ডিসেম্বর ২৪: আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি বা আরসিইপি আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেইজিংয়ে বলেন, বর্তমানে দেশে নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং আসিয়ানের ১০টি দেশসহ মোট ১৫টি দেশ যৌথভাবে আরসিইপি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হিসাবে আরসিইপি’র মধ্যে রয়েছে পণ্য বাণিজ্য, পরিষেবা বাণিজ্য, বিনিয়োগ অ্যাক্সেস এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ম, যা ই-কমার্স, মেধা-সম্পদের অধিকার, প্রতিযোগিতা নীতিসহ নানা বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার পর এটি বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং বৃদ্ধির জন্য নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে।
খুব শিগগিরি কার্যকর হওয়া এই চুক্তি প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফোং বলেন, বর্তমানে চীনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন,
‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সময়মত ‘আরসিইপি’র উচ্চ-মানের বাস্তবায়নের নির্দেশিকা’ জারি করবে; আরো ভালোভাবে আরসিইপি’র নিয়ম ব্যবহার করে আঞ্চলিক সরকারকে ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করবে, বাজারের উন্মুক্তকরণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে শক্তিশালীভাবে এই অঞ্চলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেবে, সদস্যদের মধ্যে শিল্পচেইন ও সরবরাহ চেইনের গভীর সমন্বয় জোরদার করবে এবং পূর্ব এশীয় অঞ্চলে আরো উচ্চ মান ও গভীর পর্যায়ের আঞ্চলিক অর্থনীতির একত্রীকরণ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
জাপান বরাবরই আরসিইপি’র স্বাক্ষর এবং অনুমোদন এগিয়ে নিয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাপানের মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরসিইপি’র অনুমোদনের পদ্ধতি পাস হয় এবং এপ্রিল মাসে চুক্তি জাপান সংসদে তা গৃহীত হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন,
‘আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি কার্যকর হবে। অর্থনৈতিক মহলের কাছে এর প্রকৃত কার্যকরিতা উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন দেশের দায়িত্ব মেনে চলা অপরিহার্য। জাপান স্বাধীন ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং চীন বাণিজ্যিক পরিবেশ উন্নয়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। চীন বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে যে, আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি আগামী বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। সেদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হান সেউং সো চুক্তি কার্যকর হওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন।
তিনি বলেন,
‘এ চুক্তি কার্যকর হওয়ার অর্থ হল যে, আমরা যা আশা করতে পারি, তা হলো কেবলমাত্র শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে বাজার খোলার প্রভাব নয়, কিন্তু ডিজিটাল ক্ষেত্রে আঞ্চলিক প্রবিধান এবং বাণিজ্য বিধি প্রবর্তনের ফলে উল্লেখযোগ্য প্রভাবও রয়েছে। এর মাধ্যমে আরও শক্তিশালী একটি আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হবে, ফলে আঞ্চলিক ভ্যালু চেইনের স্থিতিশীলতা ও কার্যকরিতা বেগবান করা যাবে।
চলতি বছরের নভেম্বর মাসে চীন ও আসিয়ানের মধ্যে সংলাপ সম্পর্ক স্থাপনের ৩০তম বার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় চীন ও আসিয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে। চীন-আসিয়ান কেন্দ্রের মহাসচিব ছেন দ্য হাই বলন, আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার পর চীন ও আসিয়ানের সহযোগিতায় আরো বিশাল জায়গা তৈরি হবে।
তিনি বলেন,
‘কয়েক দিন পর আসিয়ানের উদ্যোগে আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে বলবত্ হবে। যা এই অঞ্চলে আরও বেশি দেশের শক্তি চাঙ্গা করবে, এই অঞ্চল দীর্ঘস্থায়ী সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন বেগবান করবে এবং চীন-আসিয়ানের সহযোগিতায় আরো বিশাল জায়গা সৃষ্টি করবে।’
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী বাণিজ্যিক অংশীদারের প্রতি চীনের বাণিজ্যিক মূল্য গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ১৯.৩ শতাংশ বেশি।
(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)