর আসল মানবাধিকার এক নয়। মার্কিন সরকার মানবাধিকারের পতাকা ধরেছে কেবল নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য।
বস্তুত, মানবাধিকারকে রাজনীতিকরণের ফলে খোদ মানবাধিকার ধ্বংস হবে তা নয়, যুক্তরাষ্ট্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ও পড়ছে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের নামে অন্য দেশের ওপর যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে, ততই নিজের মানবাধিকার পরিস্থিতির দুর্বলতা উন্মোচিত হচ্ছে। বর্ণবাদ, বন্দুকের বিস্তার, আইনের অতিরিক্ত প্রয়োগ এবং ধনী-গরিবের বড় তফাত মার্কিন সমাজের আসল চিত্র। যেখানে মার্কিন রাজনীতিবিদরা নিজ দেশের মানবাধিকার সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না, সেখানে অন্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করার কী অধিকার তাদের থাকতে পারে?
দ্বিতীয়ত, মানবাধিকারের রাজনীতিকরণ যত বেশি হচ্ছে, মানুষ তত পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘মানবাধিকার’ হচ্ছে বিপর্যয়ের নামান্তর। আফগানিস্তান ও ইরাকে এ বিপর্যয় তারা দেখেছে। অত্যাচার, গুপ্তহত্যা ও বিদেশি শীর্ষনেতাদের ওপর নজরদারি হচ্ছে মার্কিন মানবাধিকারের স্বরূপ। নিজের আধিপত্য রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একে একে মানবাধিকার লংঘন করে এসেছে। এর ফলে অনেক দেশে নেমে এসেছে বিপর্যয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেসব দেশের জনগণের ওপর।
মার্কিন স্কলার সিউং হোয়ান চৌ এবং জেমস পাট্রিক গত ৩০ বছরে ১৪৪টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারভিত্তিক কূটনৈতিক তত্পরতার প্রায় সবকটি ব্যর্থ হয়েছে। মানবাধিকারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলে কেবল বিপর্যয় সৃষ্টি হয় বলেও তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৈশ্বিক মানবাধিকার চর্চায় প্রমাণিত হয়েছে, মানবাধিকারের রাজনীতিকরণ বিশ্ববাসীর শান্তি ও উন্নয়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৪৮তম সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের মানবাধিকার সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছে। মানবাধিকারের রাজনীতিকরণ প্রতিরোধ সত্যিকারের মানবাধিকারের সুষ্ঠু উন্নয়নের জন্য জরুরি বলেও তারা বিশ্বাস করেন। (স্বর্ণা/আলিম/ছাই)