ব্যবসাপাতি --- দ্বিতীয় পর্ব
2020-12-31 19:59:27

বিশ্বব্যবস্থা সচল রাখতে অর্থনীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করে সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে অর্থনীতি। অর্থনীতি হয়ে উঠছে রাজনীতির হাতিয়ার, কূটনীতির মূলমন্ত্র আর স্বকিয়তার রক্ষাকবচ। এই অর্থনীতির নানা সমাচার নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাপ্তাহিক আয়োজন ব্যবসাপাতি।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই জানাবো বাণিজ্য-অর্থনীতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবর।

. মোংলা ড্রেজিং প্রকল্প

 

নির্দিষ্ট সময়ের ২ সপ্তাহ আগেই শেষ হলো মংলা বন্দরের আউটার বার ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ। চীনা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন করপোরেশন ও হংকং রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করে। ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ১৫ ডিসেম্বর। তবে চলতি মাসের ৩ ডিসেম্বরই প্রকল্প শেষ হয়।  

বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত এ প্রকল্পে ব্যয় হয় ৬৭৮ কোটি ৯৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা।

এ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য আনা হয় ২টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হপার ড্রেজার এবং প্রতি ঘণ্টায় ৬ হাজার ৫শ’ কিউবিক মিটার পর্যন্ত খননে সক্ষম সিন হাই থেং নামের একটি কাটার সাকশন ড্রেজার।

প্রকল্প চলাকালীন মোকাবেলা করতে হয়েছে উপকূলে আছড়ে পড়া তিন তিনটি ঘুর্ণিঝড় ফণী, বুলবুল ও আম্পান। একই সঙ্গে জোয়ার-ভাটার নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে এ সময়ে। এর পরও ড্রেজিং সম্পন্ন করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান। 

২টি সেকশনে ভাগ করে পুরো প্রকল্পের কাজ করা হয়। সেকশন-১ হিরণ পয়েন্ট থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং সেকশন-২ এর অবস্থান হিরণ পয়েন্টের ঠিক পাশেই। এর মধ্যে উত্তর অংশের জোন-১ ও জোন-২ এর কাজ শেষ হয় চলতি বছরের মার্চ ও জুনে। পশ্চিম অংশের কাজ সম্পন্ন হয় জুলাইয়ের শেষ নাগাদ এবং সব শেষ পূর্ব অংশের কাজ শেষ হয় ডিসেম্বরের ৩ তারিখ।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দর জেটির ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার এলাকায় ৮.৫ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা। এর ফলে জোয়ারের সময় অন্তত ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে এ বন্দরে।

 

. চীন-ইইউ বিনিয়োগ সমঝোতা

দীর্ঘ ৭ বছরের আলোচনার পর বিনিয়োগ চুক্তিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে চীন-ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টে ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁ, ইউরোপীয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লিয়েন অনলাইন বৈঠকে এই চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন।

বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলছেন, বিশ্বের কাছে চীনকে আরও উন্মুক্ত করার দৃঢ়প্রত্যয় ও আশাবাদের প্রতিফলন ঘটাবে এই চুক্তি। দুই অঞ্চলের ব্যবসার পরিবেশ ও সহযোগিতা আরো জোরদার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে পারস্পরিক বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও বিশাল বাজার সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করেছে।

 

দুই অঞ্চলের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যগুলো ঘোচানো এবং নতুন করে সুযোগ গড়ে তোলার জন্য একসাথে কাজ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

এই চুক্তিকে চীনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের এবং দুই অঞ্চলের মূল্যবোধ-ভিত্তিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে বলে মন্তব্য করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন বলেছেন, এই চুক্তি চীনা বাজারে ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীদের প্রবেশাধিকারের অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা দুই অঞ্চলের মধ্যে ব্যবসার সম্প্রসারণ এবং কর্মসংস্থান তৈরি করতে ভূমিকা পালন করবে।

 

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। অন্যদিকে চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং তৃতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগ ক্ষেত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

 

এ চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০১৩ সালে শুরু হয় আলোচনা। দুই পক্ষের ৩৫ দফা আলোচনার পর চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হলো দুই অঞ্চল। একে চলতি বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

 

. বাংলাদেশের ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট হবে লাখ কোটি টাকার

টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে ছয় লাখ কোটি টাকার। করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি দ্রুত চাঙ্গা করতে নানা উদ্যোগ থাকবে বাজেটে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় বৈঠক সূত্রে এ খবর জানা গেছে। 

জানুয়ারি থেকেই শুরু হয়ে যাবে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত বাস্তবায়ন, করোনাসহ রোগ-বালাই মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানো, দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার মতো বিষয় প্রধান্য পাবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে।

রূপকল্প-২১ এর ধারাবাহিকতায় উন্নত দেশের স্বপ্ন নিয়ে প্রণিত রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা শুরু হবে আগামী অর্থবছর থেকে।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

 

## ৫ম বর্ষপূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এআইআইবি

‘সাশ্রয়ী দাম, উৎকৃষ্ট মান’ বিনিয়োগ দর্শন নিয়ে গঠিত এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক –এআইআইবি। এ অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নকে প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এ ব্যাংক। ব্যাংকের ১০ হাজার কোটি ডলার পরিশোধিত মূলধনের এক-তৃতীয়াংশই চীনের।

প্রতিষ্ঠার অর্ধযুগে ১০৩টি অঞ্চল ও অ-আঞ্চলিক সদস্য দেশে একশোরও বেশি প্রকল্পে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকটি। এরই মধ্যে এটি ২০১৯ সালে বিশ্বের সেরা ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।

চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত এআইআইবি’র অর্থায়ন করা অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা ১০৮টি। এর মধ্যে এ বছরই অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৪৫টি প্রকল্প। এখনো বিবেচনাধীন প্রকল্প আছে ৪৬টি। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে বিবেচনাধীন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে ১১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

নতুন বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের নানা চ্যালেঞ্জকে গুরুত্ব দিচ্ছে এআইআইবি। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিনিয়াগ ফ্রেমওয়ার্কের সম্মেলনে এআইআইবি’র প্রেসিডেন্ট ও বোর্ড অব চেয়ার চিন লিকুন প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, কয়লাভিত্তিক কোন প্রকল্প তো নয়ই বরং কয়লার সঙ্গে সম্পর্কিত কোন প্রকল্পেও অর্থায়ন করবে

না এআইআইবি।

নতুন বছরে সামাজিক লক্ষ্য আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে ব্যাংকটি। এরই মধ্যে করোনার টিকার বাণিজ্যিকিকরণ শুরু হয়ে গেছে। নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং করোনা মহামারি মোকাবেলা করতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোকে পর্যাপ্ত অর্থ খরচ করতে হবে। বিশেষ করে এআইআইবি এক্ষেত্রে অর্থায়নসহ সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে করোনা টিকার উদ্ভাবন ও উন্নয়নের ব্যাপারে কাজ করতেও উত্সাহিত করছে।


বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারি ঠেকাতে দুটি প্রকল্পসহ পানি ও স্যানিটেশন, সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রাকৃতিক গ্যাস অবকাঠামো ও দক্ষতা উন্নয়নে এরই মধ্যে ব্যাংকটি বিনিয়োগ করেছে ২ হাজার ৪৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন

মার্কিন ডলার।

 

পরিবহন, নগর উন্নয়ন, পানি ও জ্বালানীখাতে বিনিয়োগে বেশি উৎসাহী ব্যাংকটি। কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার কারণে যে নতুন ধরনের ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাকেই কাজে লাগাতে বেশি উৎসাহী এআইআইবি। যার ফলে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের নানা মাত্রিক সূচকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ

অবস্থানে এই ব্যাংকটি।


এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের চাহিদা এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই অঞ্চলের উদীয়মান দেশগুলোর অপর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্বের ফলে যে শূন্যতা তৈরি হয় তাই নতুন একটি উন্নয়নমূখী ব্যাংক ব্যবস্থা গঠনের উদ্যোগকে তরান্বিত করে। আর উদ্যোক্তা দেশ চীনকে বসায় অর্থনৈতিক রাজনীতির নেতৃত্বের আসনে।

 

## বিশেষ প্রতিবেদন##  বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এআইআইবি ভূমিকা

       যাত্রা শুরু প্রথম অধ্যায়েই এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে গাটছড়া বাঁধে বাংলাদেশ। অল্প পরিমাণে হলেও ব্যাংকটিতে রয়েছে বাংলাদেশের ৭০ কোটি ডলারের অংশদারিত্ব। গেল ৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য  দেশ হিসেবে ব্যাংকটি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ৩ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি। সামনের দিনগুলোতেও এখানে কতটা সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের জন্য । উত্তর খুঁজেছেন সহকর্মী আজহার লিমন।

৫৭ টি দেশ আর আঞ্চলিক উন্নয়ন ও গতিশীলতার অভিন্ন লক্ষ্য। ৫ বছর আগে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বা এআইআইবি’র যাত্রা শুরুর সাক্ষী বাংলাদেশও।

শুধু অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে নয় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আর অংশীদার হয়ে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের পথচলা সেই থেকেই।

এআইআইবি’র প্রথম ছাড় করা তহবিলের তালিকায়ও তাই বাংলাদেশ। যাত্রা শুরুর ৬ মাসের মাথায় ৪টি দেশের ৪টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে সংস্থাটি। এর মধ্যে এককভাবে কেবল বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে বিনিয়োগ করে এআইআইবি।

১৬ কোটি ডলারের বাংলাদেশের বিদ্যুৎ পরিসঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে নেয়া  ঐ প্রকল্পের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২৫ লাখ মানুষ। এরপর থেকেই এ তটের মানুষের জন্য চীনভিত্তিক এ ব্যাংকের বিনিয়োগ আছে সড়ক, স্যানিটেশন, প্রাকৃতিক গ্যাস কাঠামো ও দক্ষতা উন্নয়নের মত খাতে।


গেল বছরে থেকে করোনা মহামারিতে ভুগতে থাকা বাংলাদেশের উত্তরণের পথেও এআইআইবি’র ভূমিকা অনন্য। এরই মধ্যে মহামারি ঠেকাতে ২ প্রকল্পে ব্যাংকটি বিনিয়োগ করেছে প্রায় সাড়ে ৬শ মার্কিন ডলার। সবিমিলিয়ে গেল ৫ বছরে এদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাংকটির বিনিয়োগ ৩ হাজার ১৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।


সামনের দিনগুলোতেও এ সংস্থা থেকে অর্থ প্রাপ্তির কতোটা সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের? সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, এআইআইবির বিনিয়োগ আগ্রহ আর বাংলাদেশের দরকারের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া হতে পারে ভবিষতেও। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশার মত, এতে বিরাট সুযোগ সৃষ্টি

হলো দরকষাকষি।

ব্যবসাপাতি  --- দ্বিতীয় পর্ব_fororder_jingji

অধ্যাপক . সায়মা হক বিদিশা
 

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগির সমীক্ষা, কাঙ্খিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চলতি দশকে ১০ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ সহায়তা দরকার বাংলাদেশের।
এরই মধ্যে চীনভিত্তিক ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ার ও ব্যাংকটির প্রেসিডেন্টের ঘোষণা, কয়লাভিত্তিক কোন প্রকল্পে অর্থায়ন নয়। আবার জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও রয়েছে পরিবেশ বিষয়ক নানা অঙ্গীকার।

এই দুই বিশ্লেষক মনে করেন, এশিয়া অঞ্চলের দেশ হিসেবে বিনিয়োগ পেতে বাংলাদেশের নজর দেয়া উচিত টেকসই উন্নয়ন খাতগুলোর দিকে।

ব্যবসাপাতি  --- দ্বিতীয় পর্ব_fororder_jingji1

. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম


প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবাখাতে অর্থায়নের জন্য সংস্থাটি যে বিশেষ পরিকল্পনার কথা বলছে, তাতেও এ দেশের জন্য সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা।

 

## সাক্ষাত্কার## . মাহফুজ কবির

ব্যবসাপাতি  --- দ্বিতীয় পর্ব_fororder_jingji2

এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক –এআইআইবি’র নানা কার্যক্রম নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ –বিআইআইএসএস এর গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির।

 

## বিশেষ প্রতিবেদন##  ঢাকার ভাসমান শ্রমিক কেনা-বেচার হাট

একদল মানুষ জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছেন কাজের। ভবন ঢালাই থেকে শুরু করে আসবাবপত্র আনা, সব ধরনের কাজের মানুষ পাবেন এই ভিড়ে। কাজের ধরন অনুযায়ী মজুরি যেমন আলাদা তেমনি চাহিদা অনুযায়ী মিলবে শ্রমিক। রাজধানী ঢাকার বুকে ক্রমেই জমজমাট হয়ে উঠছে ভাসমান শ্রমিক কেনা-বেচার হাট। বিস্তারিত জানাচ্ছেন তানজিদ বসুনিয়া।

রাজধানীর নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ড। কোদাল বা কাস্তে নিয়ে জড়ো হয়েছেন এক দল মানুষ। কেউ বা এসেছেন ভবন ঢালাইয়ের টুকরি নিয়ে। দেখে মনে হতে পারে শ্রমিক সমাবেশ।

ভোরের আলো ফোটার আগেই এমন জটলা পেটের ক্ষুধার। পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতেই কেউ এসছেন কাঁধে গামছা বা মাথাল সাথে নিয়ে। সারাদিনের জন্য ভাড়ায় খাটতে অন্তত হাজারখানেকমানুষের এ সমাবেশ যেন শ্রমিকের মিলনমেলা।

তবে বাস্তবতা আরো কঠিন। কখনো কাজ জোটে, কখনো জোটেনা। ৫-২০ জনের দলে ভাগ হয়ে অপেক্ষায় থাকা প্রতিটি মানুষের চোখে মুখে খদ্দেরখোঁজার ছাপ, বিক্রি হওয়ার তৃষ্ণা। কাজ পেলেও কখনো পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। কখনো হতে হয়

প্রতারণার শিকার।

ভোর ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন ভাসমান এই শ্রমজীবী মানুষেরা। পুরুষের পাশাপাশি কাজ খুঁজতে আসেন নারী শ্রমিকরাও। এই ভিড়থেকেই পছন্দ অনুযায়ী শ্রমিক বাছাই করেন নিয়োগকর্তারা।

১ থেকে ৫০ জন পর্যন্ত শ্রমিকও নেন কেউ কেউ।দৈনিক ভিত্তিতে এসব শ্রমিকের

গড় মজুরি ধরা হয় গড়ে ৫০০ টাকা।

 

## চীনের দারিদ্র বিমোচনের গল্প#

দারিদ্র্য কোথায় নেই? এই যেমন চীনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ হেবেই। পাহাড়ঘেরা এ প্রদেশের বেশিরভাগ এলাকাই ছিলো দারিদ্র্যপীড়িত। দুঃখ কষ্ট ছিলো এ জনপদের বাসিন্দাদের নিত্য সঙ্গী। তবে সরকারের নেয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে গেছে এখানকার মানুষের ভাগ্য। চীনের দারিদ্র্য বিমোচনের খবর থাকছে সাজিদ রাজু’র প্রতিবেদনে।  
 

আমাদের গ্রামে ৩০ জনের বসবাস। খুব কষ্টে ছিলাম এতোদিন। শীত মৌসুমে দু’মুঠো খাবার জোগাড় করাই ছিলো কঠিন ব্যাপার। এতো ঠান্ডা যে, খাওয়ার সময় চপস্টিক ধরে রাখাই কষ্টকর হতো।

ফুপিং কাউন্টির পাহাড়ি গ্রাম চিয়াওছিং এর বাসিন্দা চু হাইহং। বলছিলেন পাহাড়ের কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার গল্প। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে নিরন্তর যুদ্ধের সাক্ষী এই তরুণ বলছিলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ এই অঞ্চলের আমূল বদলে যাওয়া দেখেছেন চোখের সামনে।

দু ইউমিং এক সময় কুল জাতীয় ফল জুজুবে চাষ করতেন। তার কষ্টের অবসান হয়েছে কৃষি প্রশিক্ষণ নেয়ার পর। জুজুবে ছেড়ে তিনি এখন মাশরুমের পাকা খামারি। দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিনিসহ পুরো গ্রামের লোকদের দেয়া হয় নানা বিষয়ের প্রশিক্ষণ। পাহাড়ের ভাজে ভাজে এখন চোখে পড়বে কৃষি খামারের সুদৃশ্য ছাউনি।

আমি জুজুবে চাষ করতাম। খারাপ আবহাওয়ায় আর বৃষ্টিতে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যেতো। ভালো দাম পেতামনা। তখন জীবন চালাতে খুব কষ্ট হয়েছে। সেসময় দেখেছি অন্যরা মাশরুম চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছে। আমিও তাই শুরু করলাম। গেল বছর একটা গ্রিন হাউজ ভাড়া নেই। বিভিন্ন কোম্পানির সাথে চুক্তি করায় বিক্রির ব্যাপারেও ভাবতে হয়নি। এখন বছরে ১ লাখ ইউয়ানের মতো আয় হয়।
দংচেংপু গ্রামের আরেক বাসিন্দা লিউ গুওছি বলছিলেন, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর পুরো পরিবার নিয়ে পার করেছেন কঠিন সময়। সে সময় কঠিন রোগে আক্রান্তদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পদক্ষেপ নেয় সরকার। লিউ গুওছি জানান, চিকিৎসায় ১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান খরচের প্রায় পুরোটাই বহন করে সরকার।

আমি আগে ৪০-৫০টি ভেড়া লালনপালন করতাম। তখন আমার আয় ছিলো ৩০ হাজার ইউয়ানের মতো। পরিবার চালাতে কষ্ট হতো। ২০১৫ সালে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরের বছর আমার ছেলেও অসুস্থ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে আামার মেয়ের হৃদরোগ ধরা পড়ে। এমন অবস্থায় আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়ি। আর তখন উপার্জনও বন্ধ হয়ে যায়।

শিক্ষাখাতেও লাগে পরিবর্তনের ছোঁয়া। পড়ালেখার পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি বেড়েছে মান। তাইতো পাহাড়ের কঠিন জীবনের অন্ধকার দূর করে আলো ছড়াচ্ছে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা। দুহাবো গ্রামের নারী ওয়াং লিহুয়া জানালেন, এখন আর ছেলের পড়ালেখা নিয়ে ভাবনা নেই।

ওয়াং লিহুয়া, দুহাবো গ্রামের বাসিন্দা:

“কয়েক বছরেই আমাদের দেশের অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষাখাতে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা আমাকে সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট করেছে। আমি যখন স্কুলে পড়েছি সে সময়ের শিক্ষার মান ছিলো সবচেয়ে খারাপ। এখন বাচ্চারা লেখাপড়ার অনেক ভালো পরিবেশ পাচ্ছে।

এক সময়ের জরাজীর্ণ সংসার আর ভাঙ্গা ঘরবাড়ির জায়গায় হয়েছে বহুতল ভবন। সাজানো গোছানো একেকটি অ্যাপার্টমেন্ট হয়ে উঠেছে স্বচ্ছলতার প্রতীক। জীবন হয়ে ওঠে নতুন ও বর্ণিল। এখানকার বাসিন্দাদের মত, এমন উদ্যোগ এখন পরিবর্তনের উজ্জ্বল উদাহরণ।

প্রিয় পাঠক, এর মধ্য দিয়ে আয়োজনের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আমরা।

তবে হ্যা!, যে যেখান থেকে আমাদের অনুষ্ঠান শুনছেন, আপনার পরামর্শ আমাদের সমৃদ্ধ করবে। আপনার যে কোন পরামর্শ পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। চীন আন্তর্জাতিক বেতার –সিআরআই বাংলা’র ফেসবুক পাতা ও ইউটিউব লিঙ্কে গিয়ে আপনার মন্তব্য করতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে আবারো কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সুস্থ্য থাকুন, শুভকামনা সবাইকে।

 

**বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সাজিদ রাজু, আজহার লিমন, তানজিদ বসুনিয়া