আজকের টপিক: চীন ও ইউরোপের উচিৎ হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলা
2020-12-31 16:52:38

 

২০২০ সাল ছিলো একটি ব্যতিক্রমী বছর। কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে একটি বিশাল প্রভাব ফেলেছে। এ সময়ে চীন ও ইউরোপ একে অপরকে সমর্থন করে এবং সক্রিয়ভাবে মহামারী বিরোধী সহযোগিতা চালিয়েছে। মহামারী ঠেকাতে চীন-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেস বারবার ত্রাণ-সামগ্রী ও আমদানি-রফতানি সামগ্রী পরিবহণ করেছে। এই ট্রেন মহামারীর সবচেয়ে জটিল মুহুর্তে ‘পরিবহনের লাইফলাইন’ এবং পুনরায় উত্পাদনকাজ শুরুর জন্য ‘পরিবাহক বেল্ট’ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। তাই এ ট্রেনকে চীন ও ইউরোপের বাজারের জন্য ‘বাণিজ্য ও জীবিকার সেতু’ বলে অভিহিত করা হয়।

২০২০ সালে চীন ও ইইউর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৫তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে । এটি চীন-ইইউ সম্পর্কের জন্য এক দুর্দান্ত বছর। চীন-ইইউ সম্পর্ক মহামারীর প্রভাবকে অতিক্রম করে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। চীন-ইইউ শীর্ষনেতাদের বৈঠক চীন-ইইউ সম্পর্কের সুস্থ বিকাশের জন্য কৌশলগত দিক নির্দেশনা দিয়েছে। বাস্তব সহযোগিতা চীন-ইইউ সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। প্রথমবারের মতো চীন ইইউ’র বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। সবুজ ও ডিজিটাল নামে দুটি উচ্চ-স্তরের সংলাপ প্রতিষ্ঠারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দু’পক্ষ। চীন-ইইউ বিনিয়োগ চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনাদলের কাজ সন্তোষজনক গতিতে এগিয়ে চলছে। ২০২০ সালের ধারাবাহিক সহযোগিতার ফলাফল থেকে  এটি স্পষ্ট  যে , দুটি প্রধান শক্তি হিসেবে চীন ও ইইউ একে অপরকে সমর্থন করে।

 

২০২০ সাল আবারও প্রমাণ করেছে যে,  চীন ও ইউরোপ দুটি প্রধান শক্তি যা বিশ্বকে নিরাপদ এবং আরও সমৃদ্ধ করে তুলছে। চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি’র নির্বাচিত ২০২০ সালের শীর্ষ দশটি আন্তর্জাতিক খবরের মধ্যে অন্তত ছয়টি খবর চীন ও ইউরোপের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সঙ্গে জড়িত। মহামারীর প্রেক্ষাপটে বিশ্বের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চালানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে চীন ও ইইউ।

 

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীতে চীন ও ইইউ বহুপক্ষবাদ মেনে চলা ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করতে বিভিন্ন দেশের প্রতি যৌথভাবে আহ্বান জানিয়েছে  চীন ও ইইউ। মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে চীন ও ইইউ’র অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা আবারও নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে আস্থা যুগিয়েছে।

 

ইরানের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের প্রেক্ষাপটে ইরানকে  পারমাণবিক চুক্তি রক্ষা করতে সম্মত করাতে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছে চীন ও ইইউ।  যাতে এই চুক্তির সম্পূর্ণতা ও কার্যকর বাস্তবায়ন  নিশ্চিত করা যায়। এ বছর প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের পঞ্চম বার্ষিকী, চীন ও ইউরোপ উভয়ই জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। চীন নির্দিষ্ট সময়ের দুই বছর আগে ২০২০ সালের জলবায়ু কার্যক্রম লক্ষ্য বাস্তবায়িত করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণে শীর্ষে পৌঁছানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে চীন। ইইউ ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রীন হাউসের গ্যাস নিসরণের পরিমাণ অন্তত ৫৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে, পাশাপাশি ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনে চেষ্টাও  করবে ইইউ। ২০২০ সালে মানবজাতির মহাকাশ অনুসন্ধানে একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে। এই প্রক্রিয়ায় চীন ও ইউরোপের উপযুক্ত সহযোগিতাও রয়েছে।

 

২০২০ সালে বিভিন্ন পর্যায়ের আদান প্রদান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে চীন ও ইইউ বিশ্বের কাছে একটি স্পষ্ট সংকেত পাঠিয়েছে, তা হলো বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন, বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনার সুসম্পূর্ণ হওয়া, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা এবং বহুপক্ষবাদের রক্ষা ও বাস্তবায়ন করা।

(ওয়াং হাইমান/এনাম/ছাই)