ডিসেম্বর ২৩: চীনের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি প্রচার ও বাস্তবায়ন-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ফোরাম গতকাল (বুধবার) কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নান-নিং শহরে উদ্বোধন করা হয়েছে।
ফোরামে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, চীন বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় অবদান রাখছে। মহামারী ঝুঁকির সামনে বিভিন্ন পক্ষের উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতার মতৈক্য সুসংহত করা এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণ ও বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এগিয়ে নেওয়া উচিত্।
অবাধ বাণিজ্য চুক্তি হলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এখন পর্যন্ত সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে ৩৫০টির বেশি চুক্তি করেছে। চীন ২৬টি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে ১৯টি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীনে স্বাক্ষরিত অবাধ বাণিজ্য চুক্তির সংখ্যা ৯টি এবং এতে রয়েছে আলাদা আলাদাভাবে ৮টি দেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ৮টি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি।
এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জোরদারকরণ কমিটির প্রধান কাও ইয়েন বলেন, চীন সরকার অবাধ বাণিজ্য এলাকা নির্মাণকাজের ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকে। স্বাক্ষরিত অবাধ বাণিজ্য চুক্তি শক্তিশালীভাবে সংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুবিধার মান বাড়াতে সক্ষম। তিনি বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির হার ধীর গতির হয়েছে। শিল্পচেইন এবং সরবরাহচেইন দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের প্রকৃত বহুপক্ষবাদ অনুসরণ করা, দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতা গভীরতর করা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উদারীকরণ ও সুবিধাকরণ বেগবান করা উচিত্।
কাও ইয়েন বলেন,
‘অবাধ বাণিজ্য চুক্তি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত এবং সেগুলো পেশাগত। আমাদের বিনিময় জোরদার করা এবং একে অপরের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণ করা উচিত্, যাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উচ্চ মানের উন্নয়নে আরো ভালোভাবে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।’
চলতি বছর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের যোগদানের ২০তম বার্ষিকী। আন্তর্জাতিক আর্থিক ফোরামের সহ-সভাপতি ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হান সেউং সো মনে করেন, চীনের সম্প্রসারিত বাজার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও বেশি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন,
‘সম্প্রতি সংরক্ষণবাদ ও বিশ্বায়নের বিরোধিতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এতে বিশ্ব বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, চীন অব্যাহতভাবে বাজার উন্মুক্তকরণের পথে চলবে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ করবে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি, অর্থ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ নতুন ক্ষেত্রে অর্থনীতির ব্যাপক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেবে।’
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-পরিচালক চাং সিয়াং ছেন স্বীকার করেন, অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশবান্ধবসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে চীন। সুষ্ঠু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক আর্থ-বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় চীনের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে এই সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
অবাধ বাণিজ্য চুক্তি হলো বহুপক্ষীয় নিয়মের ভিত্তি। সুষ্ঠু দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় যোগাযোগের চ্যানেল বৈশ্বিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার উন্নয়ন বেগবান করতে সক্ষম হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন,
‘কিছু বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় চুক্তিতে পৌঁছানো কঠিন। যেমন ই-কমার্স, সরকারি ক্রয়, প্রতিযোগিতার নীতি এবং ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত ঐকমত্য তৈরি করে। ব্যাপক ও প্রগতিশীল ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্ব চুক্তি বা সিপিটিপিপি অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চেয়েও ব্যাপক উন্মুক্তকরণ বাস্তবায়ন করে। আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় অবাধ বাণিজ্য চুক্তি সম্প্রসারণের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কিছু সমস্যাও ধাপে ধাপে সমাধান করা যাবে এবং নতুন বহুপক্ষীয় নিয়মও তৈরি হবে।
(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)