এশিয়ার অবকাঠামো নির্মাণ ও মহামারি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এআইআইবি: পাক কর্মকর্তা
2021-12-26 18:40:47

ডিসেম্বর ২৬: এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) প্রতিষ্ঠার ছয় বছরে ব্যাংকটি দ্রুত সমৃদ্ধ হয়েছে। পাকিস্তান ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের অবকাঠামো নির্মাণ এবং মহামারি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই ব্যাংক। পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের চীনবিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব এবং ব্যাংকের বোর্ড সদস্য চৌধুরি আসলাম গত শুক্রবার সিএমজিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এসব কথা বলেছেন।

 

চৌধুরি আসলাম চারবছর ধরে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকে কাজ করছেন। তিনি পাকিস্তানের অবকাঠামো নির্মাণে ঋণদান, মহামারি প্রতিরোধে ঋণদানসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি ব্যাংকটির সমৃদ্ধি খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বলেন,

 

 

“আমি এ ব্যাংকে চার বছর ধরে কাজ করছি। ২০১৭ সালে ব্যাংকের বোর্ড সদস্য হয়েছি। গত দুবছর ধরে আমি ছয়টি নির্বাচনী অঞ্চলের বোর্ডের সদস্যের দায়িত্ব পালন করছি। এ ব্যাংকের একজন সদস্য হিসেবে আমি তার সমৃদ্ধির প্রত্যক্ষদর্শী। গত পাঁচ-ছয় বছরের অগ্রগতির দিকে  ফিরে তাকালে দেখা যায়, প্রথম বছর এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী পাঁচবছরে ব্যাংকটি এশিয়া ও আফ্রিকায় এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ৫৬টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এটি বিশাল সাফল্য। অন্য কোনো ব্যাংক এই ব্যাংকের মতো এত দ্রুত এত বেশি সমৃদ্ধ হতে পারেনি। ভবিষ্যতে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক আরও উন্নত হবে বলে আমি মনে করি”।

 

চৌধুরি আসলাম আরও জানান, অন্য ব্যাংক ব্যাপক পরিমাণে বিনিয়োগ খাতে ঋণ দিয়ে থাকে, তবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক অবকাঠামো নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করে। অবকাঠামোর স্থানীয় মানুষের জীবন-যাপনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,“অবকাঠামো ব্যবস্থা উন্নত হলে স্থানীয় মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়। এ ব্যাংক স্থানীয় বাসিন্দাদের সমর্থন দিয়ে আসছে। তাদের আরও সুষ্ঠু পরিবহন যোগাযোগ, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ প্রদান করে চলছে”।

 

চৌধুরি আসলাম বলেন, এ পর্যন্ত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক পাকিস্তানে ১৫১ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের ৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এম-৪ জাতীয় পর্যায়ের হাইএক্সপ্রেস ওয়ে, লাহোর পানি সরবরাহ ও দূষিত পানি মোকাবিলা প্রকল্প, করাচি দ্রুত পরিবহন প্রকল্প ইত্যাদি। প্রত্যেক প্রকল্পের দ্বারা পাকিস্তানিরা লাভবান হয়েছেন। তিনি বলেন,“পাকিস্তানের প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রথম হলো এম-৪ জাতীয় পর্যায়ের হাই-এক্সপ্রেস প্রকল্প। এ প্রকল্পের আর্থিক পরিমাণ ১০ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমানে প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়েছে। আমি এ হাই এক্সপ্রেসওয়েতে গিয়েছিলাম। বিশাল একটি প্রকল্প এটি। এ পথের মাধ্যমে স্থানীয় অঞ্চলগুলো সংযুক্ত হয়েছে। স্থানীয়দের করাচি ও ইসলামাবাদে যাতায়াত আরো সহজ হয়েছে। আরেকটি প্রকল্প হল তার্বেলা বাঁধ। এটি দূষণমুক্ত জ্বালানি প্রকল্প, যা পাকিস্তানে সুবজ জ্বালানি উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়ক এবং স্থানীয়দের আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এছাড়া, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক পানীয় জল ও দূষিত পানি মোকাবিলার প্রকল্পেও বিনিয়োগ করেছে। লাহোরে এবং করাচিতে এই প্রকল্প রয়েছে। তাই এটি দুটো শহরের অধিবাসীদের উপকৃত করেছে”।

 

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর গত বছর মহামারি সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য তহবিল স্থাপন করেছে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক। চৌধুরি আসলাম জানান, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক পাকিস্তানে মহামারি প্রতিরোধের লক্ষ্যে ৭৫ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সহায়তা দিয়েছে। তিনি বলেন,“মহামারির সময় জনসাধারণের প্রাণ বাঁচানোর জন্য পাকিস্তানকে অপরিকল্পিত ব্যয় করতে হয়েছে। তার আর্থিক ঘাটতি পূরণ করতে  এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক অন্য প্রকল্প থেকে তুলে নিয়ে জরুরিভাবে অর্থ প্রদান করেছে। মহামারি সংকট পুনরুদ্ধার তহবিলও  পাক সরকারকে মহামারি প্রতিরোধে আর্থিক অনুদান দিয়েছে, এবং জনসাধারণকে ভ্যাকসিন কিনে দিয়েছে”। (রুবি/এনাম/শিশির)