প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৬ বছর ধরে বহুপক্ষীয় উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে আসছে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক
2021-12-27 11:35:12

ডিসেম্বর ২৭: বিশ্বে চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক চলতি বছর তার ষষ্ঠতম জন্মবার্ষিকী পালন করছে। গত ছয় বছরে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক বহুপক্ষবাদ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল এশিয়ার অবকাঠামো নির্মাণ ও যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক একীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের নিয়মকানুনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে আসছে এ ব্যাংক।

গত অক্টোবরে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের ষষ্ঠ বোর্ড মিটিংয়ে নাইজেরিয়া নতুন সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এ পর্যন্ত ব্যাংকের সদস্য ১০৪টিতে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ১১টি আফ্রিকান সদস্যদেশ রয়েছে। এ সম্পর্কে চীনের একাডেমি অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অর্থনৈতিক কূটনীতি ও নিরাপত্তা গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক চিয়াং ইউয়ে ছুন বলেন,

 ‘একটি আঞ্চলিক ব্যাংক হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের সদস্য শুধু এশিয়ার দেশ নয়, বরং ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা ও ওশেনিয়ার দেশও রয়েছে। এসব দেশে রয়েছে বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ। ব্যাংকের এতো দ্রুত উন্নয়ন ও বিস্তার উল্লেখযোগ্য।’


এতোদিন ধরে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ ও অঞ্চলের অবকাঠামো ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়নে কাজ করে আসছে ব্যাংকটি। চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকে মোট ১৪৭টি প্রকল্প গৃহীত হয়, যার মোট মূল্য ২৮৯৭ কোটি মার্কিন ডলার। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ৩১টি দেশের জনগণ উপকৃত হয়েছে।

মহামারীর মধ্যে জরুরি স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা মোকাবিলায়ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ১০০০ কোটি মার্কিন ডলারের পুনরুদ্ধার তবহিল প্রতিষ্ঠা করেছে ব্যাংক।  

চলতি বছর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য অর্থ সংগ্রহের ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক। ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট চিন লি ছুন বলেন,

 ‘২০৩০ সাল পর্যন্ত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকে গৃহীত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসংক্রান্ত খাতে অর্থসংগ্রহের পরিমাণ ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা ২০১৯ সালের প্রায় চার গুণ। আমরা অন্যান্য বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পাশাপাশি নির্দিষ্ট আইন-কাঠামো অনুসরণ করে যাবো, যাতে আমাদের বিনিয়োগ ও পরিচালনা ‘প্যারিস চুক্তি’-র আওতায় থাকে এবং সদস্যদেশগুলোর চাহিদা মেটানো পারে।’


চীনের ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ একাডেমির অর্থনৈতিক কূটনীতি ও নিরাপত্তা গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক চিয়াং ইউয়ে ছুন জানান, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক এতোদিন ধরে বহুপক্ষবাদ অনুসরণ করে আসছে এবং বিশ্বের সকল দেশর জন্য উচ্চমানের পরিষেবা দিয়ে আসছে। এর ফলে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের সদস্যও দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন,

 ‘এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক সমতার নীতি অনুসরণ করে আসছে। সদস্যদেশ বড় হোক বা ছোট, সবাই সমান। এটাই বহুপক্ষবাদের মৌলিক নিয়ম। তা ছাড়া, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক সবসময় উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ নিয়ম অনুসরণ করে আসছে। সদস্যদেশগুলো শুধু অধিকার ভোগ করে না, নিজ নিজ দায়িত্বও পালন করে। ব্যাংকটি সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত; যে-কোনো দেশ যে-কোনো সময় এতে যোগ দিতে আবেদন করতে পারে।’

এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট চিন লি ছুন বলেন,

 ‘আমরা এখন বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, এবং ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংকের সাথে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং আন্তঃআমেরিকান উন্নয়ন ব্যাংকের সাথেও সহযোগিতা চালাবো। ভবিষ্যতে বড় আকারের অবকাঠামো প্রকল্পে ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে কোনো বিশেষ সংস্থার ওপরে অর্থসংগ্রহের চাপ কমাতে আরো বেশি ব্যাংকের সাথে সহযোগিতা চালানো হবে। আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করবো।’ (স্বর্ণা/আলিম/ছাই)