জেচিয়াং প্রদেশের স্মার্ট উত্পাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘শিল্প মস্তিষ্ক ও ভবিষ্যত্ কারখানা
2021-12-27 15:32:51

নির্মাণ শিল্প জেচিয়াং প্রদেশের অর্থনৈতিক শক্তির অন্যতম ভিত্তি এবং এরই উপর ভর করে প্রদেশটির অর্থনীতি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রদেশটির শিল্পের ডিজিটাইজেশন আরো গতি পেয়েছে। ডিজিটাল উপাদানের সম্প্রসারণ, গুণগতমানের ভূমিকা বৃদ্ধি, এবং আরো সক্ষম উত্পাদন প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-গ্রুপের ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত হয়েছে। আর এসবে নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘শিল্প মস্তিষ্ক ও ভবিষ্যত্ কারখানা’।

 

বর্তমানে জেচিয়াং প্রদেশের শাওসিং শহরের সিন ছাং জেলার পু ইয়ৌ যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানির কারখানায় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির আওয়াজ অনেক বেশি শুনা যায়, কিন্তু সেখানে মানুষ অনেক কম। এটি কিন্তু ডিজিটাইজেশনেরই প্রতিফলন।

 

কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার হুয়াং ইয়োং লোং বলেন, অতীতে যে কাজ ৪০০ জনে করতে পারতো, এটি এখন ১১০ জনে করতে পারছে। প্রথম ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোম্পানির উত্পাদনে মাসিক বিদ্যুৎ বিল আড়াই লাখ ইউয়ান থেকে দুই লাখে নেমে এসেছে। মুনাফা ৯.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের গড় বেতন ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।


 

ডিজিটাল পদ্ধতির অন্যতম একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে‘শিল্প মস্তিষ্ক’। এটি শিল্প ইন্টারনেটের ভিত্তি এবং ডেটা সম্পদের উপাদান হিসেবে, শিল্প চেইন, সরবরাহ চেইন, অর্থ চেইন ও উদ্ভাবন চেইনকে একীভূত করে থাকে। এর মাধ্যমে এটি সরকার এবং বাজারের পক্ষগুলোর সমন্বয়ে উত্পাদন ও পণ্যভোগের তথ্য সংযুক্ত করে। প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন ও ব্যবস্থাপনার জন্য ডিজিটাল সক্ষমতা সরবরাহ করার পাশাপাশি শিল্পের পরিবেশগত নির্মাণের জন্য ডিজিটাল পরিষেবা এবং অর্থনৈতিক প্রশাসনের জন্য ডিজিটাল উপায় সরবরাহ করে এই শিল্প মস্তিষ্ক।

 

সিন ছাং জেলার অর্থনীতি ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যুরোর উপ-প্রধান চাও হানচুন বলেন, স্থানীয় ভারবহন অটোমেশন সরঞ্জামের প্রধান প্রতিষ্ঠানটি ভারবহন প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য তৈরী‘শিল্প মস্তিষ্ক’ এবং উপযোগী ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। সিন ছাং ভারবহন খাতে ২০ হাজারেরও বেশি সরঞ্জাম প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত করেছে। সরঞ্জামের সামগ্রিক হার ৪৮ থেকে ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। একই সময় জ্বালানী ব্যয়ের হার ১০ শতাংশ কমেছে। পরিষেবার সময় ৬০ মিনিট থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত কমেছে। এই খাতের সামগ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তি ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

 

শাও সিং শহরের শাং ইয়ু’তে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে ‘শিল্প মস্তিষ্ক’ সরবরাহ চেইন কাজে লাগিয়ে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় দর-কষাকষি এবং কেনাকাটার মাধ্যমে তাদের কাঁচামাল মূল্য নিয়ন্ত্রণ সমস্যা সমাধান করতে পারছে।

 

নিং বো শহরে রাসায়নিক ‘শিল্প মস্তিষ্ক’ব্যবহারের ফলে প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশের সংবাদ অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে।

 

‘শিল্প মস্তিষ্ক’ প্রতিষ্ঠানের শিল্প চেইন ও উদ্ভাবন চেইনকে শক্তিশালী করছে। চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে জেচিয়াং প্রদেশের বার্ষিক প্রধান অপারেটিং আয় দুই কোটিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের শিল্পজাত মূল্য সংযোজন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬.৬ শতাংশ বেশি হয়েছে, যা সারা দেশের চেয়ে ৪.৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের নতুন শিল্প পণ্যের উত্পাদন মূল্য ৩৫.৪ শতাংশ বেড়েছে, নতুন শিল্প পণ্যের আউটপুট মূল্যের হার ৩৯.৫ শতাংশ। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২.৬ শতাংশ বেশি।

 

প্রতিদিন গড়ে ১০.৫ লাখ ‘একক ক্রিস্টাল সেল’ উত্পাদন, এবং এআই পরীক্ষা ২শ’ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হয়। জেচিয়াং প্রদেশের প্রথম দফা ‘ভবিষ্যত্ কারখানা’ হেং তিয়ান তোং সি ৫জি ব্যবহার করে স্মার্ট কারখানায় রূপান্তরিত হয়েছে। ৫জি নেটওয়ার্ক সমস্ত উত্পাদন লাইনের সহস্রাধিক প্রান্ত সংযুক্ত করেছে। উত্পাদন, প্রশাসন ও পণ্য স্থানান্তর থেকে পরীক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবস্থাকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করেছে।

 

আগে ২০৮টি মোবাইল এজিভি রোবট দিনে ১০ বার করে অফলাইনে যেতো। বর্তমানে স্থিতিশীল ৫জি নেটওয়ার্ক এটি প্রত্যেক বার দু’মিনিট থেকে শূণ্যে নামিয়ে এনেছে। চায়না মোবাইল চিন হুয়া শাখা কোম্পানির হেং তিয়ান তোং ছি ৫জি+স্মার্ট কারখানার প্রকল্প ম্যানেজার থেং লে বলেন, ‘ভবিষ্যত কারখানা’ শুধু মূল্য হ্রাস এবং গুণগতমান বাড়াবে-তা নয়, বরং বন্টন ও ডিজাইন থেকে বিগ ডেটা বিশ্লেষণ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রশাসন কার্যকারিতাও উন্নীত করে। পাশাপাশি, অন্তর্নিহিত নিয়মকে সংক্ষেপিত করার মাধ্যমে আনয়ন ও পুনরাবৃত্তি করে সোলার শিল্পের জন্য ভবিষ্যতে স্মার্ট উত্পাদন উন্নততর হবার দিক চিহ্নিত করে।

 

২০২০ সালে জেচিয়াং প্রদেশ প্রথম দফার ১২টি ‘ভবিষ্যত কারখানা’ তৈরি করে, সবার আগে‘ভবিষ্যত্ কারখানা’ নির্মাণের পথ ও মানদণ্ড উত্থাপন ও অন্বেষণ করে। ২০২১ সালে প্রদেশটি পুনরায় ৩৩টি প্রতিষ্ঠান ‘ভবিষ্যত কারখানা’ পরীক্ষামূলকভাবে নির্মাণ করেছে।

 

২০১৩ সাল থেকে জেচিয়াং প্রদেশ‘মানুষের স্থানে যন্ত্র’ কর্মসূচি কার্যকর শুরু করেছে। বর্তমানে রোবটের সংখ্যা ১ লাখেরও বেশি। নির্ধারিত আকারের উপরে শিল্পে মাথাপিছু শ্রম উৎপাদনশীলতা মোট ৫১.২ শতাংশ উন্নীত হয়েছে।


২০১৮ সাল থেকে প্রদেশটির বুদ্ধিমান রূপান্তর ও উন্নয়ন কার্যকর করা শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রাদেশিক পর্যায়ের ডিজিটাল ওয়ার্কশপ ও স্মার্ট কারখানার সংখ্যা ২৬৩টি। ক্লাউড প্রতিষ্ঠানের মোট সংখ্যা ৪ লাখ ৫ হাজারেরও বেশি। গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ শিল্পে প্রতিনিধি-স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সরঞ্জাম সংখ্যাসূচক নিয়ন্ত্রণ হার ৬০.৭ শতাংশে এবং শিল্প সরঞ্জাম নেটওয়ার্কিং হার ৪২.৩ শতাংশে পৌঁছায়। শিল্প ডিজিটাইজেশন সূচকে সারা দেশে তারা প্রথম হয়।

 

নতুন নির্মাণ শিল্পের রূপ হিসেবে ‘শিল্প মস্তিষ্ক+ভবিষ্যত কারখানা’ এখনও পরিপক্ব নয়। একদিকে, বর্তমান গোপনীয়তা, মানদণ্ড ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন জায়গায় ডেটার উন্মুক্তকরণের মাত্রা এক নয়। অন্যদিকে, ভবিষ্যত কারখানা নির্মাণের মূল্য এখনও অনেক উঁচু, সংশ্লিষ্ট দক্ষ কর্মীও যথেষ্ট নয়।

 

‘শিল্প মস্তিষ্ক’ হচ্ছে সমর্থক, আর ‘ভবিষ্যত কারখানা’ পালন করছে নেতৃত্বের ভূমিকা। নির্মাণ শিল্প রূপের সংস্কার ত্বরান্বিত করে, উচ্চমানের, উচ্চ দক্ষতা, নিম্ন মূল্য ও সবুজায়নের চীনে উত্পাদনের নবজাতক বাস্তুতন্ত্র তৈরি ত্বরান্বিত করতে পারবে। চীনের ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমির শিক্ষাবিদ লিন চৌংছিন বলেন, ডিজিটাল সংস্কার শুধু বর্তমান নয়, বরং ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করে। নতুন দফা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত এবং শিল্প সংস্কার কাজে লাগিয়ে ‘শিল্প মস্তিষ্ক+ভবিষ্যত কারখানা’র নির্মাণ অব্যাহতভাবে সুসম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

 

(প্রেমা/এনাম)