চীন-ইইউ পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তির আলোচনা সময়মতো শেষ হয়েছে
2020-12-31 10:49:24

চীন-ইইউ পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তির আলোচনা সময়মতো শেষ হয়েছে_fororder_zhongou

ডিসেম্বর ৩১: গতকাল (বুধবার) চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ে জার্মান প্রধানমন্ত্রী অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাকখোঁ, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেইন-এর সঙ্গে ভিডিও বৈঠক করেছেন। দু’পক্ষ যৌথভাবে সময়মতো চীন-ইইউ পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তি আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণা করেছে।

 

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এ চুক্তি আন্তর্জাতিক উচ্চ মানের আর্থ-বাণিজ্যিক মানদণ্ড মেনে চলে। যা ঐতিহ্যবাহী দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তির ধারণার চেয়েও সমৃদ্ধ। তা চীন ও ইইউ’র প্রতিষ্ঠান, তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানের জন্য পুঁজি বিনিয়োগের আরো বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে।

চীন ও ইইউ’র পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তির আলোচনা ২০১৩ সালে শুরু হয়। ৭ বছরে ৩৫ দফা আলোচনা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ম-বিধি বিভাগের প্রধান লি ইয়ুং শা জানান, চীন ও ইইউ এ আলোচনার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে সময়মতো এই আলোচনা সম্পন্ন করতে দু’পক্ষ করোনাভাইরাসের মহামারির সৃষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আলোচনা দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়েছে। চলতি বছর মোট ১০ দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন,

এই চুক্তি ঐতিহ্যবাহী দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তির চেয়েও বেশি সমৃদ্ধ। আলোচনার ফলাফলে বাজারে প্রবেশের প্রতিশ্রুতি, ন্যায়সঙ্গত প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিয়ম, টেকসই উন্নয়ন ও বিতর্ক সমাধানের মতো চারটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এতে প্রথমত, চীন ও ইইউ’র উচ্চ মানের এবং উভয় কল্যাণের বাজারে প্রবেশের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যা উভয়ের জন্য কার্যকর হবে। দ্বিতীয়ত, দু’পক্ষ উন্মুক্তকরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তত্ত্বাবধানের অধিকারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে। তৃতীয়ত, দু’পক্ষ দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি জোর দিয়ে বলেছে- পুঁজি বিনিয়োগকে টেকসই উন্নয়নের জন্য অনুকূল হতে হবে।

 

লি ইয়ুং শা জানান, চীন ও ইইউ অবাধ পুঁজি বিনিয়োগ, সুবিধা বাড়ানো, প্রতিদ্বন্দ্বিতার ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং  বাজারে প্রবেশ ও ন্যায্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিয়মানুযায়ী উচ্চ মানের ফলাফল অর্জনের চেষ্টা করেছে। এর ফলে চীন ও ইইউ’র প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এতে লাভবান হবে।

 

বাজার প্রবেশের ক্ষেত্রে, চীন প্রথমবারের মত পরিষেবা শিল্প এবং অ-পরিষেবা শিল্পসহ সব শিল্পে, নেতিবাচক তালিকা হ্রাসের মাধ্যমে উন্মুক্তকরণ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি ইইউ চীনের উচ্চ মানসম্মত পণ্যের বাজারে প্রবেশের নিশ্চয়তা দিয়েছে।

 

লি ইয়ুং শা বলেন, বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে দু’পক্ষের নেতিবাচক তালিকার পাশাপাশি অন্য বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিছু নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা চালু হলে তা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনায় গুরুতর প্রভাব ফেলে। তাই চীন ও ইইউ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, বেশিরভাগ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে না।

 

লি আরো বলেন, এই চুক্তি আইনানুগ বাণিজ্যিক পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। চুক্তিতে দু’পক্ষ রাষ্ট্রয়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান, ভর্তুকির স্বচ্ছতা, প্রযুক্তি হস্তান্তর, মানদণ্ড প্রণয়ন, প্রশাসনিক আইন প্রয়োগ, আর্থিক তত্ত্বাবধানসহ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে।

 

এ ছাড়া পুঁজি বিনিয়োগ সুবিধাজনক করা এবং জোরদার করার জন্য চুক্তিতে পুঁজি বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা স্থানান্তরের বিধান রাখা হয়েছে।

বর্তমানে চীন হল ইইউ’র বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। অন্যদিকে, ইইউ হল চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং তৃতীয় বৃহত্তম পুঁজি বিনিয়োগের স্থান। এ চুক্তির আলোচনা সম্পর্কে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং জানান, চীন এ সুযোগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’পক্ষের বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা বাড়াতে চায়; বিশেষ করে উত্পাদন শিল্প, পরিষেবা শিল্প এবং সবুজ শিল্পসহ বিভিন্ন বিষয় জোরদার করতে চায়। যাতে  দ্বিপক্ষীয় আর্থিক সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়।

 

জানা গেছে, পরবর্তীতে দু’পক্ষ দ্রুত বৈধ কর যাচাই এবং অনুবাদসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত কাজ শুরু করবে, যাতে শিগগিরি চুক্তি স্বাক্ষর করা যায়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দু’পক্ষ তা অনুমোদন দেবে।

(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)