ডিসেম্বর ৩০: ২০২০ সাল বিদায়ের সময় করোনাভাইরাস মহামারি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। গত ২৬ ডিসেম্বর ভোরে হুপেই প্রদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তৈরি প্রতিরোধক সামগ্রী, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও ইলেক্ট্রনিক পণ্যবাহী একটি ট্রেন উহান থেকে জার্মানির দুইসবার্গের দিকে রওনা হয়। এটি হল চীন-ইউরোপ রুটে এ বছরের ১০০ নং নিয়মিত ট্রেন।
এই শহরটি করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ৭৬দিন ধরে অবরুদ্ধ ছিল। এখন মহামারি দূর করে শহরটি বিশ্বকে সহায়তা করা শুরু করেছে। উহানের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া এ বছর চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অন্যতম উদাহরণ।
বছরের শুরুতে চীনে মহামারির অবস্থা সবচেয়ে গুরুতর ছিল, অনেক অর্থনৈতিক কার্যক্রম অচলাবস্থায় পড়ে। তবে, চীন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, মহামারি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মার্চ মাস থেকে চীন ফের ‘বিশ্বের কারখানা’ হিসেবে কাজ শুরু করেছে।
চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়নকারী একমাত্র দেশ হিসেবে, চীনের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। এ বছরের প্রথম থেকে তৃতীয় কোয়ার্টারে চীনের জিডিপি আগের কোয়ার্টারের তুলনায় যথাক্রমে ৬.৮ শতাংশ কম এবং ৩.২ শতাংশ ও ৪.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ব্যাংক ও শেয়ারসহ পুঁজি বিনিয়োগ ছাড়া চীন ৮৯৯.৩৮ বিলিয়ন ইউয়ান বিদেশি পুঁজি ব্যবহার করেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৩ শতাংশ বেশি। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, চীন বৈদেশিক পুঁজি আকর্ষণে সক্ষম।
নভেম্বরে চীনের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৬৮.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১.১ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালের মার্চ মাসের পর রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধির নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এটি বিশ্বের ভোগ্য পণ্যের সরবরাহ চেইন এবং শিল্প চেইনের স্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে।
২১ ডিসেম্বর চীনের অভ্যন্তরীণ পণ্য সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৮০০ বিলিয়ন পার্সেল। এর মাধ্যমে চীনের ভোগ পুনরুদ্ধার, কৃষকের দারিদ্র্যমুক্ত হওয়া এবং আয় বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় ভোক্তাদের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।
বিশ্ব ব্যাংক মনে করছে, ২০২০ সালে চীনা অর্থনীতি ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২১ সালে ৭.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতি বিরাট অনির্দিষ্টতার মুখে পড়েছে, একতরফাবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চীনের উন্নয়নে আশাবাদী। এর কারণ হল-
এক, চীন অব্যাহতভাবে বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য বাজার উন্মুক্ত করেছে। চীন সময়মতো তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা আয়োজন করেছে। মহামারির মধ্যেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এতে অংশগ্রহণ করেছে। মেলার আয়তন প্রায় ৩০ হাজার বর্গমিটার বেড়েছে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, চীনের ভোক্তা বাজার বিশ্বের জন্য বিরাট সুযোগ।
দুই, চীন স্থিতিশীল, স্বচ্ছ ও অনুমানযোগ্য পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। চীন নতুন ‘বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ আইন’ কার্যকর করেছে, দেশ ও বিদেশের প্রতিষ্ঠানকে সমান মর্যাদা দিয়েছে।
তিন, চীন টেকসই বহুপক্ষীয় ও যৌথ কল্যাণকর সহযোগিতা জোরদার করছে। নভেম্বর মাসে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, আসিয়ান এবং অস্ট্রেলিয়াসহ ১৫টি দেশ আরসিইপি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা, অর্থনীতি ও বাণিজ্যের পরিমাণ বিশ্বের ৩০ শতাংশ। অর্থাত্, বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ অর্থনৈতিক গোষ্ঠী একটি বড় বাজার তৈরি করেছে।
এ ছাড়া চীন ও ইইউ পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তির আলোচনা জোরদার করছে। এই পর্যন্ত ৩৫ দফা আলোচনা হয়েছে। চলতি বছর ১০ দফা আলোচনায় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে।
প্রকৃতপক্ষে ১৪০ কোটি মানুষ এবং ৪০ কোটি মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর চীন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সুপ্তশক্তির বাজার। আগামী দশ বছরে চীনের আমদানি পণ্যের অর্থমূল্য ২২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক প্রধান ক্রিস্টিনা লাগার্দে বলেছেন, চীন হল বিশ্বের সেতু, সমৃদ্ধির সেতু এবং ভবিষ্যতের সেতু।
বিশ্ব করোনাভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধ করবে এবং চীনের দক্ষতা ও উন্মুক্তকরণ চেতনার আলোকে ওই ‘তিনটি সেতু’ আরও মজবুত হবে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)