২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজন করা হবে। ২০০৮ সালে বেইজিং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পর এটি হলো চীনে অনুষ্ঠেয় আরেকটি ক্রীড়া মহাসম্মিলনী।
চলতি বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট সি বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস এবং শীতকালীন প্যারালিম্পিকের প্রস্তুতিমূলক কাজের খোঁজ-খবর নেন। এতে শীতকালীন অলিম্পিক নিয়ে জনগণের উদ্দীপনা আবারও জেগে ওঠে।
শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের কথা উল্লেখ করলে বরফ ও তুষার-জনিত ক্রীড়ার কথা বলতেই হয়। আজকের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে তুষার ও বরফ-বিষয়ক কয়েকটি ক্ল্যাসিকাল চলচ্চিত্রের ওপর দৃষ্টি দেবো।
সবাই জানে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় গল্পের অভাব হয় না। সর্বশেষের মুহূর্তে খেলা উল্টে যায়। তাই ক্রীড়া বিষয়ক অধিকাংশ চলচ্চিত্র সত্যিকারের গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়।
১৯৯৩ সালে প্রদর্শিত ‘Cool Runnings’ মুভিতে সত্যিকার একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প তুলে ধরা হয়।
জ্যামাইকান কৃষ্ণাঙ্গ ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ক্রীড়াবিদ আরভিং ব্রিটজ একটি প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ার পর অন্য তিনজন কৃষ্ণাঙ্গের সঙ্গে সেদেশের প্রথমটা ববস্লেড দল প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর তারা চারজন ১৯৮৮ সালে ক্যালগারি শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে কানাডায় যান।
তারা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মাতৃভূমি থেকে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পরিবেশে গিয়ে হাজির হন। শারীরিক শক্তি, প্রযুক্তি ও জীবনযাত্রার অভ্যাসের অসুবিধাগুলো সহজেই কল্পনা করা যায়। একই সঙ্গে, তাদের স্বদেশিদের উপহাস এবং আন্তর্জাতিক দর্শকদের সন্দেহও সহ্য করতে হবে। তবে তাদের চারজনকে নিয়ে গঠিত এই বিশেষ দল ১৯৮৮ সালের শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে অন্য প্রতিযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং স্লেজ দৌড় প্রতিযোগিতায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে।
এই ছবির থিম খুবই অনুপ্রেরণামূলক, কিন্তু পুরো ছবির শৈলীই স্বস্তিদায়ক ও মজার। অনেক হাসির দৃশ্য আছে। দর্শকেরা হাসি ধরে রাখতে পারেন না।
২০০৪ সালে মুক্তি পায় হলিউডের চলচ্চিত্র ‘ Miracle’। ১৯৮০ সালে নিউ ইয়র্ক রাজ্যের লেক প্লাসিডে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকে আমেরিকান আইস হকি দল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ফাইনাল খেলার দৃশ্য তৈরি করা হয়।
তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নের দলটি ছিল নিঃসন্দেহে বিশ্ববিখ্যাত শক্তিশালী দল। আর মার্কিন দলটি বিভিন্ন জায়গার বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্যদের নিয়ে গঠিত অপেশাদার দল। বলা যায়, অলিম্পিক গেমসের জন্য অস্থায়ী একটি দল সামষ্টিক শক্তি এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে ছিল।
তবে চলচ্চিত্রে কোচের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের এই দলটি শক্তিশালী শত্রুর মুখোমুখি হয়। তারপর তারা একত্রিত হয়ে দারুণ একটি খেলা খেলে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের দলকে টেনে নামায়। আইস হকি দলের সেই ‘অলৌকিক ঘটনা’ এখনও মার্কিন জনগণ মনে রেখেছে।
২০২২ বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস ধীরে ধীরে কাছে চলে আসছে। সেই সঙ্গে চীনে বরফ ও তুষার-কেন্দ্রিক নানা শিল্পকর্মও দেখা যাচ্ছে।
আসলে কয়েক বছর আগে চীনে বেশ কয়েকটি চমৎকার বরফ এবং তুষার-থিমযুক্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে নির্মিত ‘আইস অ্যান্ড ফায়ার’ নামের চলচ্চিত্রটি চীনা স্পিড স্কেটার ইয়ে ছিওপো-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এতে দেখানো হয় যে, স্পিড স্কেটাররা দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি এবং অসাধারণ অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তাদের নিজেদের সীমা অতিক্রম করেছে, গুরুতর শারীরিক সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে, কঠোর পরিশ্রম করেছে এবং অবশেষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাতৃভূমির জন্য সম্মান ছিনিয়ে এনেছে।
২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘Heart of Ice’ মুভিটি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রথম ফিচার ফিল্ম, যা তৃণমূল পর্যায়ে কোচদের বাস্তব গল্পের উপাদান হিসাবে তৈরি হয়েছে। চলচ্চিত্রটি চীনের হেই লোং চিয়াং প্রদেশের বিখ্যাত শর্ট ট্র্যাক স্পিড স্কেটিং প্রশিক্ষক মোং ছিং ইউ’র সত্যিকারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। তিনি চীনের বিখ্যাত শর্ট ট্র্যাক স্পিড স্কেটার ইয়াং ইয়াং ও ওয়াং মোংসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ানকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। মুভিতে তৃণমূল পর্যায়ের ক্রীড়া প্রশিক্ষক চাও হোং ছি’র গল্প বলা হয়। তিনি কীভাবে ‘লিটল ব্রিকেটস’ নামে পরিচিত দরিদ্র শিশুদের একটি দলকে একত্রিত করে কঠিন এবং এমনকি নিষ্ঠুর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অবশেষে একটি জাতীয় বিখ্যাত স্পিড স্কেটিং দলে পরিণত করেন।
বিদেশি বা দেশীয় খেলাধুলা-ভিত্তিক চলচ্চিত্রের দিকে তাকালে বিষয় পর্যায়ে চলচ্চিত্রগুলো অলিম্পিকের আধ্যাত্মিক ভাব, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব, ইতিবাচক ও আশাবাদী জীবনের মনোভাব প্রকাশের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
চলচ্চিত্রের সাহায্যে বরফ ও তুষার ক্রীড়া সহজেই জনগণের কাছে চলে যায়। চমৎকার বরফ ও তুষার-সংক্রান্ত মুভি দর্শকের সঙ্গে এসব খেলার দূরত্ব কমিয়ে দেয়। অনেক দর্শক আশা করেন যে, তারা সিনেমার চরিত্রের মতো বরফ ও তুষারের মধ্যে ছুটবেন। এভাবে বরফ ও তুষারময় স্থান এবং বরফ ও তুষারের খেলায় অংশ নিতে লোকজনকে উত্সাহ দেয় চলচ্চিত্রগুলো।
গত ১৮ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট সি বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক গেমস এবং শীতকালীন প্যারালিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজের খোঁজ খবর নেন। তখন তিনি বলেন, ক্রীড়ার মাধ্যমে দেশকে শক্তিশালী করে তোলার ভিত্তি হলো জনগণের ক্রীড়া। বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক শীতকালীন গেমস আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের দেশের বরফ ও তুষার ক্রীড়া জনপ্রিয় করে তোলা যায়। ৩০ কোটি মানুষের মধ্যে বরফ ও তুষারের ক্রীড়াকে আরও ভালভাবে জনপ্রিয় করে তোলা এবং একটি ক্রীড়া খাতের শক্তির দেশ গঠন হলো আমাদের উদ্দেশ্য।
আপনি যদি মনে করেন যে, তুষার ও বরফের খেলা শুধুমাত্র উত্তরাঞ্চলেই হয়—তাহলে বেশ ভুল করবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, দেশে জোরালোভাবে বরফ ও তুষারের খেলা দক্ষিণাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত, সারা দেশে ৮০০টিরও বেশি স্কি রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে এবং ৫ কোটি মানুষ সরাসরি বরফ ও তুষারের খেলায় অংশগ্রহণ করেন। ২০১৯-২০২০ সালের শীতে সারা দেশে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ বরফ ও তুষারের খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। বরফ ও তুষার খেলা সাধারণ মানুষের জীবনে প্রবেশ করেছে এবং যা তরুণদের বিনোদনের অংশ। বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অনিবার্যভাবে বরফ ও তুষারের ঢেউ শুরু হবে। নিঃসন্দেহে বরফ ও তুষারের খেলা জনসাধারণের বিনোদনের দুর্দান্ত উপায় বলে আশা করা হচ্ছে।
(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)