ইসরাইলের প্রকাশক রবি
2020-12-29 10:53:01

‘চায়না বুক স্পেশাল কন্ট্রিবিউশন অ্যাওয়ার্ড’ হলো চীনা প্রকাশনা শিল্পের জন্য সর্বোচ্চ বিদেশি পুরষ্কার। এটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য, যেসব বিদেশি অনুবাদক, লেখক ও প্রকাশক বিশ্বের কাছে চীনের পরিচয় তুলে ধরেছেন, চীনা বই অনুবাদ ও প্রকাশ করেছেন এবং চীন ও বিদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন- তাদেরকে সম্মানিত করা। সম্প্রতি, ইসরাইলের প্রকাশক রবি ‘১৪তম চায়না বুক বিশেষ কন্ট্রিবিউশন পুরষ্কার’ জিতেছেন। এই সম্মান অর্জনকারী দ্বিতীয় ইসরায়েলি ব্যক্তি তিনি।

রবির একটি বড় শখ রয়েছে। শুধু প্রকাশক হিসাবেই নয়, কবি, অনুবাদক, ফটোগ্রাফার ও চলচ্চিত্র নির্মাতাও হতে চান তিনি। ২০০৯ সালে তিনি নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তোলেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ১০টিরও বেশি চীনা বই অনুবাদ ও প্রকাশ করেছেন। এ অ্যাওয়ার্ড অর্জনের কথা বলতে গিয়ে রবি বলেন যে, তিনি খুব আনন্দিত ও অবাক হয়েছেন। প্রথমত, তিনি এই পুরস্কারটি জয়ের কথা বিশ্বাস করতে পারেছেন না। তিনি বলেন,

 

‘যখন প্রথম আমাকে পুরষ্কারের কথা জানিয়ে ইমেইল করা হয়- তখন আমি সত্যি খুব অবাক হয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে- এটা সত্য নাকি মিথ্যা! কারণ, চীনের কেউ আমাকে চেনে না। এরপর আমি ইসরাইলে চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলরের কাছ থেকে ফোন কল পাই। তিনি আমাকে বলেন যে, তারা আমার নাম সুপারিশ করেছেন। আমি খুব গর্বিত বোধ করি। কারণ, এটি প্রমাণ করে যে চীন নিয়ে আমার কাজ চীনারা দেখেছিল। এই পুরষ্কারটি আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি আশা করি, এই পুরষ্কারের মাধ্যমে আরও আলোকিত হওয়া যাবে এবং চীন ও ইসরাইলকে আরও কাছাকাছি আনা যাবে। আমিই হতে পারি সেই মানুষ- যে ইসরাইলে চীনের গল্প তুলে ধরতে পারি এবং ইসরাইলিরা চীনকে আরও ভালভাবে জানাতে পারবেন।’

 

২০১৬ সালে, রবি ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের অধীনে ১১টি বই হিব্রু ভাষায় অনুবাদ করেন। এজন্য তিনি চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করেন।

ইসরাইলে ‘দ্য রোড টু চায়না’ এবং ‘চায়না চয়েস’সহ নানা বই প্রকাশিত হয় এবং তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বইগুলো বিক্রিও হয়।

 

২০১৯ সালে, রবি চীনের তিনটি প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তিনি মনে করেন, চীনকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে বিদেশিদের লেখা বই নয়, বরং চীনা মানুষের লেখা বই পড়তে হবে। তিনি বলেন,

‘যদি কেউ আসল চীন সম্পর্কে জানতে চায়, তবে তার উচিত এই বইগুলি পড়া। এসব বইয়ের লেখক প্রকৃত চীনের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই, কোনও দেশ বোঝার এটিই সর্বোত্তম ও সম্ভবত শ্রেষ্ঠ উপায়। এই দেশের মানুষদের লেখা এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে রচিত বইগুলো পড়া উচিত। এই বইগুলো থেকে  আমি চীন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি, যা এর আগে কখনও জানতাম না এবং সেসব তথ্য আমার কাছে খুব আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছে। আমি আশা করি, আরও চীনা বই হিব্রু ভাষায় অনুবাদ করা হবে এবং ইসরাইলে তা প্রকাশিত হবে। আমার লক্ষ্য ইসরাইল ও চীনের মধ্যে দূরত্ব কমানো এবং প্রত্যেকের জন্য সাধারণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা। আমি মনে করি, সংস্কৃতি মানুষকে সংযুক্ত করার শ্রেষ্ঠ সেতু। আপনি যদি কোনও দেশ বা জাতির সংস্কৃতি বুঝতে না পারেন, তবে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা আপনার জন্য অনেক কঠিন হবে।’

 

যেসব চীনা বই প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রকাশিত হতে চলেছে সে সম্পর্কে কথা বলার সময় রবি বলেন যে, প্রতিটি বই তার নিজের সন্তানের মতো এবং সে প্রতিটি বইই খুব পছন্দ করে।

আমি প্রতিটি বই খুব পছন্দ করি। কিছু বই চীনের অর্থনীতি প্রবর্তন করে, কিছু বই চীনের ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রবর্তন করে এবং কিছু বই চীনা কৃষকদের সমসাময়িক আধুনিক কৃষির অবস্থা তুলে ধরেছে- যা অনেক আকর্ষণীয়। আমি যখন ছেংদুতে ছিলাম তখন আমি চীনের সমৃদ্ধি দেখেছিলাম।’

 

রবি নিজেও একজন লেখক। নিজে কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি তাঁর মেয়ের সঙ্গে দুটি বই রচনা করেছিলেন যা চীনে প্রকাশিত হয়েছে। চীনের সঙ্গে ভবিষ্যত সহযোগিতার কথা বলার সময় রবি বলেন যে, চীন নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন আছে।

 

উদাহরণস্বরূপ, একজন খাদ্যপ্রেমী যিনি রান্না করতে পছন্দ করেন, তিনি চীনা কবিদের সঙ্গে খাবার সম্পর্কিত কবিতা তৈরি করার আশা করেন এবং জেরুজালেমে আরও একটি চীনা গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি। তিনি বলেন,

‘যদি অন্য প্রকাশক আমার বইটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করেন তবে আমি খুব খুশি হব; যদি জেরুজালেমে চীনা প্রকাশকদের সম্মেলন এবং ইসরাইলের প্রকাশকদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন, তবে উভয় পক্ষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার করতে সম্মেলনে যোগ দিতে আমাদের দু'দেশের কবিদের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। আমিও এতে খুব খুশি হব; আমি সবসময় চলচ্চিত্রের কথাও ভাবি। এ বিষয়টি দুর্দান্ত লাগবে যদি একজন চীনা নির্মাতা এবং আমি চীন-ইসরাইল সহ-প্রযোজনার চলচ্চিত্রের সহ-প্রযোজনা করতে পারি।’