ডিসেম্বর ২৩: চলতি বছরের শুরু থেকে, চীন মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের অগ্রগতির মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে এসেছে। মহামারীর মধ্যেও, চলতি বছরের প্রথম এগারো মাসে চীনে ব্যবহৃত বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। এতে চীনা অর্থনীতির গতিময়তা ও প্রাণশক্তি অনুভব করা যায়।
দক্ষিণ চীনে আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি হ্যারি সাইদিন সম্প্রতি সিএনবিসি গ্লোবাল ইনফরমেশন ব্রডকাস্টিং-এর এক প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, গত বছর মার্কিন-চীন বাণিজ্য তুলনামূলকভাবে উচ্চ পর্যায়ে ছিল এবং চীনের বেশিরভাগ মার্কিন কোম্পানি ভালো মুনাফা করেছে।
দক্ষিণ চীনে আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। চেম্বার অফ কমার্সের ২৩০০টিরও বেশি সদস্য রয়েছে এবং সদস্য-কোম্পানিগুলো ইউএস-চীন মোট বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রায় ৪০ শতাংশের জন্য কৃতিত্ব বহন করে। চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি হ্যারি সাইয়াদিন প্রায় ৩০ বছর ধরে গুয়াংজুতে বসবাস ও কাজ করছেন। তিনি কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য চীনা সরকারের প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘চীন একমাত্র দেশ নয় যার অর্থনীতি মহামারী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। অথচ চীন সর্বদা বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের অগ্রভাগে রয়েছে। কোম্পানিগুলো যত দ্রুত কাজ ও উত্পাদন পুনরায় শুরু করায় চীন খুব ভাল পারফর্ম করেছে।’
চলতি বছরের শুরুর দিকে দক্ষিণ চীনে আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স কর্তৃক প্রকাশিত ‘২০২১ সালে দক্ষিণ চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর বিশেষ প্রতিবেদন’ অনুসারে, জরিপের অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ চলতি বছর চীনে পুনঃবিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে। এ সিদ্ধান্ত চীনের অর্থনীতির ওপর তাদের আস্থার বহিঃপ্রকাশ। হ্যারি বলেছেন, অনেক সদস্যকোম্পানি ইতিমধ্যেই আগামী কয়েক বছরে চীনে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার জন্য বাজেট প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, ‘মার্কিন কোম্পানিগুলো চীনে ভালো করছে। তাদের মুনাফা দিন দিন বাড়ছে। ৭১ শতাংশ সদস্য চলতি বছর পুনঃবিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে। আমি যতদূর জানি, আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের সদস্যরা দক্ষিণ চীনে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কাস্টমসের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃক প্রকাশিত আমদানি-রফতানির তথ্য অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার; আসিয়ান ও ইইউ-এর পরেই এর স্থান। আর চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে, চীন-মার্কিন বাণিজ্যের মোট মূল্য ছিল ৪.৪১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১.২ শতাংশ বেশি।’
হ্যারি সাইদিন বিশ্বাস করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনীতি অবিচ্ছেদ্য। চীনে বিনিয়োগকারী আমেরিকান কোম্পানিগুলোর শেকড় চীনা বাজারে গভীরভাবে প্রোথিত আছে। নিজেদের উন্নয়ন থেকে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি তারা চীনের সামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখছে। হ্যারি বলেছেন, গত ১১ বছরে চেম্বার অফ কমার্স চীনের অভাবী গোষ্ঠীগুলিকে সাহায্য করার জন্য চীনে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। তিনি বলেন,
‘আমরা সৌভাগ্যবান যে, চারটি গ্রামের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করেছি। আমরা গুয়াংজু মহিলা ও শিশু হাসপাতালের সাথেও সহযোগিতা করেছি অনাথ এবং দরিদ্র শিশুদের জন্য জরুরি অপারেশন প্রদানের জন্য; ২২৪ শিশু উপকৃত হয়েছে। চীন দারিদ্র্যদূরীকরণে ভাল কাজ করেছে এবং আমরা ইচ্ছুক চীনকে সহযোগিতা করতে। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
চলতি বছর চীন-মার্কিন ‘পিং পং কূটনীতি’-র ৫০তম বার্ষিকী। হ্যারি বলেছেন, বিগত ৫০ বছরে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে, এবং উভয় দেশ তাদের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা বয়ে এনেছে এবং এগিয়ে চলেছে। ভবিষ্যতে, চেম্বার অফ কমার্স দুই দেশের জনগণের বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য আরও সাংস্কৃতিক প্রকল্প চালু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
(ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)